ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩০ নবেম্বর রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্রের ঢালাই কাজ উদ্বোধন করবেন

প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ঈশ্বরদীতে উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ঈশ্বরদীতে উৎসবের আমেজ

তৌহিদ আক্তার পান্না, ঈশ্বরদী ॥ সততায় বিশ্বের তৃতীয়স্থান অধিকারী নেতা এবং বিশ্বের ঐতিহাসিক ভাষণদাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর গর্বিত কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর সর্বত্র উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ নবেম্বর) সকাল সাড়ে দশটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের ৩২তম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল পর্বের প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজের উদ্বোধন করবেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় ঈশ্বরদীসহ দেশবাসী যখন মহা পাওয়াকে কেন্দ্র করে আনন্দের জোয়ারে ভেসে চলেছে, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুর অন্যতম পরিকল্পনা ও ঈশ্বরদীসহ পাবনা জেলাবাসীর পঞ্চান্ন বছরের লালিত স্বপ্ন পূরণ প্রকল্পের উদ্বোধন হওয়া আরও একটি বিস্ময়কর ইতিহাসের সৃষ্টি। এমনই মাহেন্দ্রক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর আগমনীবার্তা ঈশ্বরদীবাসীর মনে নবজাগরণের সৃষ্টি করেছে। তাই উৎসবের আমেজে ডুবে যাওয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা উল্লসিত ঈশ্বরদীবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ব্যাপকভাবে অভ্যর্থনা জানাতে জোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। সোমবার সকালে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপির সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ অফিসে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলীয় শীর্ষস্থানীয় নেতারা অংশ নেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান সফল করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়াও ঢাকায় অবস্থানকারী ঈশ্বরদী এলাকার অন্য নেতারাও গত কয়েকদিন থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানকে সফল করতে গণসংযোগসহ নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীর ও নিজেদের ছবি সংবলিত ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও বিভিন্ন পত্রিকায় অভিনন্দন বিজ্ঞাপন দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন। নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী বিমানবন্দর থেকে ঈশ্বরদীর ‘মরণ ফাঁদ বলে পরিচিত রেল গেট’ আলহাজ মোড় বিজয়স্তম্ভ হয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল গেট পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে অর্ধশত সুসজ্জিত তোরণ নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পথে। বিভিন্ন সূত্রমতে, দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটার সড়কের দু’ধারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর নানাভাবে সুসজ্জিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাবেন। তারা প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর পাশাপাশি ঈশ্বরদীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রধান দাবি ‘ঈশ্বরদীকে জেলা ঘোষণার’ দাবি করবেন। তাদের মতে, ‘যে নেত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে এবং সততায় বিশ্বের তৃতীয়স্থান অধিকার করতে পারেন’ কেবল সেই নেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেই ঈশ্বরদীকে জেলা ঘোষণা করা সম্ভব। একই সঙ্গে ভূমিমন্ত্রীর মাধ্যমে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনকে রিমডেলিংয়ে উন্নীতকরণ, রেল গেটে ফ্লাইওভার নির্মাণ, পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় অফিসকে সম্প্রসারণকরণ, বিমানবন্দর চালু, পাকশীতে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, ঈশ্বরদী হাসপাতালকে ৫শ’ শয্যায় উন্নীতকরণ, একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, পেপার মিল চালুকরণ, স্টেডিয়াম নির্মাণ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও মহিলা কলেজকে সরকারীকরণের দাবি করা হবে। পাকশী ও লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়ন এলাকার বিশাল জমিতে পরমাণু প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। দু’ এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান আনসুর রহমান শরীফ ও এনামুল হক বিশ্বাস জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে লক্ষিকুন্ডা ও পাকশীসহ নিকটস্থ এলাকার মানুষ খুশির জোয়ারে ভাসছেন। তারা বলেন, যেহেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হবে প্রকল্পের মধ্যে এবং আয়োজন করেছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি। সেহেতু অপেক্ষামাণ সাধারণ মানুষের সেখানে প্রবেশ ও প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার কোন সুযোগ থাকবে না। সে কারণে সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য পাকশী রেলওয়ে আমতলা ফুটবল মাঠে ও নতুন রূপপুর স্কুলমাঠে তিনটি বিশালাকৃতির প্রজেক্টর এবং সাড়ে চার হাজার চেয়ার দিয়ে পৃথক দু’টি প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। এসব স্থান থেকে তারা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনবেন ও দেখবেন। ইতোমধ্যে এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রধানমন্ত্রীর আগমনী বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। এর মধ্যে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে আসবে। দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে পরের বছর ২০২৩ সালে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের আবাসনসহ সকল প্রকার অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ ঈশ্বরদীর রূপপুর পরমাণু প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৯১ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। শুধু সুদ বাবদ রাশিয়াকে ফেরত দিতে হবে ৬৯ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। আগামী বৃহস্পতিবার প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রতিনিধি এবং রোসাটমের পরিচালক আলেক্স জান্ডার নিখাচেভ উপস্থিত থাকবেন।
×