ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া ইমসারেক্স-২০১৭ উদ্বোধন

সামুদ্রিক সন্ত্রাস রোধে একযোগে কাজ করতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

সামুদ্রিক সন্ত্রাস রোধে একযোগে কাজ করতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বঙ্গোপসাগরে দেশে এই প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২১ দেশের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া ইমসারেক্স-২০১৭। যা আইওএনএস মাল্টিলেটারাল মেরিটাইম সার্চ এ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ নামে অভিহিত। সোমবার দুপুরে সৈকত নগরী কক্সবাজারের ইনানী বিচসংলগ্ন হোটেল রয়েল টিউলিপে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে এই কর্মসূচীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, সাগরের সম্পদ উত্তোলন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের অফুরান সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র খাতের উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, শুধু একটি রাষ্ট্রের একার পক্ষে সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সুনামি ও সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নৌদুর্ঘটনা এবং এর পাশাপাশি সামুদ্রিক সন্ত্রাস রোধে সকলকে একযোগে অংশগ্রহণ করতে হবে। ব্লু ইকোনোমির গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে মেরিটাইম ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অংশ নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন আমরা সকলে সম্প্রতি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন রয়েছি। সাগরের বিভিন্ন জাতীয় সম্পদ উত্তোলন ও এর বাণিজ্যিক দিকসমূহ নিয়ে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। তিনি বলেন, সাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই মেরিটাইম ইকোনমির উন্নতির ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ইতোমধ্যে আস্থার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সরকারের ব্লু ইকোনোমি এজেন্ডা বাস্তবায়নে এ নৌবাহিনী সাগরে অতন্দ্র ও সার্বক্ষণিকভাবে অভিভাবকের মতো কাজ করছে। আইওএনএসের (ইন্ডিয়ান ওসান নেভাল সিম্পোজিয়াম) ভুঁয়সী প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি মত ব্যক্ত করেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মতপার্থক্য দূর করতে মতামতের স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত আদান-প্রদানই একমাত্র পথ। ভৌগোলিক কারণে স্থলভাগের সীমান্ত প্রতিটি দেশকে আলাদা করে রেখেছে। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন রয়েছে এবং সেই বন্ধন একসঙ্গে রাখতে হবে। এই আইওএনএস শুধু ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নয় বরং এশিয়া প্যাসেফিক ও সংলগ্ন অঞ্চলসমূহের আশার প্রতীক বলেও মত ব্যক্ত করেন। এর আগে দুপুর ১২টা নাগাদ হোটেল রয়েল টিউলিপে এসে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ। পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন নৌবাহিনীপ্রধান ও আইওএনএসের বর্তমান চেয়ারম্যান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং এরপরে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা দেশ ভারতের নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল সুনীল লাম্বা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কমান্ডার বিএন ফ্লিট রিয়ার এডমিরাল এম আশরাফুল হক, ইমসারেক্সের বিভিন্ন বিষয়ে তুলে ধরে বক্তব্য দেন। রাষ্ট্রপতি বক্তব্যের আগে আইওএনএস রচনা প্রতিযোগিতা-২০১৬ এর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি। প্রথম পর্যায়ে এ অনুষ্ঠানে আইওএনএসের সদস্য দেশসমূহের নৌবাহিনীপ্রধান ও অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মোঃ শফিউল হক ও বিমানবাহিনীপ্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার, এমপি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সামরিক ও বেসামরিক পদস্থ কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। প্রথম পর্যায়ে এ অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রপতি একটি হেলিকপ্টারযোগে গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত আইওএনএসের সদস্য ও পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রসমূহের ৪৩টি যুদ্ধজাহাজের অবস্থান পরিদর্শন করেন। এরপরে বিকেলে ইনানী সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত হয় জাঁকজমকপূর্ণ বিচ কার্নিভ্যাল। উল্লেখ করা যেতে পারে ইমসারেক্সে এবারের মহড়ায় অংশ নিচ্ছে ২৩ সদস্য ও ৯ পর্যবেক্ষক দেশ। আজ ও কাল দু’দিনব্যাপী সমুদ্রে চলবে মাল্টিলেটারাল মেরিটাইম সার্চ এ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ। এ এক্সারসাইজে বাংলাদেশে ৩২টি বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধজাহাজ ও নৌযান এবং চীন, ভারত, ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার নৌজাহাজ অংশ নিচ্ছে। এতে থাকবে নৌবাহিনীর ৪১টি যুদ্ধজাহাজ, ৩টি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফট ও ৪টি হেলিকপ্টার। এ মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ সমূহে অগ্নিনির্বাপণ প্রক্রিয়া, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ হতে জরুরী উদ্ধার তৎপরতা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ ফিশিং ট্রলার ও জেলেদের অনুসন্ধান, জরুরী উদ্ধার অভিযান, নিখোঁজ উড়োজাহাজ অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক জাহাজের অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা প্রদান, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজকে পোতাশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা এবং ফ্লিট রিভিউ অনুষ্ঠিত হবে। এ মহড়ায় বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ফান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিসাস, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিসিলিস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা অংশ নিচ্ছে।
×