ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালাস পেয়েছে মোট ৪৯, যাবজ্জীবন থেকে তোরাব আলীসহ ১২ জন ;###;১৮৫ জনের যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ২০০ জনের

হাইকোর্টের রায়ে বহাল ॥ বিডিআর বিদ্রোহ ॥ ১৩৯ জনের ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

হাইকোর্টের রায়ে বহাল ॥ বিডিআর বিদ্রোহ ॥ ১৩৯ জনের ফাঁসি

বিকাশ দত্ত ॥ বহুল আলোচিত বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ১৫২ জনের মধ্যে বিডিআরের তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলমসহ ১৩৯ জনের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এছাড়া আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আপীল আংশিক গ্রহণ করে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন দ- দেয়া হয়েছে। ১৩ বছর সাজা দেয়া হয়েছে দু’জনকে, ১০ বছর ১৮২ জন, সাত বছর ১২ জন, তিন বছর চারজনসহ মোট দুই শ’ জনকে বিভিন্ন দ- দেয়া হয় এবং সাজা থেকে খালাস দেয়া হয়েছে ৪৯ জনকে। এর মধ্যে যাবজ্জীবন পাওয়া তোরাব আলীও রয়েছেন। পিনপতন নীরবতার মধ্যে বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেছে। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গনে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা। আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপীল মামলায় রায়ের দিনে আইনজীবী, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল এজলাস। আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৯ সালে পিলখানায় যে হত্যাকা- হয়েছিল তার বিচারের নি¤œ আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছিলেন এবং ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আরও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন দ- প্রদান করেন আদালত। নি¤œ আদালত যাদের খালাস দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আমরা আপীল করেছিলাম। হাইকোর্টে ৩৭০ কার্যদিবস শুনানি শেষে সোমবার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে ১৩৯ জনকে মৃত্যুদ-সহ বিভিন্ন দ- প্রদান করেছেন হাইকোর্ট। আদালত রায় ঘোষণার আগে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে বিদ্রোহের মতো পরিস্থিতি এড়াতে সৈনিকদের সঙ্গে অফিসারদের ‘ঔপনিবেশিক আচরণ ও ইগো’ থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছে উচ্চ আদালত। পিলখানায় হত্যা মামলার রায় ঘোষণায় হাইকোর্ট বলেছে, ‘সৈনিকরা কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও আত্মীয় এরা এদেশেরই সন্তান। যে কোন বাহিনীতে অধস্তনদের সঙ্গে উর্ধতনদের পেশাদারিত্বমূলক সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।’ এদিকে আদেশের পর অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায় শিরোধার্য। অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম বলেছেন, নির্দ্বিধায় ন্যায়বিচায় হয়েছে বলে মনে করছি না। যেভাবে রায় ঘোষণা করা হলো এভাবে ঘোষণা হতে পারে না। রায়ের বিরুদ্ধে বলার কিছু নাই। এমন রায় আমরা প্রত্যাশা করিনি। আমি আমার ক্লায়েন্টদের বলব, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেয়ে তারা যেন আপীল করে। এতে তারা ন্যায়বিচার পাবে বলে আশা করছি। সোমবার বেলা ২টা ৩৫ মিনিট থেকে আসামিদের দ- ঘোষণা শুরু হয়। প্রথম দফায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-প্রাপ্তদের রায় দেয়া হচ্ছে। এক এক করে অভিযুক্তদের নাম ও সাজা ঘোষণা করছে আদালত। তার পড়া শেষে রায়ের মূল অর্থাৎ সাজার অংশ পড়েন বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেন। পরে মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে দুপুর আড়াইটা থেকে রায়ের মূল অংশ পড়া শুরু করে আদালত। রায় পড়া শেষ হয় বিকেল সাড়ে চারটায়। এর আগে রবিবার প্রথম দিনের মতো রায় পড়া হয়। গত ১২ নবেম্বর থেকে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ২৬ নবেম্বর রায় ঘোষণার জন্য রাখা হয় আপীল মামলাটি। আলোচিত এ মামলায় ৮৫০ আসামির মধ্যে ৫৬৮ জনকে সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত। তাদের মধ্যে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদ-, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদ- ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছিল। সে সময় খালাস পেয়েছিলেন ২৭৭ জন। আজ হাইকোর্টের দেয়া রায়ে নিম্ন আদালতের দেয়া ১৫২ জনের মৃত্যুদ- থেকে কমিয়ে ১৪৬ জনের যাবজ্জীবন ও ১৮২ জনের ১০ বছরের সাজা বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। নি¤œ আদালতে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ৮ জনকে যাবজ্জীবন প্রদান করেছে হাইকোর্ট। তাদের মধ্যে রয়েছে মোঃ সেলিম, কামরুল হাসান, আলী হোসেন, মনোরঞ্জন সরকার, মোজাম্মেল হক, রমজান আলী, সাইফুদ্দিন মিয়া ও জাকির হোসেন। অন্যদিকে হাইকোর্ট মৃত্যুদ- থেকে যে চারজনকে খালাস দিয়েছে তারা হলেন খায়রুল আলম, আলী আকবর, বিল্লাল হোসেন খান, মেজবাহ উদ্দিন। অন্যদিকে যাবজ্জীবন থেকে যে ১২ জন খালাস পেয়েছেন তারা হলেন, মোঃ তোরাব আলী, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সাহিদুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, এমদাদুল হক, মোঃ রাশেদ আলী খোকা, মোঃ আলম, শ্রী মানিক চন্দ্র, মোঃ আলমগীর হোসেন, মোঃ কামাল উদ্দিন, মোঃ শাহিদুল ইসলাম, মোঃ আতিকুর রহমান। আদালতের রায় শিরোধার্য ॥ বহুল আলোচিত বিডিআর সদর দফতরের পিলখানা ট্র্যাজেডির হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায় শিরোধার্য। তিনি বলেন, রায়ে আমরা আশানুরূপ। সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে তা শিরোধার্য। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম বলেছেন, নির্দ্বিধায় ন্যায়বিচায় হয়েছে বলে মনে করছি না। যেভাবে রায় ঘোষণা করা হলো এভাবে ঘোষণা হতে পারে না। রায়ের বিরুদ্ধে বলার কিছু নাই। এমন রায় আমরা প্রত্যাশা করিনি। আমি আমার ক্লায়েন্টদের বলব পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেয়ে তারা যেন আপীল করে। এতে তারা ন্যায়বিচার পাবে বলে আশা করছি। নি¤œ আদালতে যাদের মৃত্যুদ- দেয়া হয় ॥ নিম্ন আদালত যাদের ফাঁসি দিয়েছিল তাদের মধ্যে রয়েছেন, ডিএডি তৌহিদুল আলম, ডিএডি নাছির উদ্দিন খান, ডিএডি মির্জা হাবিবুর রহমান, ডিএডি আবদুল জলিল, সিপাহী সেলিম রেজা, সিপাহী মোঃ শাহ আলম, সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিক, সিপাহী সাজ্জাদ হোসেন, সিপাহী কাজল আলী, সিপাহী আবদুল মতিন, বেসামরিক ব্যক্তি জাকির হোসেন, ল্যান্সনায়েক শাহ আলম, হাবিলদার আবু তাহের, সিপাহী আজিম পাটওয়ারী, সিপাহী রেজাউল করিম, সিপাহী রফিকুল ইসলাম, সিপাহী মোঃ রফিকুল ইসলাম, সিপাহী জসিম উদ্দিন, ল্যান্সনায়েক মোঃ জাকারিয়া মোল্লা, ল্যান্সনায়েক মোঃ আঃ করিম, ল্যান্সনায়েক মোঃ শাহাবুদ্দিন তালুকদার, সিপাহী মোঃ হাবিবুর রহমান, সিপাহী মোঃ জিয়াউল হক, সিপাহী রুবেল মিয়া, হাবিলদার সহকারী খন্দকার মনিরুজ্জামান, সিপাহী মোঃ আজাদ খান, সিপাহী খন্দকার শাহাদত, সিপাহী মোঃ এমরান চৌধুরী, ল্যান্সনায়েক মোঃ ইকরামুল ইসলাম, সিগন্যালম্যান মোঃ আবুল বাশার, সিপাহী মোঃ শেখ আইয়ুব আলী, হাবিলদার মোঃ খায়রুল আলম, সিপাহী মোঃ ওবায়দুল ইসলাম, সিপাহী মোঃ শামীম আল মামুন, সিপাহী মোঃ সিদ্দিক আলম, সিপাহী মোঃ আমিনুল, সিপাহী মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিপাহী মোঃ রিয়ান আহাম্মেদ, সিপাহী মোঃ রাজিবুল হাসান, সিপাহী মোঃ সুমন মিয়া, সিপাহী মোঃ হারুন রশিদ মিয়া, সিপাহী মোঃ আতোয়ার রহমান, সিপাহী মোঃ ইব্রাহিম, সিপাহী মোঃ কামাল মোল্লা, সিপাহী মোঃ আবদুল মুহিত, সিপাহী মোঃ রমজান আলী, সিপাহী মোঃ শাহীন শিকদার, নায়েক সুবেদার শাহজাহান আলী, হাবিলদার মোঃ ইউসুফ আলী, সিপাহী মোঃ বজলুর রশিদ, ল্যান্সনায়েক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, হাবিলদার জালাল উদ্দিন আহমেদ, সিপাহী মোঃ আলিম রেজা খান, হাবিলদার শাহজালাল, জেসিও সুবেদার মোঃ খন্দকার একরামুল হক, জেসিও নায়েক সুবেদার মোঃ শাইদুর রহমান, জেসিও সুবেদার মেজর মোঃ শহিদুর রহমান, জেসিও নায়েব সুবেদার মোঃ আজিজ মিয়া, পিয়ন এমএলএসএস মোঃ সাইফুদ্দিন মিয়া, জেসিও নায়েক সুবেদার মোঃ আলী আকবর, সিপাহী মোঃ কাজী আরাফাত হোসেন, সিপাহী মোঃ হায়দার আলী শেখ, সিপাহী মোঃ আবুল বাশার, জেসিও নায়েব সুবেদার মোঃ ফজলুল করিম, হাবিলদার এবিএম আনিসুজ্জামান, সিপাহী মোঃ মতিউর রহমান, নায়েক মোঃ ওয়াজেদুল ইসলাম, সিগন্যালম্যান মোঃ মনির হোসেন, সিপাহী মোঃ মনিরুজ্জামান, নায়েক আবু সাঈদ আলম, সিপাহী মোঃ তারিকুল ইসলাম, নায়েব সুবেদার ওয়ালি উল্লাহ, সিপাহী মোঃ হারুন অর রশিদ, সিপাহী আতিকুর রহমান, সিপাহী ড্রাইভার মোঃ হাবিবুর রহমান, সিপাহী মোঃ রমজান আলী, হাবিলদার (চালক) আঃ সালাম খান, সিপাহী মোঃ তারিকুল, হাবিলদার বিল্লাল হোসেন খান, হাবিলদার মাসুদ ইকবাল, নায়েক মোঃ আবদুল কাইয়ুম, হাবিলদার মোঃ আক্তার আলী, হাবিলদার মোঃ শফিকুল ইসলাম, ল্যান্সনায়েক মোজ্জাম্মেল হক, নায়েক সুবেদার মনোরঞ্জন সরকার, নায়েব সুবেদার আবুল খায়ের, হাবিলদার জাকির হোসেন তালুকদার, সিপাহী মোঃ সাইফুল ইসলাম, হাবিলদার মোঃ সহঃ আবুল বাশার, জেসিও সুবেদার মোঃ ইউসুফ আলী খান, জেসিও মেডিঃ এ্যান্সি. নায়েব সুবেদার খান মোঃ তোরাব হোসেন, নায়েক মোঃ নজরুল ইসলাম, নায়েক চালক মোঃ আলী হোসেন, হাবিলদার মোঃ হুমায়ুন কবির (সুধীর), হাবিলদার মোঃ ওমর আলী, সিপাহী রাজু মারমা, সিপাহী আল মাসুম, নায়েক মোঃ শফিকুল ইসলাম, হাবিলদার জমিস উদ্দিন খান, সিপাহী মোঃ আবদুর রশিদ, সিপাহী মোঃ জিয়াউল হক, সিপাহী মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম, নায়েক ফিরোজ মিয়া, সিপাহী মোঃ শাহীনূর আল মামুন, নায়েক মোঃ নূরুল ইসলাম, নায়েক শেখ মোঃ শহিদুর রহমান, সিপাহী মোঃ মহসিন আলী, সিপাহী এসএম সাইফুজ্জামান, সিপাহী উত্তম বড়ুয়া, জেসিও নায়েক সুবেদার মোঃ কবির উদ্দিন, সিপাহী এসএম রেজওয়ান আহম্মেদ, সিপাহী মোঃ নাজমুল হোসাইন, জেসিও সুবেদার মোঃ আবদুল বারী, সিপাহী মোঃ আমিনার রহমান, সিপাহী মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সিপাহী রাখাল চন্দ্র, নায়েক মোঃ রফিকুল ইসলাম, সিপাহী মোঃ এরশাদ আলী, ল্যাঃ নাঃ হাবিবুল্লা বাহার, নায়েক (চালক) মোঃ নজরুল ইসলাম, নায়েক মোঃ আসাদুজ্জামান, সিপাহী মোঃ মিজানুর রহমান, সিপাহী মোঃ মুকুল আলম, সিপাহী মোঃ হাসিবুল হাসান, সিপাহী পল্টন চাকমা, সিপাহী মোঃ মাঈন উদ্দিন, সিপাহী মোঃ রেজাউল করিম, সিপাহী মোঃ বাকী বিল্লাহ, সিপাহী মোঃ কামরুল হাসান, সিপাহী মোঃ মেজবাহ উদ্দিন, সিপাহী মোঃ সেলিম, সিপাহী মোঃ নুরুল আলম, ল্যান্সনায়েক মোঃ হামিদুল ইসলাম, সিপাহী মোঃ আনিছুর রহমান, সিপাহী মোঃ মকবুল হোসেন, সিপাহী মোঃ সালাউদ্দিন, ল্যান্সনায়েক রেজাউল করিম, ডিএডি মোঃ নূরুল হুদা, নায়েক সুবেদার মোঃ ইসলাম উদ্দিন, ল্যান্সনায়েক মোজাম্মেল হক, হাবিলদার মোঃ দাউদ আলী বিশ্বাস, সিপাহী মোঃ জসিম উদ্দিন, নায়েক শাহী আকতার, ল্যান্সনায়েক মোঃ মজিবুর রহমান, ল্যান্সনায়েক মোঃ আনোয়ার হোসেন, ল্যান্সনায়েক মোঃ হাসনাত কামাল, ল্যান্সনায়েক সহকারী ইমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক সহকারী সেলিম মিয়া, ল্যান্সনায়েক সহকারী নজরুল ইসলাম, হাবিলদার বেলায়েত হোসেন এবং সিপাহী মোঃ আবুল কালাম আজাদ। মামলার কার্যক্রম ॥ আসামিসংখ্যার দিক থেকে এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ওই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ১৫২ আসামির ফাঁসির রায় দেয় বিচারিক আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোঃ আখতারুজ্জামান বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়া বিডিআরের উপসহকারী পরিচালক তৌহিদুল আলমসহ (৫৫) বাহিনীর ১৫২ জওয়ান ও নন কমিশন্ড কর্মকর্তার মৃত্যুদ-ের আদেশ দেয়া হয় রায়ে। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলার সাড়ে আট শ’ আসামির মধ্যে জীবিত আছেন ৮৪৬। তাদের মধ্যে ১৬১ জনকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদ-। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড নেতা তোরাব আলীকে যাবজ্জীবন দ- দেয় আদালত। তাদের দুজনকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও পাঁচ বছর কারাদ-ের আদেশ দিয়েছিলেন বিচারক। নাসির উদ্দিন পিন্টু কারাগারে থাকাকালে মারা যান। ১৬১ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের পাশাপাশি অস্ত্র লুটের দায়ে আরও ১০ বছরের কারাদ- এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদ- দেয়া হয়। তাদের পর্যায়ক্রমে এই সাজা খাটতে হবে। এ ছাড়া ২৫৬ আসামিকে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- ও অর্থদ- দেয়া হয়। কারও কারও সাজা হয়েছে একাধিক ধারায়। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে বেকসুর খালাস দেন বিচারক। বিডিআর হত্যাযজ্ঞ ঘটনায় প্রথমে লালবাগ থানায় মামলা হয়। পরে তা স্থানান্তরিত হয় নিউমার্কেট থানায়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিআইডি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেয়ায় আলাদাভাবে দুই অভিযোগের বিচার শুরু হয়। হত্যার ঘটনায় অভিযোগপত্র দেয়া হয় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়া বিস্ফোরক আইনে ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি হত্য মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করেন ঢাকার বিশেষ জজ জহুরুল হক। ওই বছরের ২৪ আগস্ট এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরে এ মামলার দায়িত্ব পান মোঃ আখতারুজ্জামান। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সাবেক ও বর্তমান সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা, পুলিশের সাবেক ও বর্তমান আইজি, বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোট ১ হাজার ৩৪৫ জনকে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করা হলেও শেষ পর্যন্ত ৬৫৪ জন আদালতে জবানবন্দী দেন। ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপীলের শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ বেঞ্চটি গঠন করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। পরদিন ৫ জানুয়ারি বিশেষ বেঞ্চ বসে ১৮ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করেন। ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানি শুরু হয়ে গত ১৩ এপ্রিল ৩৭০ কার্যদিবসে শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও মোশাররফ হোসেন কাজল, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোশাররফ হোসেন সরদার, শেখ বাহারুল ইসলাম ও জাহিদ সরওয়ার কাজল। আসামিপক্ষে ছিলেন- এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল বাসেত মজুমদার, মহসীন রশীদ, এসএম শাহজাহান, এএসএম আবদুল মুবিন, মোঃ আমিনুল ইসলাম, দাউদুর রহমান মিনা, শামীম সরদার প্রমুখ আর রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন হাসনা বেগম।
×