ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুমন্ত গুপ্ত

বাংলাদেশের নিশাত তাসনিমের অর্জন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের নিশাত তাসনিমের অর্জন

থিসিস পেপারের শুরুতেই আমাদের নিশাত লেখেছেন এই কবিতা এক বহু পুরনো নদীর। যে নদীর জলে ভেসে আসত পলিমাটি, গড়ে উঠত উর্বর ভূমি। হাজারো মানুষ নদী পেরিয়ে পৌঁছাত তাদের গন্তব্যে। কিন্তু একদিন নদী এই মানুষগুলোকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলো। নদীর জলে ভেসে এলো বহু মৃতদেহ আর রক্ত... আপনারা হয়ত ভাবছেন থিসিস পেপারে মূলত গবেষণার তথ্য-উপাত্ত আর হিসাব-নিকাশ থাকার কথা, নদীর গল্প কেন? এর কারণটা হলো ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) স্থাপত্য বিভাগ থেকে স্নাতক পেরুনো নিশাত তাসনিম তার শেষ বর্ষের প্রকল্পের বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এক ঐতিহাসিক পটভূমি আমরা শৈশবে অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখি। অনেক বিখ্যাত একজন হওয়ার তীব্র বাসনা লালন করি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে স্বপ্নের ডালপালা মেলতে থাকে। কিন্তু সবার সেই লালিত স্বপ্ন পূরণ হয় না। হয়ত সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য যতটুকু শ্রম বা সাধনা দরকার তা করি না। তবে স্বপ্ন দেখার সঙ্গে সঙ্গে তা পূরণ করার জন্য তীব্র আকাক্সক্ষা আছে, তাদের পক্ষেই সম্ভব নিজের উদ্যোগে কিছু একটা করা। ঠিক তেমনি একজন নিশাত তাসনিম। পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) স্থাপত্য কলা বিভাগে। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন দেশের জন্য কিছু একটা করবেন। কারণ ৩০ লাখ প্রাণ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি। এ এক পরম পাওয়া। কিন্তু এটা অর্জন করতে গিয়েবাংলার তরুণ-তরুণী এবং আপামর জনগণ যেভাবে হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে তা বিশ্ব ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিক। এই স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ আমরা তখনই পাব যখন আমাদের দেশমাতৃকার নাম বিশ্বে বুকে তুলে ধরতে পারব। তাছাড়া ‘অতীত সম্পর্কে জানা আমাদের দায়িত্ব। জানতে হবে আমরা কোথা থেকে, কীভাবে এসেছি। আমাদের ভিতটা শক্ত না হলে, স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলে একসময় আমরা হারিয়ে যাব। আমরা ’৭১ নিয়ে কথা বলি। আমরা আমাদের বীরত্বকে সব সময় সামনে রাখি। বীরত্বের পাশাপাশি আমাদের ত্যাগের গল্পও কিন্তু কম নয়। নির্বিচারে, নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে একাত্তরে। সেসব ইতিহাস কতখানি স্বীকৃত, কতটুকু জানে বর্তমান প্রজন্ম, এসব ভাবনার থেকেই শেষ বর্ষের প্রকল্পের বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এক ঐতিহাসিক পটভূমি। সেই ভাবনা থেকে আমাদের নিশাত তার থিসিস পেপারে তৈরি করেন। থিসিস পেপারের শুরুতেই আমাদের নিশাত লেখেছেনÑ এই কবিতা এক বহু পুরনো নদীর। যে নদীর জলে ভেসে আসত পলিমাটি, গড়ে উঠত উর্বর ভূমি। হাজারো মানুষ নদী পেরিয়ে পৌঁছাত তাদের গন্তব্যে। কিন্তু একদিন নদী এই মানুষগুলোকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলো। নদীর জলে ভেসে এলো বহু মৃতদেহ আর রক্ত... আপনারা হয়ত ভাবছেন থিসিস পেপারে মূলত গবেষণার তথ্য-উপাত্ত আর হিসাব-নিকাশ থাকার কথা, নদীর গল্প কেন? এর কারণ টা হলো ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) স্থাপত্য বিভাগ থেকে স্নাতক পেরুনো নিশাত তাসনিম তার শেষ বর্ষের প্রকল্পের বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এক ঐতিহাসিক পটভূমি। তার প্রকল্পে উঠে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড, চুকনগর গণহত্যার কথা। ১৯৭১ সালে খুলনার চুকনগরে এক দিনে আট হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। এই ঘটনার স্মরণে চুকনগর বাজারের কাছে একটি গবেষণাকেন্দ্র, স্মৃতিস্তম্ভসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের প্রকল্প উপস্থাপন করেছিলেন আমাদের নিশাত। তার প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ইউএপির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক মুহতাদিন ইকবাল, জিয়াউল ইসলাম, মাশরুর মামুন ও উদয় শঙ্কর দত্ত। আর সেই প্রকল্প জিতে নিয়েছে তামায়ুজ ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড ২০১৭। এ বছর তামায়ুজ ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ডের জন্য ৪২টি দেশের ১১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪৬৮টি প্রকল্প জমা পড়েছিল। বিজয়ী হওয়ার পুরস্কার হিসেবে নিশাত ইরাকী বিজনেস কাউন্সিলের অর্থায়নে ইতালির পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি অব মিলানে স্নাতকোত্তর করতে পারবেন। তামায়ুজ ইন্টারন্যাশনালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গেলে দেখতে পাবেন নিশাতের কাজটি সম্পর্কে বিচারকদের বক্তব্য, তারা বলছেন ‘বিষয়টির গুরুত্ব ও সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখে চমৎকার সমন্বয় করা হয়েছে এ প্রকল্পে। এটি গতানুগতিক স্মৃতিস্মারকের ধারণা থেকে আলাদা। প্রকল্পটির নকশা একই সঙ্গে শিল্পমানসম্পন্ন, স্নিগ্ধ এবং শক্তিশালী।’ স্নাতক প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের করা স্থাপত্য, নগর-পরিকল্পনা ও ল্যান্ডস্কেপ নকশার কাজগুলো এই প্রতিযোগিতায় জমা পড়ে। সেখান থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার পর কয়েকটি প্রকল্পকে পুরস্কৃত করা হয়। বর্তমানে নিশাত ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে স্নাতক শেষ করে তিনি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
×