ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যস্ত থাকতেই পছন্দ করি’

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

ব্যস্ত থাকতেই পছন্দ করি’

আমাদের সমাজের সার্বিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করলে প্রতিভাবান অনেক ফুটন্ত গোলাপকে অঙ্কুরেই ঝরে যেতে দেখা যায়। যথেষ্ট মেধা এবং দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে এখনকার তরুণ-তরুণীদের অনেকের ক্যারিয়ার হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন। ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা রাষ্ট্রীয় কোন ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে সুচারু পরিকল্পনার লেশমাত্র নেই। আবার পরিকল্পনা যাও আছে তার বাস্তব প্রতিফলন নেই। জীবনকে সুন্দর করতে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য ও প্রশিক্ষণ দেয়া। পরিবার পরিজন এই কাজে প্রথমে কোন আগ্রহ বা উৎসাহ না দিলেও এখন তার কাজগুলো বোঝেন। তাই প্রতিনিয়ত সাপোর্ট পান সবার থেকে। ব্যতিক্রম পেশার এই মানুষটিকে নিয়ে আজকের ডিপ্রজন্ম ফিচার। লিখেছেন-- রুহুল আমিন ভূঁইয়া ২৪ ঘণ্টা কাজ করা এই অদ্ভুত মানুষটি শুধু নামে নয়, কর্মজীবনেও ব্যতিক্রম। জীবনকে সুন্দর করতে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাফল্যমন্ডিত ক্যারিয়ার গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের বড় বড় সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে সুনামও অর্জন করেছেন। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের প্রতিষ্ঠান ডন সামদানি ফ্যাসিলিটেশন এ্যান্ড কনসালটেন্সি ফার্ম। কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ফিলিপ মোরিস ইন্টারন্যাশনালে। বর্তমানে ‘ইন্সপ্যর‌্যাশনাল ট্রেইনার’ হিসেবে যুক্ত রয়েছেন কমিউনিকেশন্স, টিম বিল্ডিং এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনসহ ক্যারিয়ার সম্পর্কিত উৎসাহ-উদ্দীপনা দিতে। অবশ্য এর মধ্যেই নিজেকে যুক্ত করেছেন ইউএনডিপি, গ্রামীণফোন, শেভরন, পারফেত্তি, হোলসিম, এনভয় গ্রুপ, ওমিকন গ্রুপ এবং এনার্জিপ্যাকের মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক হিসেবে। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউল্যাব এবং এআইইউবিসহ দেশসেরা সরকারী ও বেসরকারী নানা প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা ও উৎসাহব্যঞ্জক ভাষণে এ তরুণ কেড়ে নিয়েছেন লাখো ভক্তের মন। ব্যতিক্রম পেশার এই তরুণ গোলাম সামদানি ডন নিজেই বললেন তার পেশা, কর্মজীবন, ক্যারিয়ার আর নিত্যদিন ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গল্প- মনে পরে আমার, প্রথম যেদিন স্টেজে উঠেছিলাম। সামনে ছিল ২০ জনের বেশি অডিয়েন্স। তখনও আমি ভয় পাইনি; আর এখন ৫০০-১০০০ জনের সামনে থামলেও ভয় পাই না। তাদের অনুপ্রেরণা দিতে, জীবনকে সুন্দর করতে নানা ধরনের কথা বলতে আমার ভাল লাগে। মানুষকে পরামর্শ দেয়া, কথা বলা কিংবা আমার কাজ নেশায় পরিণত হয়েছে। কাজ না করতে পারলে খুব খারাপ লাগে। কারণ আমি একটার পর একটা অর্জন যখন করি, তখন আমার আরও একটার চাহিদা সামনে এসে দাঁড়ায়। তখন আমি তার পেছনে ছুটি। আমি নিজ ও সবার জন্য এমন জ্ঞান দিয়েছি, অন্তত আজকের জন্য বাঁচুন। যতটুকু পেয়েছেন, ততটুকুই উপভোগ করুন। দেখবেন জীবনটা কত সুন্দর! মূলত আমি ক্যারিয়ার, কনসালটেন্সি, টিচিং, ট্রেনিং শব্দগুলো খুব পছন্দ করি। সে জন্য নিজ থেকেই এই সংক্রান্ত বই, ইউটিউব ভিডিও ও মুভি দেখে শেখার চেষ্টা করি। এ ছাড়া ইউল্যাব থেকে মিডিয়া স্টাডিজে পড়াশোনা ও বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ জ্ঞান এবং কাজের অভিজ্ঞতা আমাকে এই পথে প্রতিষ্ঠিত হতে সহযোগিতা করেছে। ২০১৩ সালে আমি ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনালে ম্যানেজার ফর কনজিউমার এ্যাঙ্গেজমেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলাম। তখন জমানো সঞ্চয় দিয়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি প্রাইভেট কার কিনি। বাসায় ফেরার সময় এক রাতে পায়ে গুলি করে গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। এরপর অপারেশন করে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম অনেকদিন। তখনই চিন্তা-ভাবনা বদলাতে শুরু করি। সিদ্ধান্ত নেই, জীবনে অর্থপূর্ণ কিছু করতে হবে। বাঁচতে হবে আজকের জন্য, আগামীর জন্য। এরপর চাকরি ছাড়ি এবং নতুন ভাবে পথচলা শুরু করি। আমার সবসময় প্রশিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে ছিল। শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত অনেক আগে থেকেই। ২০০৩ সালে ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্র। তখন মিরপুরের ডারল্যান্ড স্কুলে ২ হাজার ৪০০ টাকা বেতনে শিক্ষকতা শুরু করি। এটাই আমার জীবনের প্রথম আয়। এ ছাড়াও ফিলিপ মরিসে চাকরি করা অবস্থায়ও আমি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউল্যাব এবং বিডি জবসে খ-কালীন শিক্ষকতা শুরু করি। সেই অভিজ্ঞতা আমাকে এতদূর আসতে সাহায্য করেছে। আমি এখন আমার প্রতিষ্ঠান ডন সামদানি ফ্যাসিলিটেশন এ্যান্ড কনসালটেন্সির চীফ ইন্সস্পিরেশনাল অফিসার হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রফেশনাল ট্রেইনারের দায়িত্ব পালন করছি। ক্লায়েন্টদের মাঝে গ্রামীণফোন, সেভরন, ইস্টার্ন ব্যাংক, হোলসিম, জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল, বার্জার, এইচএ্যান্ডএম, রহিম আফরোজ, আনোয়ার গ্রুপ, ব্র্যাক, এপিলিওন গ্রুপসহ দেশের বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আমি ক্যারিয়ার বিষয়ক অনুপ্রেরণামূলক প্রশিক্ষণ দেই। আমি কখনই জীবনের অপ্রাপ্তি নিয়ে ভাবিনি। জীবনে যে কোন বাধা বা সমস্যাকে পজিটিভলি নিয়েছি এবং সেটা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছি। আমি ওয়ান টু ওয়ান কোচিংয়ে ক্লায়েন্টদের বলি জীবনে সবকিছুই কোন না কোন কারণে ঘটে। হয় এটা সফলতা, না হয় শিক্ষা। জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য অর্জন করা। আমি প্রফেশনাল ট্রেইনিং শুরু“করার পর ছোট-বড় যে লক্ষ্য সেট করেছি, সেটাই অর্জন করতে পেরেছি। তবে উল্লেখযোগ্য অর্জন আমার এবং আমার টিমের লেখা পকেট বুক সিরিজ। যেটি চীনের আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং একুশে বইমেলাতেও পাওয়া গেছে। আমি মনে করি এখন কর্মক্ষেত্রে আছি সেটাই আমার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। তবে আমি এই পেশায় কখনও আসতে চাইনি। ভাগ্য আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে এই পেশা আমার রক্তে মিশে গেছে। এখানে অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আমাকে দিয়ে অন্যদের জীবনে একটু হলেও ভ্যালু এ্যাড করাতে পারাটায় সবচেয়ে বেশি আনন্দের। তাই বর্তমান এবং ভবিষ্যত সবকিছুই এখন আমার বর্তমান পেশা নিয়ে। আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে লিডিং ট্রেইনার হতে চাই এবং এর জন্য যে কাজ করা প্রয়োজন আমি সেটা করে যাচ্ছি এবং যাব। সেটার জন্য যা যা বিসর্জন করা প্রয়োজন তা করতেও দ্বিধাবোধ করব না। বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে আমি আশাবাদী। দেশের তরুণরা নিয়মিত দেশ ও দেশের বাইরে তাদের মেধা ও মননের স্বাক্ষর রাখছেন। এ ছাড়া যখন আমরা প্রশিক্ষণ দেই, তখন সবসময় দেশের এই অর্জনকে এবং বিদেশের নানা বয়সের মানুষের ভিন্নধর্মী প্রচেষ্টা ও সফলতা তুলে ধরে সবাইকে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করি। সফলতা বলতে বুঝি, যে দিনটি আপনি অতিক্রম করছেন সে দিনটিকে নিজের মতো করে উপভোগ করা। আর এটি তখনই সম্ভব হবে, যখন আপনি আপনার পছন্দের কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, আমাদের সমাজে অনেকেই হয়ত পরিবার, সমাজ ও নিজেকে চালাতে একটা চাকরি করে থাকেন। হয়ত তিনি সেখান থেকে ভাল বেতনও পান। কিন্তু তিনি সুখী নন। এ জন্যই বলা নিজের পছন্দে চলতে গিয়ে আজকের জন্য কাজটা চ্যালেঞ্জিং হলেও সেটাই মূলত সফলতা। আর সত্যি বলতে আমি নিজে যখন এই প্রতিষ্ঠান করিনি, তখন জীবন চলত ঠিকই, কিন্তু মজা খুব একটা পেতাম না। ঠিক তেমনি অনেকেই কাজ করেন, ভবিষ্যতে ভাল থাকার জন্য, বাড়ি-গাড়ি করার জন্য, অনেকে আবার স্থায়ী চাকরি বা পেনশন আছে বিধায় লেগে থাকেন। তবুও আমি বলব আপনি যেটাই করেন সেটাতেই আপনার সেরা হওয়া উচিত। না হলে সেটি বাদ দেয়াই ভাল। আর আমি অপছন্দ করি মানুষের পরনিন্দা করা, অন্যদের উৎসাহ না দিয়ে তিরস্কার বা বিমুখ করা। আর আমি সব সময় এই মানুষদের থেকে দূরে থাকি এবং অন্যদেরও দূরে থাকতে বলি।
×