ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী চাকুরেদের জন্য আজিমপুর, মতিঝিল জিগাতলায় ফ্ল্যাট হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

সরকারী চাকুরেদের জন্য আজিমপুর, মতিঝিল জিগাতলায় ফ্ল্যাট হচ্ছে

আনোয়ার রোজেন ॥ রাজধানীতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসন সঙ্কট নিরসনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে তিনটি প্রকল্পের আওতায় আজিমপুর, মতিঝিল ও জিগাতলায় মোট ১ হাজার ৯৬০ ফ্ল্যাট তৈরি করবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে আজিমপুরে ১ হাজার ২৯২, মতিঝিলে ৩৮০ এবং জিগাতলায় ২৮৮ ফ্ল্যাট হবে। এসব ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট। ফ্ল্যাটগুলো তৈরিতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। ব্যয়ের সম্পূর্ণ অর্থ দেয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ফ্ল্যাটগুলো তৈরি হলে উপযুক্ত, মানসম্পন্ন, স্বাস্থ্যকর আবাসন নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাজের মানও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য তিনটি পৃথক প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের কথা রয়েছে। একনেকে অনুমোদন হলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে গণপূর্ত অধিদফতর। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসন সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাজধানীতে কর্মরত সরকারী চাকুরের মাত্র ৮ শতাংশ আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিশাল একটি অংশ বেসরকারীভাবে ভাড়া বাসায় অবস্থান করেন। ফলে তাদের নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয়। এজন্য সরকার চেষ্টা করছে তাদের আবাসন সঙ্কট দূর করার। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত অনেক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আবার কোন কোনটির বাস্তবায়নও হয়ে গেছে। আমরা চাই সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাক। তারা যেন আবাসনের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে মনোযোগ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারেন। সূত্র জানায়, প্রকল্পগুলো হচ্ছে আজিমপুরে সরকারী কলোনির অভ্যন্তরে সরকারী কর্মকর্তা/ কর্মচারীর জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়), ঢাকার মতিঝিল সরকারী কলোনিতে (হাসপাতাল জোন স্টোর কম্পাউন্ড) বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প এবং ঢাকার জিগাতলায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর (গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদফতর) জন্য ২৮৮ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসন ব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন থেকেই চাহিদার তুলনায় ঘাটতি ছিল। বর্তমান চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সরকারের কাজের পরিধি আগের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নতুন নতুন অধিদফতর, পরিদফতর ও সংস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ে জনবল নিয়োগ করা হচ্ছে। এভাবে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেলেও আবাসন সুবিধা রয়ে গেছে আগের মতোই। ফলে বর্তমানে আবাসন সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারী আবাসন পরিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, মহানগরীতে পদায়িত ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। এ হিসাবে তাদের সংখ্যা মাত্র ১২ হাজার। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারী-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নি¤œমানের বেসরকারী বাসভবনে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ফলে তাদের কর্মক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবাসন সুবিধা বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে নিদের্শনা দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবাসন পরিদফতর ২০১৫ সালের মধ্যে ১৩ হাজার ৫২ ফ্ল্যাট থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৩২০ ফ্ল্যাটে উন্নীতকরণ, ২০১৭ সালের মধ্যে ১৬ হাজার ৯৬৮টিতে এবং ২০১৯ সালের মধ্যে ১৮ হাজার ২৭৬ ফ্ল্যাটে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য পূরণ করা গেলে এক্ষেত্রে বর্তমানের আবাসনের হার ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশে পৌঁছাবে। আজিমপুরে হচ্ছে ১২৯২ ফ্ল্যাট ॥ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আজিমপুর সরকারী কলোনিতে অতিরিক্ত খালি জায়গায় দ্বিতীয় পর্যায় ১৭ ভবন তৈরি করা হবে। এগুলোতে ফ্ল্যাটের সংখ্যা হবে ১ হাজার ২৯২। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৯টি ২০ তলা ভবনে ১ হাজার বর্গফুটের ৬৮৪ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা। এক্ষেত্রে প্রতিটি ভবনে ৭৬টি করে ফ্ল্যাট তৈরি হবে। এছাড়া ৮টি ২০ তলা ভবনে ৮০০ বর্গফুটের ৬৮৪ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যা হবে ৬০৮টি। সেই সঙ্গে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। জিগাতলায় গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদফতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ২৮৮ ফ্ল্যাট ॥ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ২৮৮ ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে একটি ১৩ তলা ভবনে দেড় হাজার বর্গফুটের ৪৮ ফ্ল্যাট নির্মাণ, ৩টি ১৩ তলা ভবনে ১২৫০ বর্গফুটের ১৪৪ ফ্ল্যাট তৈরি, ২টি ১৩ তলা ভবনে ১ হাজার বর্গফুটের ৯৬ ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। এছাড়া ৫ হাজার বর্গফুটের একটি ৬ তলা কমিউনিটি ভবন, ১ লাখ ৪০ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতার ভূগর্ভ জলাধার, ৭টি সাবস্টেশন, ফুটপাথ ও অভ্যন্তরীণ রাস্তাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। মতিঝিলে পুরাতন ভবন ভেঙ্গে হবে ৩৮০ ফ্ল্যাট ॥ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় পুরাতন ভবন ভেঙ্গে তৈরি করা হবে ৩৮০ ফ্ল্যাট। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ২টি ২০ তলা ভবনে প্রতিটি ১ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫২ ফ্ল্যাট নির্মাণ, ৩টি ২০ তলা ভবনে প্রতিটি ৮০০ বর্গফুটের ২২৮ ফ্ল্যাট নির্মাণ। এছাড়াও ২ লাখ গ্যালন ক্ষমতার ভূগর্ভ জলাধার তৈরি, অভ্যন্তরীণ রাস্তা তৈরি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাগারসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
×