ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের আরচার রাদিয়া আক্তার শাপলার অভিব্যক্তি

কষ্ট পাইনি, হার থেকে শিক্ষা নিলাম’

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

কষ্ট পাইনি, হার থেকে শিক্ষা নিলাম’

রুমেল খান ॥ নাম তার ফুলের নামে। তাও আবার যেনতেন ফুল নয়, জাতীয় ফুল! নাটোরের যেমন আছে বনলতা সেন, তেমনি আছে রাদিয়া আক্তার শাপলা। যার পরিচয় একজন প্রতিশ্রুতিশীল-মেধাবী জাতীয় তীরন্দাজ হিসেবে। ঢাকায় চলছে এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা। সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মেয়েদের রিকার্ভ এককে বাই পেয়ে শেষ ২৪-এ ওঠেন শাপলা। কিন্তু এ পর্বে তিনি ৬-২ সেটে হেরে চীনের লি ভি না কাছে। এখানেই শেষ নয়। দিনের শেষভাগেও আরেকটি ব্যর্থতার সঙ্গী হন তিনি। রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈতে চাইনিজ তাইপের কাছে হেরে যান তিনি। শাপলার সঙ্গী ছিলেন রোমান সানা। রোমান ভাল পারফরম্যান্স করলেও শাপলার পারফরম্যান্স প্রত্যাশিত হয়নি। একটা পর্যায়ে বাংলাদেশ দল ভাল অবস্থানে থেকেও অনাকাক্সিক্ষতভাবে হেরে যায়। খেলা শেষে রোমানকে মাঠে দেখা গেলেও শাপলাকে দেখা যায়নি। প্রায় বিশ মিনিট ধরে খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ যেন ভোজবাজির মতো উধাও হয়ে যাওয়া! কেউ বলল, শাপলা হোটেলে ফিরে গেছেন। কারোর ভাষ্যÑ তিনি খুব আপসেট, মন খারাপ, তাই নিজেকে সামলাতে তাই চলে গেছেন। এমন সময়ই হঠাৎ আবার মাঠে দেখা গেল শাপলাকে, ব্যাগ গোছাচ্ছেন। জিগ্যেস করলাম, কোথায় ছিলেন এতক্ষণ? স্মিত হেসে জানালেন ওয়াশরুমে। মন খারাপ নাকি? শুকনো হাসি হেসে বললেন, ‘শুরুতে সামান্য হয়েছিল। হারজিৎ থাকবেই। এ নিয়ে মন খারাপ করিনি। বরং যেসব ভুল করেছি, তা থেকে শিক্ষা নেব। যেন আগামীতে ভাল করতে পারি।’ স্কুলে শৈশবে শাপলা ফুটবল খেলতেন। ছিলেন এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। গোল পেতেন নিয়মিত। সবকিছু ঠিকমতোই চলছিল। কিন্তু একটা ঘটনায় বদলে যায় তার খেলোয়াড়ি জীবনের গতিপথ। জেলা পর্যায়ে ক্রিকেট ট্রায়াল দেন। সেখানে উপস্থিত বোনের এক বন্ধুর পরামর্শে বিকেএসপিতে ভর্তি পরীক্ষা দেন ২০১৪ সালে। সেখানে অবশ্য পছন্দের খেলা ক্রিকেট পাননি। এজন্য বেশ মন খারাপ করেন। পরে আরচারিতে ট্রাই করেন। যদিও এই খেলাটি সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না, ‘পরে জানলাম, এটা তীর-ধনুকের খেলা। একটু আগ্রহ জন্মাল। এভাবেই পরে ভাল লেগে যায়। এক মাসের ক্যাম্প হয়। পরে বাছাইকৃতদের নিয়ে ৫ দিনের ট্রেনিং হয়। সেখানেও ভাল পারফরম্যান্স দিয়ে টিকে যাই। এভাবেই আরচারিতে আসা।’ বিকেএসপিতে আগামীতে এসএসসি পরীক্ষা দেবেন শাপলা। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আরচারি প্রতিযোগিতায় পঞ্চমবারের মতো অংশ নিচ্ছেন শাপলা। আগের চারটি হলো : ২০১৬ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে (ব্যর্থ), ২০১৬ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত চিলড্রেন অব এশিয়া গেমসে (রিকার্ভ বোয়ের মিশ্র দ্বৈতে হাকিম আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে স্বর্ণপদক), ২০১৭ সালে ঢাকায় ইসলামী সলিডারিটি গেমসে (টিম ইভেন্টে বিউটি রায় ও শ্যামলী রায়কে সঙ্গে নিয়ে স্বর্ণপদক) এবং ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে (ব্যর্থ)। জাতীয় পর্যায়ে এককে স্বর্ণ, মিশ্র দ্বৈতে রৌপ্য ও দলগত ইভেন্টে স্বর্ণজয়ী শাপলার জন্ম জন্ম ৩ নবেম্বর, ২০০৩ সালে। ২ ভাই, ২ বোনের মধ্যে সবার ছোট। বাবা ব্যবসায়ী (হান্নান সরকার), মা গৃহিণী (শরীফা বেগম)। বড় ভাই রবিউল, বড় আপা সাবিনা খাতুন। শেষের দুজনই তাকে বিকেএসপিতে আসতে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ যোগান। শাপলার আদর্শ আরচার দক্ষিণ কোরিয়ার অলিম্পিয়ান স্বর্ণপদকধারী কি বো বে। ঢাকায় এসেছেন তিনি। তার সঙ্গে দেখা হলেও এখনও কথা হয়নি শাপলার। ‘প্রতিযোগিতা চলাকালে চেষ্টা করব তার কথা বলে কিছু পরামর্শ নিতে।’ শাপলার ভাষ্য। ২০১৬ এসএ গেমসে অংশ নিতে পারেননি শাপলা। কারণ এক মাস আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার স্বপ্ন অলিম্পিকে খেলা। কদিন পরেই জুনিয়র এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবেন। এতে ভাল করলে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিতব্য যুব অলিম্পিকে অংশ নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যাবে। এটাই আপাতত শাপলার নিকট ভবিষ্যত লক্ষ্য।
×