ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে এনজিওতে চাকরিরত পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

কক্সবাজারে এনজিওতে চাকরিরত পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ লাখ লাখ রোহিঙ্গার চাপে ক্ষতিগ্রস্ত টেকনাফ ও উখিয়া এলাকার বেকার শিক্ষিত যুবকদের চাকরি হয় না এনজিওতে। বাংলাদেশী নাগরিকদের চাকরি না হলেও কিন্তু বিদেশী একাধিক এনজিওতে নির্বিঘেœ চাকরি করছে রোহিঙ্গারা। চাকরির জন্য আবেদন করেও এ ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যাত বাংলাদেশী যুবকরা। রোহিঙ্গা আগমণের পর ওসব এনজিওর দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছে তারা। কিন্তু স্থানীয় হওয়ায় আশ্বাসের সাড়াও মেলেনি। অথচ বিভিন্ন পদে এমএসএফ হলান্ডে ৩২০ সহ একাধিক এনজিও সংস্থায় চাকরি করছে ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের মাটিতে ভিনদেশী এনজিওদের এমন কাজে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে স্থানীয়রা। এমএসএফ হলান্ডসহ একাধিক এনজিওর আইন পরিপন্থী এই কাজ বন্ধের দাবি উঠছে। অনেকের প্রশ্ন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে শান্তিতে আছে। খাবার পাচ্ছে। পাচ্ছে বাসস্থান। তার ওপর মোটা অঙ্কের বেতনে স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলাদেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে রোহিঙ্গারা চাকরিও পাচ্ছে। এ কারণে রোহিঙ্গারা এত সুখ-শান্তি ফেলে আর মিয়ানমারে ফিরে নাও যেতে পারে। আকরাম নামের এক যুবক তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত সোনার বাংলার সোনার ছেলেরা বিসিএস পাস করে রিক্সা চালায়। আর রোহিঙ্গারা পায় লাখ টাকার চাকরি। এই ধরনের এনজিও বন্ধ করে দেয়া হোক। গত ১০ সেপ্টেম্বর এমএসএফ হলান্ডের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আউটরিচ ওয়ার্কার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সেই পদে উখিয়া ও টেকনাফের অনেকে আবেদন করেন। কিন্তু স্থানীয়দের বাদ দিয়ে ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের। এমএসএফ হলান্ডের বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মেক শিপ্ট সেটেলমেন্ট এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করেন হেলে নামক এক কর্মকর্তা। কুতুপালংয়ে কাজ করেন ক্রিরিসটিন মুলেন্স নামক আরেক কর্মকর্তা। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আউটরিচ ওয়ার্কার পদে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে ৩২০ রোহিঙ্গাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা সবাই রাখাইন রাজ্য থেকে সদ্য অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গা। তারা বর্তমানে চাকরি করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক এনজিও সংস্থায়। ওই পদে স্থানীয় আবেদনকারীদের ডাকাও হয়নি। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চাকরি করার আইনগত ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও দেশের প্রচলিত আইন তোয়াক্কা না করে তাদের নিয়োগ দিয়েছে এনজিও এমএসএফ হলান্ড। অনিবন্ধিত এনজিও মুয়াসেও রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে চাকরি জুটেছে বলে জানা গেছে। আবুল কাশেম নামে ভুক্তভোগী জানান, সকল শর্ত মেনে আউটরিচ ওয়ার্কার পদে তিনি আবেদন করেছিলেন। ১ মাস পর নিয়োগের বিষয়ে জানতে গিয়ে দেখেন- উক্ত পদে বাংলাদেশী লোকের পরিবর্তে রোহিঙ্গারা চাকরি করছে। আবুল কাশেম উখিয়ার রাজাপালং খয়রাতিপাড়ার সুলতান আহমদের পুত্র। একই অভিযোগ স্থানীয় অসংখ্য আবেদনকারীর। রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশে কর্মরত এনজিওর কাছে বাংলাদেশীরা সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ও উপেক্ষিত। এমএসএফ হলান্ডের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা সবখানে অবাধে বিচরণও করছে। চোখের অন্তরালে অপরাধ করে যাচ্ছে তারা। ইয়াবা, মাদক ব্যবসাসহ দেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করছে। বিভিন্ন অবৈধ সংগঠন-সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিরোধী এমন কর্মকা-ের সুযোগ পাওয়ার পেছনে বিতর্কিত এনজিওগুলোকে দায়ী করছে স্থানীয়রা। গত ১৭ নবেম্বর বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারপত্র বিলিকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এমএসএফ হলান্ডের ৪ রোহিঙ্গাকর্মী। পরে কৌশলে উখিয়া থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায় এনজিও সংস্থার কর্মকর্তারা। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিকারুজ্জামান ওই সময় জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের উস্কানিমূলক লিফলেট বিতরণের সময় হাতেনাতে ৪ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়। এরা হলো পালংখালী শফিউল্লাহকাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৃত জলিলের পুত্র আবদুল গাফ্ফার ও তার ছেলে আনোয়ার, জামতলি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হোসেন এবং জিয়াউর রহমান। তার মধ্যে আব্দুল গাফ্ফার এনজিও সংস্থা এমএসএফের বেতনধারী কর্মী। স্থানীয়দের ভাষ্য, শুধু এই চার রোহিঙ্গা নয়, এ রকম অসংখ্য অপরাধী এসব বিতর্কিত বিদেশী এনজিওগুলোর আশ্রয়েপ্রশ্রয়ে বেড়ে উঠছে। সময় থাকতে ওদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা দরকার। না হলেও চাকরির আড়ালে তারা দেশবিরোধী কর্মকা-ে জড়াতে পারে। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক আলী হোসেন জানান, এনজিওগুলোর চাকরিতে স্থানীয়দের প্রাধান্য দেয়ার কথা। সেখানে উল্টো রোহিঙ্গাদের চাকরি দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কি করা যায়-দেখবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
×