ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ৮০ ব্যাংকের আবেদন জমা পড়েছে

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

আরও ৮০ ব্যাংকের আবেদন জমা পড়েছে

রহিম শেখ ॥ দেশে বর্তমানে ৫৭ বাণিজ্যিক ব্যাংক চালু রয়েছে। এই অবস্থায় আরও ৮০ নতুন ব্যাংকের আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদনকারীর মধ্যে আছেন সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা ও প্রবাসীরা। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা বর্তমান সরকারের সময়কালে লাইসেন্স পাওয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। শুধু ব্যক্তি নয়, নির্দিষ্ট পেশার মানুষদের জন্যও নতুন ব্যাংকের আবেদন করা হয়েছে। যেমন- বাংলাদেশ বিমান, নৌবাহিনী ও পুলিশ। তবে এসব আবেদনের মধ্যে আপাতত নতুন তিনটি ব্যাংক অনুমোদন দিতে চায় অর্থমন্ত্রণালয়। এদের অনুমোদন দেয়ার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠিও পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। ব্যাংক তিনটি হচ্ছে ‘বাংলা ব্যাংক’, ‘পিপলস ইসলামী ব্যাংক’ ও ‘কোরিয়া-বাংলা ব্যাংক’। সরকার মনে করে, অর্থনীতি চাঙ্গা করতে আরও ব্যাংক প্রয়োজন। তবে অর্থনীতিবিদরা বিষয়টি মানতে রাজি নন। তারা বলছেন, এ মুহূর্তে নতুন ব্যাংককে লাইসেন্স দেয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় বিদ্যমান ব্যাংকগুলোই যথেষ্ট। এগুলোর কর্মক্ষমতা বাড়ানোর দিকেই বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত। জানা গেছে, নতুন ব্যাংকের জন্য ২০১১ সালে আবেদন চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। জমা পড়ে ৩৭ আবেদন। সরকারের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে নয়টি ব্যাংকের অনুমোদনও দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক নয়টি হলো-মেঘনা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, দ্য ফার্মার্স ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক। যদিও আর কোন ব্যাংকের অনুমোদন না দেয়ার পক্ষেই মত ছিল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির। ২০১২ সালে ওই নয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আধা-সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জন্য সীমান্ত ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছে। নতুন চালু হওয়া ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে বিআইবিএম থেকে সম্প্রতি একটি জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, ৯ ব্যাংকের অধিকাংশই খুব একটা ভাল নেই। কোন কোন ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা সঙ্কটে রেখে বেপরোয়াভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইবিএম-এর অধ্যাপক মোঃ ইয়াসিন আলী জনকণ্ঠকে বলেন, সবশেষ ৯ ব্যাংককে অনুমোদন দেয়ার দরকার ছিল না। এগুলো এখনও প্রতিযোগিতায় টিকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে ও বলার মতো প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। তাই নতুন ব্যাংক চালুর কোন যৌক্তিকতা নেই। তবে যেসব এলাকায় ব্যাংক নেই সেসব স্থানে বিদ্যমান ব্যাংকের শাখা খোলা যেতে পারে। সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে ৮০টি নতুন ব্যাংকের আবেদন জমা পড়ে আছে। যদিও কোনটিকেই এখনও অনুমোদন দেয়া হয়নি, তবুও প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা বর্তমান সরকারের সময়কালে লাইসেন্স পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। এ বছর এমনি একটি জরিপ পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। এতে দেখা যায়, ৯৫ শতাংশ ব্যাংকার মনে করেন, দেশে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নতুন কোন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বাংলাদেশে এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যাংক আছে। তাই কয়েকটি ব্যাংক কমিয়ে দেয়া উচিত। তবে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, নতুন ব্যাংক চালুর বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। দেশের অনেক মানুষ এখনও ব্যাংকিং সেবার বাইরে আছে। বর্তমানে যেসব ব্যাংক প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না সেগুলোকে একীভূত করতে আমরা আইন হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট কাটাতে সরকার কাজ করছে। নতুন ব্যাংক দেয়া প্রসঙ্গে সোমবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে নতুন আরও তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। তবে এ সময় তিনি ব্যাংকগুলোর নাম উল্লেখ করেননি। জানা গেছে, ‘পিপলস ইসলামী ব্যাংক’ নামে একটি ব্যাংকের অনুমোদন পাচ্ছেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এম এ কাশেম। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আর ‘বাংলা ব্যাংকের’ আবেদন করেছেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা একটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন চেয়েছি, কিন্তু এখনও সাড়া পাইনি। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আবেদনকৃত ব্যাংকের লাইসেন্স দেবে। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এছাড়া অনুমোদন পেতে যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যৌথ উদ্যোগে ‘কোরিয়া-বাংলা ব্যাংক’। তবে এই ব্যাংকের বিনিয়োগকারী কারা তা এখনও জানা যায়নি। ব্যাংক তিনটি অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকও অনুমোদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেন, নতুন ব্যাংক অনুমোদনের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সুপারিশ থাকতে পারে। নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার জন্য এ মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে বড় কোন চাপ নেই বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা। তিনি বলেন, এর আগে নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সরকারকে জানানো হয়েছে। এর পর সরকারের পক্ষ থেকে নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার জন্য কোন সুপারিশ এলে সে আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্দিষ্ট পেশাজীবীদের জন্য চালু হয়েছে কয়েকটি ব্যাংক। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ছাড়া কোনটিই সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। এসবের পরও বাংলাদেশ পুলিশের জন্য শীঘ্রই একটি ব্যাংককে অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা পড়া আবেদনের তালিকা অনুযায়ী, পৃথক ব্যাংকের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ বিমান ও নৌবাহিনী। এছাড়া সরকারী চাকরিজীবীরা নিজেদের কল্যাণে ‘সমৃদ্ধি সোপান ব্যাংক’ থেকে লাভবান হতে চান। কোন নির্দিষ্ট পেশার মানুষদের জন্য ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার কোন যুক্তি নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম। তার মতে, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ১৯ ক্যাডারের চাকরিজীবীরা পৃথক ব্যাংকের অনুমোদন চাইবে। এটা এখনই বন্ধ করা উচিত।
×