ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

ঢাকার দিনরাত

দুদিনের জন্য বন্দরনগরী চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। বার বার ঢাকার তুলনা চলে আসছিল। চট্টগ্রামেও ঢাকার মতো ধুলো আর যানজট, রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিং চলছে। শুধু দুটো কথা বলেই চট্টগ্রাম প্রসঙ্গের ইতি টানবো। এক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নিচে ‘বাতিঘর’ নামের সুবিশাল বইয়ের দোকানটিতে দেখলাম, শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী এমনকি মধ্যবয়সী বেশ কিছু পাঠক মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে। বসার জায়গা নেই, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আধ ঘণ্টা এক ঘণ্টা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য অতীব সুন্দর! ঢাকায় এমন দেখি না। দুই, জামাল খান সড়কের পেভমেন্টে পরিকল্পিতভাবে বসবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি কংক্রিটের বেঞ্চির সঙ্গেই বাতি রয়েছে। বেশ অনেকটা জায়গা নিয়ে এই বসবার আয়োজন। শনিবার সন্ধ্যার পর এখানে রীতিমতো হাট বসে গেল। দলে-দলে তরুণ-তরুণীরা বসে আড্ডা জমাচ্ছে। কোন ধরনের দ্বিধা বা সংকোচ নেই। প্রাণবন্ত পরিবেশ। ঢাকায় সন্ধ্যেবেলা টিএসসি যেমন জমজমাট, এই জায়গাটিও সেরকমই প্রাণবন্ত। ঢাকার কোথাও কি তরুণদের এ ধরনের দল বেঁধে আরাম করে বসবার সুবন্দোবস্ত রয়েছে? সব সড়কই গাড়ির বিশ্রামাগার ঢাকায় প্রথম ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার শুরু হয় কখন? ইতিহাসের পাতা থেকে আমরা কী জানতে পারি। নিশ্চিত তথ্য পাওয়া না গেলেও সেটি সম্ভবত ১৯০৪ সালে। কেননা সে বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছেন স্ত্রী লেডি মেরি কার্জনকে নিয়ে। তাদের আগমন উপলক্ষে মনোরমভাবে সাজানো হয় নবাবের শাহবাগের বাগানবাড়ি। আর তড়িঘড়ি করে নবাব বেশ কয়েকটি গাড়ি কিনে আনলেন কলকাতা থেকে। ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য ধনাঢ্য ব্যক্তি ও জমিদারের মতো এ অঞ্চলের ধনী ব্যক্তিরাও নিজেদের আভিজাত্য দেখানোর নতুন কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন অটোমোবাইলকেই। অর্থাৎ বিশ শতকের প্রথম থেকেই ঢাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি ও জমিদাররা তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাড়ি কেনা শুরু করেছিলেন। আর প্রথম থেকেই দেখানোটা গাড়ি ব্যবহারের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। তবে ঢাকার সাধারণ জনগণকে নতুন এই যন্ত্রটিতে চড়তে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও কিছুটা সময়। আর সেই সুযোগ এসে গেল ত্রিশের দশকে জনসাধারণের জন্য ট্যাক্সি সার্ভিস শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে গাড়ি ব্যবহার আরও বেড়েছে। প্রদর্শনী থেকে তা প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে। যদিও এখনও সেই প্রবণতা একেবারে নেই হয়ে গেছে এ রকম বলা যায় না। আর গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে বহু, বহুগুণ, প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে। আসলে পুরো নগর পরিকল্পনাই করা হয়েছে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে। হালের ফ্লাইওভারগুলোও তারই নিদর্শন। নগরে গণপরিবহনের তুলনায় নজর দেয়া হয়েছে ব্যক্তিগত পরিবহনে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিসংখ্যান অনুসারে, ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ। প্রাইভেট পরিবহন হিসেবে বিবেচিত যানবাহনের নিবন্ধনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, রাজধানীতে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় দেড় হাজার করে ব্যক্তিগত যানবাহন নতুন করে যোগ হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫৩টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি ঢাকার রাস্তায় নামে। ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলকারী ৬ শতাংশ মানুষ ঢাকার ৭৬ শতাংশ সড়ক দখল করে আছে। এখনো ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক গাড়ির নিবন্ধন হয়। এক হিসাবে দেখা গেছে, সারাদেশে যত ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে, তার ৭৮ শতাংশই চলে ঢাকার রাস্তায়। রাস্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা বেশি, গণপরিবহনের তুলনায় প্রাইভেট কার বেশি, ট্রাফিক আইন মানা হয় না ইত্যাদির সঙ্গে আরও একটা বড় সমস্যা সম্ভবত যত্রতত্র পার্কিং। রাজধানীতে যত্রতত্র ইচ্ছামতো পার্কিং করেন গাড়িচালক ও মালিকরা। সরকার বা সিটি কর্পোরেশন ঘোষিত প্রধান কিংবা ভিআইপি সড়ক থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার অলিগলি কিংবা অতিব্যস্ততম ফুটপাথÑ কোনটাই এসব অবৈধ পার্কিংয়ের স্থান থেকে বাদ পড়ছে না। খেয়ালখুশিমতো যখন তখন যে কাউকে যে কোন স্থানে গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নিতেও দেখা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি রাস্তায় ফেলে রেখে অফিস করেন বা ব্যবসায়িক কাজ সেরে আবার গাড়িতে চড়ে বসেন গাড়ির মালিকরা। যেন পার্কিংয়ের স্থানটিকে তারা নিজের কেনা জমি মনে করেই গাড়ি রেখেছেন। পার্কিংয়ের নিয়ম-কানুনের বালাই নেই। অবস্থা দেখে মনে হয়, পুরো রাজধানীই যেন তাদের গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান। পার্কিংয়ের বিড়ম্বনার কথা বলে শেষ করে যাবে না। তেজগাঁওয়ের একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগ করার জন্য বন্ধুর গাড়িতে বেশ সকালে উত্তরা থেকে সেখানে পৌঁছে যাই। আয়োজকদের কার্যালয়ের প্রাঙ্গণেই সে অনুষ্ঠান, অথচ পার্কিংয়ের সুযোগ বা ব্যবস্থা নেই। ওই ভবনের একটিমাত্র ফটক খোলা। সেখানে আগে থেকে দুটো গাড়ি রাখা আছে। কাছেই ভবনের প্রাচীর-ঘেঁষা রাস্তার ওপর দুটো বেশ দামী গাড়ি পার্ক করা। তার পাশে খালি জায়গা। তিনজন পুলিশ ঘোরাফেরা করছে। বন্ধুটি গাড়ি থামিয়ে জানালার কাঁচ নামিয়ে অফিসারের কাছে জানতে চাইলেন কোথায় গাড়ি পার্ক করা যায়? ওই দুটো গড়ির পাশে কি রাখা যাবে? পুলিশ কর্মকর্তা হাসলেন নিঃশব্দে, বললেন আমরা অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য গাড়ি দুটোকে লক করে দিয়েছি। তাকিয়ে দেখি দুটো গাড়িরই সামনের চাকায় দেড় ফুট মাপের বক্সমতো কী যেন আটকে আছে। বুঝলাম ওটাই তালা। তার মানে শুক্রবার ছুটির দিনে ফাঁকা রাস্তার পাশে গাড়ি দুটো যারা রেখে গেছেন তাদের ভোগান্তি আছে। ভবনটির উল্টোদিকেই একটি বেসরকারী ব্যাংকের কার্যালয়। প্রধান ফটক লাগানো, তার ফাঁক দিয়ে দেখা গেল বেশ কিছু গাড়ি সেখানে পার্কিং করা। দারোয়ান/কেয়ারটেকারকে অনুরোধ করলাম এক ঘণ্টার জন্য বন্ধুর গাড়িটি রাখা যায় কিনা। একজন নিমরাজি হলেও অপরজন কঠোরতার সঙ্গে না বলে দিলেন। এত দূর থেকে এসে অনুষ্ঠান না দেখেই চলে যাব? হঠাৎ মনে পড়ল কাছেই একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের বিরাট কার্যালয়। সেখানে রাখা যেতে পারে। গিয়ে দেখি সেখানে প্রচুর গাড়ি। খালি জায়গাগুলোয় নোটিস লাগানো আছে, সেসব স্থান উর্ধতন কমকর্তাদের জন্য নির্ধারিত। যা হোক, শেষ পর্যন্ত একটা জায়গা বের করে দিলেন সিকিউরিটি। ঢাকায় এখন অনুষ্ঠানের আয়োজকরা পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না করেই লোকজনকে আমন্ত্রণ জানান। একমাত্র আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফোক ফেস্টের সময়েই দেখেছি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিতে যে, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। সেজন্য কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশও করেছেন। অবশ্য আয়োজক কর্তৃপক্ষ ও স্পন্সরদের কিছু গাড়ি রাখার জন্য স্টেডিয়ামের উত্তর দিকে বেশ খানিকটা জায়গা নির্দিষ্ট করা ছিল। গাড়ি রাখার জায়গা না থাকা মানেই হলো আমন্ত্রিত অতিথিকে নিজেই নিজের গাড়ি রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। হয় গাড়ি কাছাকাছি কোন নিকটজনের গ্যারাজে পাঠিয়ে দিতে হবে অথবা সামনের রাস্তার ওপরেই রাখতে হবে। অথবা গাড়ি ফেরত চলে যাবে বাড়িতে। পরে আবার এসে নিয়ে যাবে। কিংবা গাড়ির আরোহী বাড়ি ফেরার ভিন্ন ব্যবস্থা নেবেন। সবগুলোই ঝক্কির। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ দ্বিতীয় উপায়টিই বেছে নেন এবং ‘মন্দ কপাল’ হলে মামলা খান। যেমন তেজগাঁওয়ের সামনে গাড়ি রাখার জন্য দুই গাড়িঅলার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হলো। আইন ভাঙার সংস্কৃতি প্রবল হলেও সেটির জন্য দণ্ড ভোগ করতে হয় খুব কম সংখ্যক লোককেই। সবখানে পুলিশ কড়া আইন প্রয়োগ করেন না। ফাঁকা রাস্তায় ছুটির দিনে দুটো গাড়ি রাখা থাকলে কারও ক্ষতি হওয়ার বা অসুবিধা হওয়ার সুযোগ নেই। তবু সেখানে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছেন কড়াকড়িভাবে। অথচ চোখ-কান খোলা রাখলেই দেখবেন কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে, মানে শনি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকার সবগুলো প্রধান সড়ক এবং তার সংলগ্ন শাখা-সড়কগুলোতে বেশ কিছু গাড়ি সবসময়েই পার্ক করা আছে। সাত রাস্তার মোড় থেকে সেদিন রিক্সায় পূর্ব দিকের সড়কে ঢুকে উত্তর দিকে বেশ কিছুটা পথ পেরিয়ে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে নভো টাওয়ারে গিয়েছিলাম। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। অফিস সময় পেরিয়ে শেষ, টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। যানজট আর কাকে বলে। রাস্তার দুই পাশেই সারি সারি প্রাইভেট কার পার্ক করা। ফলে রাস্তা অনেকটাই সরু হয়ে গেছে। বলতে পারি রাস্তা প্রস্থ কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। যানবাহনের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত। ফলে ওই সরু রাস্তা গলিয়ে গাড়ি চলতে গিয়ে বার বার থেমে গেছে। বলাবাহুল্য অজ্ঞাত কারণে ট্রাফিক পুলিশ এই অবৈধ পার্কিংয়ের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয় না। ফলে অবৈধ গাড়ি পার্ক করার খেসারত দিতে হয় এই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনকে। ঢাকার অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে ঠগ বাছতে গা উজাড় হওয়ার মতো পরিস্থিতি হবে। খুব কম সংখ্যক বাণিজ্যিক ভবনেরই নিজস্ব গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে। একটি আধুনিক শহরের সিস্টেমে প্রয়োজনীয় গাড়ি পার্কিংেয়ের ব্যবস্থা থাকাটাই সঙ্গত। গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে ঢাকার অব্যবস্থাপনা/অপারঙ্গমতা প্রতিদিনই রীতিমতো জটিল সমস্যা তৈরি করছে। বিশিষ্ট শিল্পীর স্টুডিওতে শীতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়, সরগরম হয়ে ওঠে ঢাকার মঞ্চ, গ্যালারি আর মিলনায়তনগুলো। দলীয় বা সাংগঠনিক পরিবেশনা এ সময়ে যেন প্রাণ পায়। কিন্তু যারা নিভৃতে সাধনা করেন, নিজের শিল্প এলাকায় নিবেদিত থাকেন তারা কি শীতে বেশি সক্রিয় থাকেন, নাকি অন্যরকম কিছু? সেদিন দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পীর স্টুডিওতে গিয়েছিলাম। তার ব্যস্ততা দেখে মনে হলো কী শীত কী গ্রীষ্ম তিনি সদা কর্মশীল। দেশে ছবি বিক্রির বাজার নিহায়ত ছোট নয়। আগে যেখানে বিদেশী বায়ার আর স্বদেশী শিল্পপতিরা ছবি কিনতেন, এখন সেখানে মধ্যবিত্তও ছবি কিনছেন। শিল্প-শিক্ষার্থীরাও ছবি বিক্রি করে থাকেন। স্বল্প আয়ের চাকুরেরা তাদের ছবির বড় ক্রেতা। যাহোক, শিল্পী জামাল আহমেদের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। চারুকলা ইনিস্টিটিউটের এই শিক্ষকের ছবির চাহিদা রয়েছে। বিদেশের তকমা লাগানো, মানে দীর্ঘকাল বিদেশে বসে শিল্পচর্চা করা শিল্পীদের কারও কারও ঈর্ষণীয় পরিমাণে ছবি বিক্রি হয়। অন্যদিকে শতভাগ দেশে অবস্থানকারী সার্বক্ষণিকভাবে শিল্পে নিবেদিত চিত্রকরদের মধ্যে যাদের ছবি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় তাদের ভেতর আছেন এই জামাল আহমেদ। তিনি কোন রাখঢাক করেন না, সরাসরিই বলেন, আমি ছবি বিক্রি করেই চলি। তাই ক্রেতাদের পছন্দকে আমার মূল্য দিতে হয়। ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই, অর্থাৎ চাহিদা ও সরবরাহের নীতি অনুযায়ী পণ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। আর্টও একটি পণ্য বটে! অসাধারণ পণ্য। কিন্তু আর্টিস্ট ‘পণ্য’ তৈরি করতে গিয়ে কি স্বকীয়তা/ স্বাধীনতা বিসর্জন দেন? এমন একটি প্রশ্ন শিল্প-সমঝদারেরা করে থাকেন। আসলে শিল্পে কম্প্রোমাইজ বলে একটা টার্ম রয়েছে। অনেক শিল্পীই অনেক সময় এই সমঝোতা করেন। শিল্পী জামাল আহমেদ বললেন, অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাদের পন্যের প্রসারের বা প্রদর্শনের প্রবণতা থেকে থিম নির্দিষ্ট করে দিয়ে ছবি নিতে চান। সেসব কাজেও আমি নিজের স্টাইল আর বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার চেষ্টা করি। প্রত্যেক শিল্পীরই স্বপ্ন ও কল্পনার একটি স্থান থাকে। সেখানে তিনি বিচরণ করেন। সমাজ-সংসার-বাজারের প্রয়োজন ভুলে সম্পূর্ণ নিজের শিল্পীসত্তার আকাক্সক্ষা অনুযায়ী ছবি আঁকেন। এমন একটি সিরিজের ছবি তিনি আঁকছেন বেশ ক’বছর ধরে। দুটো ছবি সম্পূর্ণ করেছেন, আর দুটো প্রায় সম্পূর্ণ। মোট চারখানা ছবি। চারটিই বিশেষ ধরনের ছবি। খানিকটা সঙ্গোপনেই রাখা আছে স্টুডিওর অভ্যন্তরে। নিয়ে এলেন দেখানোর জন্যে। ভূচিত্র, নিসর্গ, প্রকৃতির ছবি তিনি অনেক এঁকেছেন। নারীসৌন্দর্যের চিত্রকর্মও কম করেননি। ন্যুড ছবিও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। এই চারটি ছবির প্রত্যেকটিতে নারীর নগ্নতা তীব্র ও প্রকাশ্য নয়, সেখানে আড়াল আছে। এইসব ছবিতে ঘোড়ার সঙ্গে নারী দৃশ্যমান। একটি ছবিতে সেই ঘোড়া বেশ রাজকীয় মাথা উর্ধমুখী করে রেখেছে, পেছনের দুটো পায়ের কম্পোজিশন দেখবার মতো। নারীও যেন ঘোড়াকেই অনুসরণ করেছে তার দেহভঙ্গিমায়। এইসব ছবিতে চোখ আটকে থাকে, মন বহুদূর চলে যায়। ২৬ নবেম্বর ২০১৭ [email protected]
×