ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরপাড়ায় হামলার ঘটনায় জবাবদিহিতা করতে হবে ॥ নাগরিক সমাজ

প্রকাশিত: ০১:২০, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

ঠাকুরপাড়ায় হামলার ঘটনায় জবাবদিহিতা করতে হবে ॥ নাগরিক সমাজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার বিষয়ে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতা করতে হবে বলে দাবি করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। এরকম হামলা কোনভাবেই কাম্য নয়। যা দেশের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না বলেও মনে করেন তারা। তাছাড়া প্রতিবারই একই ধরণের কৌশলে হামলা হচ্ছে। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা ছবি দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করতে না পারা ও বিচার না হওয়ায় বারবার এ ধরণের ঘটনার পুণঃরাবৃত্তি আমরা দেখছি। সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে রংপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ দাবি করেছে নিজেরা করি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, ব্লাস্ট, বেলা, এএলআরডি, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলন ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সমন্বয়ে গঠিত নাগরিক সমাজ। নাগরিক সমাজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর রংপুরে নাগরিক সমাজ নানা অনুসন্ধান চালায়। এ সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। এ ঘটনায় উসকানিদাতা ও সংশ্লিষ্ট লোকদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত দোষীদের নাম পরিচয় বেরিয়ে আসবে বলেও মনে করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, হামলার ঘটনা পুরোপুরি পরিকল্পিত। সাজানো। ধর্ম অবমাননার অযুহাত তোলে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রতিবেদনে ছয়টি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও মহলকে একটি নিরপেক্ষ স্বচ্ছ কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করে চিহ্নিত করা ও দ্রুত বিচারের আওতায় আনা। পুলিশ বা প্রশাসন কেন আগাম প্রয়োজনীয় সব রকমের ব্যবস্থা নেয়নি, তা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সব সাম্প্রদায়িক ঘটনার অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে হবে। এ ধরনের ঘটনার দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। হামলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর এ ধরনের সহিংস ঘটনা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। কারণ, আগে এ ধরনের ঘটনার বিচার বা শাস্তি হয়নি। ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সবগুলো হামলার ধরন একই। এটাকে একটি ট্রাডিশন বানানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু যারা ফেসবুকে এ ধরনের মিথ্যা পোস্ট দিচ্ছে, সরকার তাদের চিহ্নিত করতে পারছে না। তাদের যদি চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা যেত, তাহলে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কমতো। তিনি আরও বলেন, ‘হামলার সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জড়িত থাকলেও লুটপাটের সময় সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে এক শ্রেণির নেতাকর্মীকে জড়িত থাকতে দেখা গেছে। নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, প্রশাসনের লোকদের বিষয়ে তদন্ত করে তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসাইন বলেন, অমুসলিমদের সংখ্যা এ দেশে যত কমবে, দেশের অবস্থা তত খারাপ হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ প্রমুখ। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার হরকলি ঠাকুরপাড়া এলাকার মৃত খগেন রায়ের ছেলে টিটু রায়ের বিরুদ্ধে ৫ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার স্ট্যাটাস দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১০ নভেম্বর হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু বাড়ি পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এরপর পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হন। সাত পুলিশ সদস্যসহ ২৫ জন আহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার কথা বলে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে পাবনার সাথিয়া (২০১৩ ), কক্সবাজারের রামু (২০১২) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে (২০১৬) একই ধরনের গল্প তৈরির প্রবণতা দেখা গেছে। প্রতিটি ঘটনায় কিছু ব্যতিক্রমধর্মী প্রগতিশীল দল বাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে এসব হামলা চালানো হয়েছে। লিখিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়- রংপুরের ঘটনার পরে পুলিশ প্রথমে জানিয়েছিল, টিটু রায়ের ফেসবুক আইডি তার নিজের (টিটু রায়ের) নয়। অন্য কেউ এ আইডি ব্যবহার করে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও একই ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে টিটুকে গ্রেফতার করে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ৮ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এসময় টিটু রায় দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে আমরা জানতে পারি। এখানে নতুন একটি জজ মিয়া নাটক তৈরি হয়েছে কিনা আমরা নিশ্চিত নই। কারণ অতীতে আমরা যাদের বিরুদ্ধে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগ জেনেছি, তারা নিরপরাধ হয়েও জেল খেটেছেন কিংবা নিখোঁজ হয়েছেন।
×