ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাউফল উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারী টাকা অপচয়ের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

বাউফল উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারী টাকা অপচয়ের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ২৬ নবেম্বর ॥ বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারী টাকা অপচয়, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা ৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা পরিষদেও উন্নয়নের নামে তিনি সরকারী টাকা অপচয় করেছেন। গত অর্থবছরে বাউফল উপজেলা পরিষদের ইউটিডিসি ভবন-১ ও ভবন-২ এর সংস্কারে নামে ৩৪ লাখ টাকা অপচয় করেছেন অথচ উপজেলা পরিষদের নতুন ৪তলা ভবন নির্মাণের জন্য সরকার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে এর কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি উপজেলা পরিষদের মধ্যে ও হল রুমের পেছনে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে মহিলাদের নামাজের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করেন আজ পর্যন্ত সেখানে কোন মহিলাকে নামাজ পড়তে দেখা যায়নি। বর্তমানে মসজিদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের সামনে বড় পুকুরে মুসল্লিদের ওজু ও গোসল করার জন্য তিনটি পাকা ঘাটলা থাকলেও তিনি ওই মসজিদের জন্য আবার ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ওজুখানার নির্মাণ কাজ করছেন। চীফ হুইপ আসম ফিরোজ এমপি জানান, ওজুখানার স্থলে শীঘ্রই দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারীভাবে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি সিসি ব্যাডমিন্টন কোর্ট থাকলেও তিনি সেখানে আবার প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন সিসি ব্যাডমিন্টন কোর্ট করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান তার বাসভবন সংস্কার, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও মাটি ভরাটের নামে প্রায় ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়েছেন অথচ এই পরিমাণ বরাদ্দ দিয়ে একটি নতুন দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা যেত। উপজেলা পরিষদ পুকুরের উত্তর পাড়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হলেও দুই মাস যেতে না যেতেই ভেঙ্গে পড়েছে। এ ছাড়াও ওই পুকুরের মধ্যে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি আরসিসি ফোয়ারা নির্মাণ কাজ শুরু করলেও বর্তমানে তা পরিত্যক্ত। এ ছাড়াও উপজেলা মৎস্য অফিসের জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে গাইড ওয়াল, বাউন্ডারি ওয়াল ও রাস্তা নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যান হস্তক্ষেপ করে টেন্ডার ছাড়াই সাড়ে ৯ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে কোটেশনের মাধ্যমে মোসলেম উদ্দিন নামের বিএনপি সমর্থককে দিয়ে কাজটি করাচ্ছেন অথচ ৫ লাখ টাকার ওপরে কোটশনে কাজ করতে হলে এলজিইডির চীফ ইঞ্জিনিয়ারের অনুমোদন দরকার। সেট নেয়া হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমানের খাম-খেয়ালিপনার কারণে ৪৬টি সরকারী প্রাইমারী স্কুলের দফতরির বেতন বাবদ প্রথম দফায় ৮৮ লাখ টাকা ফেরত চলে যায়। দ্বিতীয় দফায় ৪৪ লাখ টাকা ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের রয়েছে এন্তার অভিযোগ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিভাজন করতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে তিনি প্রার্থী দিয়েছেন। যদিও একটি ছাড়া বাকি ১৪টি ইউনিয়নে তার প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। ওই সময় উপজেলা পরিষদ এলাকায় কিছু লোকের হাতে তিনি নাজেহাল হন অথচ ওই ঘটনায় তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হাওলাদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম ফারুকসহ ২০-২৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ ছাড়াও তার অফিস কক্ষে অপ্রীতিকর একটি ঘটনার জের ধরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম ফারুক, পৌর যুবলীগের সভাপতি মামুন খান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজি সিকদারের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছেন। তিনি দলের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আসম ফিরোজের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারী কোন টাকা অপচয় করা হয়নি কিংবা কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। কেউ প্রমাণ করতে পারলে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেব।
×