ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

বই পড়ে মনে রাখবেন কী করে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

বই পড়ে মনে রাখবেন কী করে

পৃথিবীর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে তথ্য, মানুষের গল্প বৃদ্ধি পাচ্ছে, কল্পনাশক্তির বদৌলতে তৈরি হচ্ছে হাজার হাজার গল্প, উপন্যাস। লেখক বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। পত্রিকা-ম্যাগাজিনের সঙ্গে বড় হচ্ছে অনলাইন কমিউনিটিগুলো। ব্লগ, ই-ম্যাগাজিন, ই-নিউজ সহ আরও হাজার হাজার মাধ্যম কাজ করছে মানুষের কাছে সঠিক তথ্য সংবলিত লেখা পৌঁছে দিতে। সারা পৃথিবীজুড়ে অবস্থান করা কল্পনাপ্রবণ লেখকদের সংখ্যাও কম না। তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত আর নিজেদের কল্পনাশক্তিকে পুঁজি করে লিখে যাচ্ছেন নানা কল্প-কাহিনী। অবসরে বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি পাঠকদের। এক জায়গায় এসে এই পাঠকরা দু’ভাগ হয়ে যাচ্ছে। একভাগ কোন একটি বই পড়ার পর বিস্তারিত মনে রাখতে পারে। আরেক ভাগ পড়ার পর আস্তে আস্তে বইয়ের প্রত্যেকটি জিনিস ভুলে যায়। এমনকি বইয়ের শিরোনামও! প্রয়োজনের খাতিরে পড়া বইগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো ব্যাপারেও তাদের ধারণা থাকে না। ‘Quality matters more than quantity কথাটি কোন বই পড়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অমনোযোগী হয়ে কোন একটি লাইব্রেরির অর্ধেক বই পড়ে ফেলার চাইতে মর্ম উপলব্ধি করে শুধুমাত্র একটি বই আত্মস্থ করাও উত্তম। ‘স্পিড-রিডিং‘ ধারণাটিতে এড়িয়ে চলুন। দ্রুত পড়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে নিয়মিত বই পড়া। কোন বইয়ের সংক্ষেপিত সংস্করণ না পড়ে পুরো বইটি পড়ুন। এতে আপনার প্রয়োজনীয় কোন তথ্য ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা শূন্য শতাংশে এসে পৌঁছাবে। নিজের কাছে বিরক্তিকর মনে হওয়া বইগুলোকে এড়িয়ে চলুন। কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই। ব্যাপারটা এমন নয় যে, পড়ার জন্য আপনাকে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বা অধিকাংশ পাঠকদের দ্বারা সমাদৃত বইটি বাছাই করতে হবে। যেহেতু আপনি কোন প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স সম্পন্ন করার জন্য বইটি পড়তে যাচ্ছেন না, সেহেতু ইচ্ছেমতো বাছাই করুন। আপনার আগ্রহের বিষয়গুলোর ব্যাপারে মনোযোগী হোন। তবে হ্যাঁ, অনুবাদ পড়ার ক্ষেত্রে আগে দেখুন ক’জন অনুবাদক দ্বারা অনুবাদ সম্পন্ন করা হয়েছে। এরপর পাঠক সমাজের মতামতের উপর ভিত্তি করে আপনি সবচেয়ে ভালটা বাছাই করতে পারেন। ২. একটি বই পড়ার পূর্বে বইটির ব্যাপারে ধারণা নিতে চেষ্টা করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, বইটির বিষয়বস্তু কী? কী উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে? ওই সময়টাতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা কেমন ছিল? কী কী বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে? সে সময় কোন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা বা উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেছিল কিনা? এবং সঙ্গে সঙ্গে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। এতে করে পড়ার সময় অনেক অপ্রত্যাশিত প্রসঙ্গ খুব সহজেই বুঝে উঠতে পারবেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন বইটি পড়ার জন্য বাছাই করেছেন? বিনোদনের জন্য, নাকি কোনকিছু বা কারও ব্যাপারে জানার জন্য? কর্মক্ষেত্রে উন্নতির জন্য, নাকি নতুন কোন দক্ষতা অর্জনের জন্য? আপনার অবশ্যই ধারণা থাকতে হবে, আপনি কী ধরনের জিনিস বাছাইকৃত বইটি থেকে পেতে যাচ্ছেন। আপনি অবশ্যই হরেক রকম অপ্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে আগ্রহী নন! নন-ফিকশনাল, দক্ষতা বৃদ্ধির বইগুলো পড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা, সম্পাদকের কথা, গ্রন্থবিবরণী, তথ্যসূত্রগুলোতে চোখ বুলাতে পারেন। একটি বই লেখার জন্য লেখককে অসংখ্য বই পড়তে হয়। নানা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। আর এই বিষয়বস্তুগুলোই উপরোক্ত জায়গাগুলোতে উল্লেখ করা থাকে। আগ্রহের বিষয়টির উপর আরও বেশি দক্ষ হওয়ার জন্য এসব বেশ সাহায্য করে থাকে। আপনার পরিস্থিতি বিবেচনা করে বই বাছাই করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি সামনের ছুটিতে লাদাখ যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সেই সুবাদে শঙ্কু মহারাজের ‘লাদাখের পথে’ পড়তে পারেন। কোন কিছুতে অভ্যাস তৈরির চেষ্টা করছেন, তাহলে চার্লস ঢুহিগের ‘পাওয়ার অফ হ্যাবিট’ পড়তে পারেন। যদিও পারিপার্শ্বিক অবস্থা, নিজস্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সব সময় বই বাছাই করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে বর্তমানের চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও ভালভাবে মোকাবেলা করার জন্য, পরিস্থিতিগুলো আরও ভালভাবে সামাল দেয়ার জন্য এটি বেশ কার্যকর উপায়। পড়ার সময় যা করতে হবে কোনকিছু মনে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সেই বিষয়াদির উপর নোট রাখা। কোনকিছু পড়ে মনে রাখার ব্যাপারেও এই পদ্ধতিটি ফলদায়ক। যা পড়ছেন তার উপর সংক্ষিপ্ত আকারে নোট করে রাখুন। নোট রাখার জন্য নিজের পছন্দের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। হয়ত ছোট প্যাড খাতা ব্যবহার করে ক্রমানুসারে প্রত্যেকটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো লিখে রাখতে পারেন। অথবা একই কাজ ছোট ছোট কার্ড বা স্টিকি পেপারে লিখে বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ে বুকমার্ক আঁকারে রাখতে পারেন। ছোটকাল থেকেই আমাদের ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে যে, বইয়ে দাগ কাটা বা লেখালিখি করা যাবে না। কিন্তু আপনি যদি কোন বই মনে রাখতে বা আত্মস্থ করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে রাখতে হবে। নোট রাখার মাধ্যমে কাজটি করা গেলেও, নোট হারিয়ে যেতে পারে। কিংবা সময়ে-অসময়ে নোটটি ধারে-কাছে না-ও থাকতে পারে। তাই বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোতে পেন্সিল অথবা সাইনপেন দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে হাইলাইটার-কলমগুলোও বেশ কাজের। তাছাড়া বইয়ের বিভিন্ন অংশে আপনি আপনার মন্তব্য লিখে রাখতে পারেন। অথবা অন্য ভাষায় লেখা বই হলে, অপরিচিত শব্দগুলোর অর্থও সংগ্রহ করে লিখে রাখতে পারেন। এতে করে ‘মনে রাখতেই হবে’ অংশগুলো খুব ভালভাবে মনে গেঁথে যাবে। এছাড়াও দ্বিতীয়বার বইটি পড়তে গেলে আপনি খুব সহজেই পূর্বের না বোঝা বিষয়াদি খুব সহজেই বুঝে যেতে পারবেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অথবা অংশ পড়ার পর থামুন এবং সেই অংশের পরিষ্কার একটি চিত্র কল্পনা করার চেষ্টা করুন। চিত্রটি যত বেশি দৃষ্টিগোচর হবে, তত বেশি মনে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হবে। বইয়ের ধারণা, বিষয়াদিগুলোকে বাস্তব জীবনের ঘটনা, অন্য কোন বইয়ে উল্লিখিত অংশ, অথবা পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে সংযুক্ত করতে চেষ্টা করুন। এতে মনে থাকার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। বইটির ব্যাপারে মস্তিষ্কে নিজস্ব একটি ধারণা তৈরি করুন! নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করে নিজে নিজে উত্তর খোঁজার চেষ্টার মাধ্যমে ধারণাটি তৈরি করতে পারেন। যেমন- বইটি কি আপনার আদর্শের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে? বইয়ের কোন চরিত্রটি আপনার সবচেয়ে ভালো লেগেছে? বইয়ের লেখক উল্লিখিত বিষয়টির উপর যেসব তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো কি পর্যাপ্ত? আপনি কি এর চেয়ে ভাল কিছু লিখতে পারতেন? কোন অধ্যায়টা নিজের ব্যক্তিজীবনে প্রয়োগ করতে পারবেন? বইটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কি আপনার মধ্যে কোন পরিবর্তন এসেছে? এর মাধ্যমে বিভিন্ন আঙ্গিকে বইটিকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবেন। একটি বই আত্মস্থ করার জন্য আর কী প্রয়োজন।
×