ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদে উস্কানি ॥ মাদ্রাসার ৮ পাঠ্য বই বাতিলের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

জঙ্গীবাদে উস্কানি ॥ মাদ্রাসার ৮ পাঠ্য বই বাতিলের সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদে উস্কানি এবং নারী নেতৃত্ববিরোধী তথ্য সংবলিত মাদ্রাসার ৮টি পাঠ্যবই বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই মাদ্রাসার নতুন বছরের বই উপজেলায় চলে গেলেও সেগুলো প্রত্যাহার করে নতুন করে ছাপার পর আগামী এক জানুয়ারির আগে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো হবে। বইয়ে সংশোধন করা হবে উগ্রবাদী তথ্য ও লেখা। সংশোধন করা হবে নারীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর সকল লেখা। সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশনা অনুসারে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আলমগীর রাতে জনকণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, হ্যাঁ, আমরা আজই (গতকাল রবিবার) চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠিয়েছি। সকল বই উপজেলায় পৌঁছে গেলেও তা আবার তুলে এনে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন সচিব। জানা গেছে, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন ইবতেদায়ি (প্রথম শ্রেণী) থেকে দশম শ্রেণীর ইসলামিক ও আরবী বিষয়সমূহের পরিমার্জিত পাঠ্যবই পর্যালোচনা করে উগ্রবাদে উস্কানিমূলক উপাদানের অস্তিত্বের তথ্য উদঘাটন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগ। পাঠ্যবইয়ের বিশদ পর্যালোচনা প্রতিবেদন সরকারের উচ্চমহলের কাছে পাঠানো হয়েছে আগেই। বইয়ের লেখক নির্বাচন ও পরিমার্জন এবং প্রকাশ ও বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। আটটি বইয়ের মধ্যে নবম-দশম শ্রেণীর কুরআন মজীদ ও তাজবিদ, সপ্তম শ্রেণীর আল লুগাতুল আরাবিয়াতুল ইত্তেসালিয়াহ, অষ্টম শ্রেণীর আল লুগাতুল আরাবিয়াতুল ইত্তেসালিয়াহ, নবম-দশম শ্রেণীর হাদিস শরীফ, সপ্তম শ্রেণীর হাদিস শরীফ। নবম -দশম শ্রেণীর কুরআন মজীদ ও তাজবিদ বইয়ের ৪২৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘একজন নেতা হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো পুরুষ হওয়া। কোন মহিলা ইসলামী সমাজ বা রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিতে পারবে না। ঢাকার বাংলাবাজার ও যশোরের একাধিক সূত্রে জানা যায়, আটটি বই বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছে নোট-গাইড কোম্পানিগুলো। যশোরের শিক্ষক নেতা আবদুল মজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী নোট-গাইড চক্র। যশোরের মাওলানা নুরুল ইসলামের মালিকানাধীন হেলাল বুক ডিপোর এজেন্টরা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নানারকম উপঢৌকন দিয়ে থাকেন। এদিকে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত বিষয় সংযোজনের সঙ্গে যুক্ত ৩২ লেখক, সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। স্বাশিপের মতে, এসব লেখক জামায়াতপন্থী এবং একটি বিশেষ শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এই আটটি বই কেন পুনরায় ছাপা হলো এবং মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেয়া হলো তা খুঁজে বের করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের আহ্বান জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসা বোর্ড এবং ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও তাদের সিন্ডিকেট এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক একটি চক্র অত্যন্ত সুকৌশলে মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তকে অপ্রাসঙ্গিক বিভিন্ন অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এই ষড়যন্ত্র করেছিল। পাশাপাশি কোমলমতি শিশুদের জঙ্গীবাদে আকৃষ্ট করার জন্য এসব অপ্রাসঙ্গিক বিষয় পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশ করেছিল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্বাশিপ মাদ্রাসা ইউনিটের আহ্বায়ক আবু নাঈম মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য-সচিব মাওলানা কাজী জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক জেহাদী ও অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদৎ হোসেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন স্বাশিপ সহসভাপতি প্রফেসর মোঃ সাজিদুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান পান্না, হরিচাঁদ ম-ল সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোনতাজ উদ্দিন মর্তুজা, অধ্যক্ষ মোকসেদুর রহমান, অধ্যক্ষ তেলোয়াত হোসেন খান, মাদ্রাসা ইউনিটের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাওলানা আঃ রাজ্জাক জেহাদী, মাওলানা শাহাদাৎ হোসাইন ও অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম।
×