ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মানবিক মমত্বের বার্তাবহ ‘জবর আজব ভালবাসা’

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

মানবিক মমত্বের বার্তাবহ ‘জবর আজব ভালবাসা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্রমশই কমছে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ব। কংক্রিটের শহর ঢাকায় সেই মানবিক ভালবাসার অভাবটা যেন আরও তীব্র। সেই প্রেক্ষাপটে এ বছরের জুলাই মাসে মঞ্চে আসে ভালবাসার বার্তাবহ থিয়েটারওয়ালা রেপার্টরির নতুন নাটক ‘জবর আজব ভালবাসা’। আন্তন চেখভের নাটক অবলম্বনে এটি অনুবাদ করেছেন মোবারক হোসেন খান। তিনটি চরিত্রে সাজানো প্রযোজনাটির রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন সাইফ সুমন। রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকটির সপ্তম মঞ্চায়ন হলো। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক সাইফ সুমন জনকণ্ঠকে বলেন, এই নাটকে নেই কোন চিন্তার ব্যায়াম বা কোন বার্তা বা প্রশ্ন বা মতবাদের প্রাচুর্য। আছে মানুষের অন্তর্গত চিরন্তন অনুভূতি ভালবাসা এবং এর প্রকাশ। আছে শুধুই নিরেট আনন্দদানের প্রয়াস। শিল্পের কাছে তো ভোক্তা প্রথমত সেই আনন্দটাই চায়। ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া জীবনের উদ্যম হারানো এই শহরে চারদিকে সব যখন খড়খড়ে, তখন কোথায় খুঁজব একটু আনন্দ! অসৎ বাজার অর্থনীতির এই অস্থির সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সবাই যখন ছুটছেÑ তখন আমাদের নির্মল বিনোদন নেয়ার বা পাওয়ার তো আর কিছু নেই। মানুষের প্রতি ভালবাসাহীন এই সময়ে ভালবাসার কথাই বলতে এসেছি এ নাটকে এবং বোধকরি ভালবাসার কথা বেশি করেই বলা উচিত এখন। জবর আজব ভালবাসা নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, প্রয়াত স্বামীর শোকে সারাক্ষণ বিলাপ করতে থাকা গৃহকর্ত্রী প্রভার ওপর ভীষণ বিরক্ত বাসার কেয়ারটেকার সবুর। সবুরের কাছে জীবন মানে খাও-দাও-ফূর্তি করো। কিন্তু গৃহকর্ত্রী প্রভা মৃত স্বামীর প্রতি এতটাই কাতর যে, দিন-দুনিয়া ভুলে গৃহবন্দী জীবনযাপন করে চলেছে অনেকদিন হয়। সে বাসার বাইরে যাওয়া তো দূরের কথা, বাসায় কেউ এলে দেখা পর্যন্ত করে না। একদিন সন্ধায় কাঁটাবনের এ্যানিমেল ফুড ব্যবসায়ী নাভিদ বাসায় আসে প্রভার সঙ্গে দেখা করতে। নাভিদ জানায় প্রভার স্বামী তার দোকান থেকে নিয়মিত কুকুরের জন্য খাবার কিনত এবং বকেয়া বিল বাবদ তার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওনা আছে। প্রভা জানে তার স্বামীর প্রচ- কুকুরপ্রীতি ছিল। সে জানায় টাকাটা শোধ করে দেবে কিন্তু তাকে দুদিন সময় দিতে হবে। নাভিদ জানায় টাকাটা তার আজই লাগবে, কারণ কাল টাকা দিতে না পারলে ব্যাংক তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেবে। প্রভা জানায়, টাকা-পয়সার কোন হিসাব সে রাখে না। ম্যানেজার ছুটি থেকে দুদিন পর ফিরবে, তখন টাকা শোধ করে দেবে। কিন্তু এর আগে কোনভাবেই টাকা দেয়া সম্ভব না। নাভিদও নাছোড়বান্দা, সে টাকা না নিয়ে যাবেই না। একজন টাকা দিতে পারবে না, আরেকজন টাকা না নিয়ে যাবেই না। দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে নাভিদ বলে, এসব টাকা না দেবার কৌশল। নাভিদ মনে করে পৃথিবীর সকল নারী নির্বোধ এক প্রাণী যারা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য মায়াকান্নাই করতে জানে শুধু। এতে প্রভা আরও ক্ষেপে যায় এবং পুরুষদের কথা বলতে গিয়ে নিজের স্বামীর সব অপকর্মের বয়ান দেয়। তারপরও বলে সে তার স্বামীকে ভালবাসে।
×