ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙ্গুড়ায় গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে খামারিরা

প্রকাশিত: ০১:১২, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

ভাঙ্গুড়ায় গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে খামারিরা

সংবাদদাতা, ভাঙ্গুড়া, পাবনা ॥ ভাঙ্গুড়ায় ধানের খড়সহ অন্যান্য গো-খাদ্যের মূল্য অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় খামারি ও পশু পালনকারীরা। ফলে পশু পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন এ অঞ্চলের অনেক খামারি ও পশু পালনকারী। উপজেলা পশু সম্পদ অফিসের তথ্য মতে উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজার গবাদিপশুর খামার রয়েছে। গবাদি পশুর সংখ্যা মোট ৪৮ হাজার ২১২টি। যাদের খাদ্যের মূল চাহিদা কাঁচা ঘাস, খড় ও দানাদার খাদ্য। সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শে উপজেলার উচু অঞ্চলের আবাদি জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষ করা হয়। কিন্তু তা উপজেলার মোট পশুর চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য। তাই এসব পশুর মূল খাদ্য হচ্ছে স্থানীয় কৃষকের আবাদি জমির রোপা আমন ও বোরো ধানের খড়। কিন্তু এবছর বন্যায় অধিকাংশ অঞ্চলের বোরো ধানের খড়ের গাদা ও রোপা আমনের চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে খড়ের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একারণে বাহির থেকে আমদানী করা খড় ও দানাদার খাদ্যের উপর খামারিদের নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এ সুযোগে গো-খাদ্য ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করছেন খামারিদের কাছ থেকে। উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের খামারি নায়েব আলী জানান, প্রতি মণ খড়ের বর্তমান মূল্য ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। খড়ের পাশাপাশি ভুসি ও তিল, সরিষার খৈল প্রতি কেজিতে ৭ থেকে ১০ টাকা মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুসি প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, তিল ও সরিষার খৈল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুগ্ধ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও দাম বাড়েনি দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ এলাকার পশু পালনকারী ও খামারিদের পক্ষে গবাদি পশুপালন অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি। পারভাঙ্গুড়া গ্রামের হাসিনুর রহমান জনান, পশু পালনে অতিরিক্ত ব্যয় বাড়লেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম কম, যার কারণে পশু পালনকারী ও খামারিদের মাঝে এখন হাতাশা বিরাজ করছে। তিনি আরো জানান, উপজেলার নিম্নবিত্ত খামারিরা পশুকে বিকল্প খাদ্য হিসেবে কচুরিপানা, বিভিন্ন গাছের পাতাসহ নানা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়াচ্ছে। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের পশুসম্পদ। এ কারণে খামারিরা বাধ্য হচ্ছেন তাদের পশু সম্পদ অল্প দামে বিক্রি করে দিতে। এদিকে স্থানীয় খড় ব্যবসায়ীরা রাজশাহী, নওগাঁ ও চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন আঞ্চল থেকে খড় আমদানী করে নৌকাযোগে উপজেলার গুমানী ও বড়াল নদীর বিভিন্ন নৌ-ঘাটে বেশি দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন খামারিরা। অভিযোগের বিষয়ে খড় বিক্রেতারা জানান, এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে রোপা ও বোনা আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু আমন ধানের খড় পশু তেমন না খাওয়ায় পশুপালনে এ এলাকার মানুষকে বোরো ধানের খড়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রতি বছর এ মৌসুমে সংকট বেশি হয়ে থাকে। তাই বাহির থেকে বোরো ধানের খড় চলনবিলাঞ্চলে এনে বিক্রি করা হয়। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় খড়ের দামও বেশি পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে খড় কিনে গবাদিপশুকে খাওয়াতে হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন জানান, এবছর বন্যায় বিভিন্ন অঞ্চলের বোরো খড়ের গাদা ও রোপা আমনসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হওয়ায় খামারিরা বিকল্প হিসেবে আমদানী করা খড় ও দানাদার খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় বাজারে খড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী বোরো মৌসুম না আসা পযর্ন্ত খামারিদের আমদানী করা খড় ও খাদ্যের উপর নির্ভর করতে হবে।
×