স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বার্সিলোনার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করলেন লিওনেল মেসি। এর ফলে ২০২১ সাল পর্যন্ত ন্যুক্যাম্পেই থাকছেন এলএম টেন। এই সময়ের মধ্যে তাকে কেউ কিনতে চাইলে গুনতে হবে বাই আউট ক্লজ ৭০০ মিলিয়ন ইউরোতে।
গত গ্রীষ্মকালীন দলবদলেই বার্সিলোনা ছেড়ে পিএসজিতে চলে যান নেইমার। কাতালান ক্লাবটির ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার চলে যাওয়ার পর থেকেই গুঞ্জন ওঠে দল ছাড়তে পারেন লিওনেল মেসিও। কারণ তখনও ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেননি এই আর্জেন্টাইন। শঙ্কা দেখা দেয় ন্যুক্যাম্পে মেসির ভবিষ্যত নিয়ে। গুঞ্জন শোনা যায় বার্সিলোনা ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে নতুন করে ঠিকানা গড়ারও। কেননা, সেই ক্লাবটির বর্তমান কোচ যে পেপ গার্ডিওলা। অবশেষে থেমেছে সব গুঞ্জন। সবধরনের নাটকীয়তার পর নতুন চুক্তিতে সই করেছেন বার্সিলোনার এই মহাতারকা। এর ফলে আরও তিন মৌসুম কাতালানদের সঙ্গেই থাকছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী লিওনেল মেসি।
চলতি মৌসুমের শেষেই বার্সিলোনার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে মেসির। তারপরও নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় দ্বিধায় ছিলেন বার্সিলোনার সমর্থকরাও। কিন্তু এই প্রসঙ্গে মেসিও চুপ ছিলেন। বার্সা কর্তৃপক্ষও যথাযথ কোন মন্তব্য করেনি। যদিও বার্সা সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তামেউ বলেছিলেন নতুন চুক্তিতে মেসি সই করেছে। তবে অপেক্ষা করতে হবে চুক্তিপত্রের সঙ্গে মেসির আনুষ্ঠানিক ছবি তোলা পর্যন্ত। অবশেষে ক্লাব সভাপতিকে পাশে বসিয়ে চুক্তিপত্রের সঙ্গে ছবি তুললেন মেসি। এ প্রসঙ্গে বার্সিলোনা তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানেই এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
২০০০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বার্সিলোনায় পা রাখেন মেসি। ক্লাবটির যুব একাডেমিতে বেড়ে ওঠার পর ২০০৩ সালে বার্সার সিনিয়র দলের হয়ে অভিষেক হয় এই আর্জেন্টাইন তারকার। বার্সিলোনার হয়ে এখন পর্যন্ত ৬০২টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে প্রতিপক্ষের জালে ৫২৩টি গোল করেছেন লিও। শুধু তাই নয়, ন্যুক্যাম্পের দলটির হয়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ (ইনিয়েস্তার সঙ্গে যৌথভাবে) ৩০টি শিরোপা জেতেন মেসি। এর মধ্যে আটটি স্প্যানিশ লা লিগা, চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ এবং পাঁচটি কোপা ডেল রে’র শিরোপা রয়েছে।
শুক্রবার আরও একটি ব্যক্তিগত ট্রফি নিজের শোকেসে তুলেছেন ৩০ বছর বয়সী লিওনেল মেসি। চতুর্থবারের মতো ইউরোপীয় গোল্ডেন বুট জয়ের স্বাদ পান তিনি। স্পেনের জায়ান্ট ক্লাবটির হয়ে গত মৌসুমে ইউরোপীয় ফুটবলে সর্বাধিক গোল করার জন্য এই পুরস্কার লাভ করেন এলএম টেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে বার্সার হয়ে ৩৭টি গোল করেন তিনি। তারই পুরস্কার হিসেবে এই ট্রফি জেতেন ক্ষুদে জাদুকর। বার্সিলোনায় অনুষ্ঠিত এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ট্রফি হাতে নিয়ে পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই ফুটবল তারকা বলেন, ‘আমি সবসময় বলে আসছি, নিজেকে কখনও একজন স্ট্রাইকার মনে করি না। কিন্তু সবসময় গোল করার সুযোগ পেয়ে এবং এ রকম ব্যক্তিগত পুরস্কার জয় করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।’ মেসি এ সময় আরও বলেন, ‘যখনই আমি মাঠে নামি, তখনই মনে হয় আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। আমি সবসময় উন্নতি করছি এবং বিভিন্ন ম্যাচ থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো রপ্ত করছি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিদিন একের পর এক এই অর্জনকে আমি দারুণভাবে উপভোগ করছি।’
শুক্রবার অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মেসির হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন তারই ক্লাব সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ। উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ গোলদাতার এই ট্রফিটি নিজের শোকেসে তুলেছিলেন। গত মৌসুমে বড় কোন শিরোপা জিততে পারেনি বার্সা। কিন্তু ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে ঠিকই আলো ছড়িয়েছেন তিনি। চলতি মৌসুমেও লা লিগার গোলদাতার তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছেন মেসি। এখন পর্যন্ত ১২ ম্যাচ থেকে ১২ গোল সংগ্রহ করেছেন তিনি। উড়ছে তার দল বার্সিলোনাও।