ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যৌন নির্যাতনের দায় স্বীকার মার্কিন চিকিৎসকের

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

যৌন নির্যাতনের দায় স্বীকার মার্কিন চিকিৎসকের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অবশেষে দোষ স্বীকার করে নিলেন লরেন্স নাসার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্টিক্স দলের সাবেক চিকিৎসক ছিলেন তিনি। দীর্ঘ সময় এই দায়িত্ব পালনের সময় অনেক কিশোরী জিমন্যাস্টকে যৌন হেনস্থা করেছেন সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। নিজের দোষটা স্বীকারও করে নিয়েছেন ৫৪ বছর বয়সী এ চিকিৎসক। মিশিগানের আদালতে আনা সেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর এখন তাকে অন্তত ২৫ বছর কারাবাস করতে হবে। অবশ্য আদালতে দোষ স্বীকার করার সময় হ্যান্ডকাফ পড়া নাসার অনুতপ্ত চেহারায় ও ভাঙ্গা কণ্ঠে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তার কৃতকর্মের জন্য। তবে এরপরও তার শাস্তি কমবে এমনটা মনে করছেন না কেউ। আগামী বছর ১২ জানুয়ারি মিশিগানে শাস্তির শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। চারটি অলিম্পিকে ইউএস জিমন্যাস্টিক্সের দায়িত্ব পালন করেছেন নাসার। সবমিলিয়ে তিনযুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। এই সময়ে বিভিন্নভাবে সুযোগ নিয়ে এবং কৌশলে নাসার বেশ কয়েকজন কিশোরীকে যৌন নির্যাতন করেছেন এমন অভিযোগ অনেকেই করেন। সবমিলিয় প্রায় ২২টি যৌন হেনস্থার এমন অভিযোগ দায়ের হয়। এর মধ্যে অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী এ্যালি রেইসম্যান, ম্যাককায়লা ম্যারোনি এবং গ্যাবি ডগলাসও আছেন। তারাও অভিযোগ করেছেন দলের সঙ্গে থাকাকালীন নাসার তাদের সঙ্গে জোরপূর্বক যৌনতায় লিপ্ত হয়েছেন। যতজন তার যৌন লালসার স্বীকার হয়েছেন তার মধ্যে তিনজনের বয়স ছিল ১৩ বছরের নিচে। আর বাকিদের বয়স ১৩-১৫ বছরের মধ্যেই ছিল। আর এই কর্মকা-গুলো নাসার করেছেন মিশিগানে যখন বিভিন্ন ইভেন্টের কার্যক্রম চলেছে সে সময়। ঘটনাগুলোর সময়কাল ১৯৯৮ থেকে ২০১৫। নাসার আদালতে বলেন, ‘আমি চেয়েছি তাদের পরিত্রাণ দিতে। এই বিশাল দলটিকে আমার সেটাই দেয়া উচিত ছিল।’ কিন্তু নাসার মেডিক্যাল চেকআপ, শেষ মুহূর্তে জিমন্যাস্ট মেয়েদের ছাড়পত্র দেয়ার সুযোগ নিয়ে তাদের যৌনতায় বাধ্য করেছেন। নিজের কুৎসিত বাসনা চরিতার্থ করেছেন। সে বিষয়ে নিজের অভিযোগ জানানোর সময় ম্যারোনি গত মাসে বলেন, ‘আমার যখন বয়স ১৩ তখন থেকেই এটি শুরু হয়েছিল। প্রথম যেবার আমি টেক্সাসে হওয়া জাতীয় ক্যাম্পে সুযোগ পেলাম তখনকার ঘটনা। আমি এই ক্রীড়া ছেড়ে দেয়ার আগে এটার কোন সমাপ্তি আসেনি। লন্ডনে আমার দল এবং আমি স্বর্ণপদক জেতার আগেও এটি ঘটেছিল। আবার লন্ডনে ভল্ট ইভেন্টে আমি রৌপ্য জেতার আগেও এমনটা ঘটেছিল।’ গত বছর মার্কিন জিমন্যাস্টিক্সে ব্যাপক হারে কিশোরী মেয়েদের যৌন হেনস্থার ঘটনা বেরিয়ে আসে। তখন টানা প্রতিবেদন বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক। আর সাবেক ও বর্তমান অনেক জিমন্যাস্টই যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে থাকেন। বাধ্য হয়ে পুলিশ তদন্তে নামে এবং ইউএসএ জিমন্যাস্টিক্স প্রধান স্টিভ পেনি বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে যৌন হেনস্থার স্বীকার হওয়াদের অভিযোগটা জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার জন্য সবার রোষের মুখে পড়েছিলেন পেনি। আর নাসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর ইউএস জিমন্যাস্টিক্স থেকে জানানো হয় তারা ‘নিরাপদ ক্রীড়া নীতিমালা’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছেন। যদিও নাসারের বিরুদ্ধে ওঠা সন্দেহগুলো খতিয়ে দেখার জন্য তাৎক্ষণিক তদন্তেরই প্রয়োজন মনে করেছিলেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত মিশিগানের আদালত নাসারকে আর ছাড় পেতে দেয়নি। কারণ মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অভিযুক্ত নাসার এমন ১২৫টি ঘটনা ঘটিয়েছেন যা হেনস্থার শিকার হওয়া মেয়েরাই অভিযোগ করেছেন। এর আগেও শিশু পর্নোগ্রাফির অভিযোগও স্বীকার করেন নাসার। আগামী ১২ জানুয়ারি তার শাস্তি প্রদানের শুনানি হবে মিশিগানে।
×