ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নরেন বিশ্বাস পদক পেলেন আলী যাকের

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

নরেন বিশ্বাস পদক পেলেন আলী যাকের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা রঙ্গমঞ্চের অনন্য এক অভিনেতা আলী যাকের। মঞ্চ থেকে টিভি নাটকÑসর্বত্রই তিনি প্রবল দাপুটে এক অভিনয়শিল্পী। নাট্য নির্দেশনায়ও সমান পারঙ্গম এই শিল্পী। বরেণ্য এই নাট্যজন পেলেন বাচিকশিল্পাচার্যখ্যাত আরেক গুণীজনের নামাঙ্কিত পদক। তাকে প্রদান করা হলো কণ্ঠশীলন প্রবর্তিত নরেন বিশ্বাস পদক। বাংলা নাট্যমঞ্চে অসামান্য অবদানের জন্য প্রদান করা হলো এ সম্মাননা। শনিবার হেমন্ত সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে আলী যাকেরের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন কণ্ঠশীলন সভাপতি সঙ্গীতজ্ঞ ড. সন্্জীদা খাতুন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। সভাপতি হিসেবে চমৎকারভাবে আড্ডাচ্ছলে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সন্জীদা খাতুন। আলাপচারিতায় উঠে আসে চার গুণীজনের উঠে আসে দেশের সংস্কৃতির গতিধারা ও সংস্কৃতির ওপর নেমে আসা অভিঘাতসহ নানা বিষয়। আয়োজনের শুরুতেই ছিল সুমন মজুমদার ও সেঁজুতি বড়ুয়ার সঙ্গীত পরিবেশনা। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন কণ্ঠশীলনের সাধারণ সম্পাদক জাহীদ রেজা নূর। নরেন বিশ্বাস ও আলী যাকের কর্মময় জীবনের ওপর প্রদর্শিত হয় দুইটি তথ্যচিত্র। নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ রচিত আলী যাকেরকে নিবেদিত শংসাবচন পাঠ করেন আবদুস সবুর খান চৌধুরী। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশে আলী যাকের বলেন, নিজেকে কৃতার্থ মনে করছি। গুণী মানুষদের সঙ্গে এক মঞ্চে বসে পদকটি গ্রহণ করছিÑএটি আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। যে সম্মান আমাকে দেয়া হলো আমি হয়তো ততটা যোগ্য নয়। বাঙালী হিসেবে নিজেকে চিনতে পারাই হচ্ছে সংস্কৃতির বড় কথা। মনে পড়ে, রমনা বটমূলে নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সন্্জীদা খাতুন ও ওয়াহিদুল হকের পিছে পিছে ঘুরতাম। কারণ আমি তো গান গাইতে পারতাম না। কিন্তু বাঙালীর জাগরণের ওই আয়োজনের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করতে চেয়েছি। আর সেখান থেকেই সংস্কৃতির প্রতি আমার অনুভব বেড়ে ওঠে। ছায়ানট একটি আদর্শ ও দর্শনের নাম। এই দর্শনই আমাকে ধাবিত করেছে সংস্কৃতিচর্চায়। সংস্কৃতির ওপর নেমে আসা অভিঘাতের বিষয়টি উল্লেখ করে আলী যাকের বলেন, আজকের তরুণরা যখন প্রমিত বাংলা বলতে বা লিখতে পারে না তখন মনোকষ্ট হয়। প্রমিত বাংলাটা ভাল জানলে যখন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলাটাও কঠিন মনে হয়। এই দুঃখ নিয়েই হয়তো একদিন চলে যাব মঞ্চ ছেড়ে। তাই এখন সময় এসেছে সংস্কৃতির নবজাগরণের। ভাষার প্রতি মমত্ব না আসলে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি অপেক্ষা করছে বড় বিপদ। সন্্জীদা খাতুন বলেন, একুশই আমাদের ভাষা দিয়েছে। কথা বলতে শিখিয়েছে। সংস্কৃতির চেতনা ছড়িয়েছে আমাদের মাঝে। আজকে অনেকে আবৃত্তি বা সঙ্গীত চর্চা করে টেলিভিশন পর্দায় যাওয়ার জন্য। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সংস্কৃতিকে ধারণ কর অনুধাবন করতে হবে। আনিসুজ্জামান বলেন, সংস্কৃতির দুটো দিক। একটি বস্তুগত ও অপরটি মানসগত। হাজার বছরের সংস্কৃতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটছে বৈশ্বিক প্রভাবে। বস্তুগত পরিবর্তন হলেও মানসিক পরিবর্তন হচ্ছে না। আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাল বলছে না। যতদিন পাকিস্তানের অন্তর্গত ছিলাম তখন যেভাবে বাংলাকে আঁকড়ে ধরেছিলাম, স্বাধীনতার পর সেভাবে ধরছে না। বিদেশে পড়তে যাওয়া বা সংস্কৃতিচর্চায় কোন দোষ নেই। তবে শেকড়টিকে যেন উপড়ে না ফেলে। নরেন বিশ্বাস ও আলী যাকেরদের সাধনাই হচ্ছে সেই শেকড়কে আঁকড়ে ধরার। পাকিস্তান আমলে সংস্কৃতির্চার প্রতিবন্ধকতা পেরুনোর কথা তুলে ধরে মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, পাকিস্তান আমলে সংস্কৃতিটাকে শক্তি মনে করতাম। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল সেই সংস্কৃতির একটি মঙ্গলরূপ। চিত্রকলা, সঙ্গীতে একটা জাগরণ ঘটেছিল। নাটকেও ঠিক তাই হয়েছে। ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জাগাতে চেষ্টা করেছিলাম। পদক প্রদান পর্ব শেষে ছিল দেশবরেণ্য বাচিকশিল্পীদের পরিবেশনায় আবৃত্তি। আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, আশরাফুল আলম, ডালিয়া আহমেদ, লায়লা আফরোজ, রূপা চক্রবর্তী, এনামুল হক বাবু, বেলায়েত হোসেন, মাহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, ইকবাল খোরশেদ, ফয়জুল আলম পাপ্্পু, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী, ইভা ম-ল, হাসিব বিল্লাহ, এনামুল হক কবির. মনু গুপ্ত, এনায়েত কাজল, রইস উদ্দিন আহমেদ স্বপন, জহিরুল হক খান, শামীমা নাজনীন, মাসুমা জাহান, ফারহানা নিশাত সোহেলী, প্রদীপ কুমার আগরওয়ালা, নাফিয়া কেয়া, ইসরাত জাহান প্রমুখ। আলী যাকেরের আগে নরেন বিশ্বাস পদক পেয়েছেন নাজিম মাহমুদ, গোলাম মুস্তাফা, নিখিল সেন, আশরাফুল আলম, সন্্জীদা খাতুন, কলকাতার প্রদীপ ঘোষ, শামসুর রাহমান, নিরঞ্জন অধিকারী, ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, খান সারওয়ার মুরশিদ, সৈয়দ হাসান ইমাম, আসাদুজ্জামান নূর, তারিক সালাহ্্উদ্দিন মাহমুদ, খান জিয়াউল হক, কাজী মদিনা, খালেদ খান, নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও ফেরদৌসী মজুমদার। জাপানী চারুশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রদর্শনী শিল্পের সেতুবন্ধনে দৃঢ় হবে দুই দেশের বন্ধুত্ব। সেই সুবাদে শিল্পের পথরেখায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ও জাপান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সঙ্গে শিল্প-শিক্ষা বিনিময় করবে জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি অব দ্য আর্টস। এই কর্মসূচীর আওতায় চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হলো টোকিও ইউনিভার্সিটি অব দ্য আর্টসের দুই চারুশিক্ষক ও ছয় চারুশিক্ষার্থীর যৌথ প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে চারুকলা অনুষদে অঙ্কন ও চিত্রকলা বিভাগ। শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদের সামনের বারান্দায় প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন অঙ্কন ও চিত্রকলা বিভাগের অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী দুই চারুশিক্ষক হলেন টোকিও ইউনিভার্সিটি অব দ্য আর্টসের ভাইস প্রেসিডেন্ট টয়োমি হোসিনা ও বিশ্ববিদ্যালটির গবেষণা সহকারী ইয়োকো টাকাহারা। শিক্ষার্থী শিল্পীরা হলেন মাসুকি ওকু, একান তাজাই, চো জাইয়ং, চি কামেকুরা, আয়ুমি কান্নু ও ইয়োকো হোসিনো। চিত্রকর্ম, স্থাপনাশিল্প ও স্থাপনাশিল্পের আলোকচিত্রে দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর শেষ দিন আজ রবিবার। বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×