ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

* অনুপ্রবেশ চলছেই, আরও এসেছে ৩ শতাধিক ;###;* ক্যাম্প পরিদর্শনে আজ কক্সবাজার যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি

সমঝোতা হলেও স্বদেশে ফিরতে ভরসা পাচ্ছে না রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

সমঝোতা হলেও স্বদেশে ফিরতে ভরসা পাচ্ছে না রোহিঙ্গারা

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ দীর্ঘ কালক্ষেপণ, মিথ্যাচার, নানা টালবাহানা করার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতায় স্বাক্ষর করার পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি নেই। রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এখনও অব্যাহত রয়েছে। শনিবার ভোরে এসেছে আরও তিন শতাধিক। এদের অধিকাংশ নারী। কিছু রয়েছে শিশু ও পুরুষ। এছাড়া সীমান্ত সংলগ্ন উত্তর মংডুতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য বহু রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু এখনও অপেক্ষা করছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে সৃষ্টি হয়ে আছে অবিশ্বাসের দোলাচল। এছাড়া কবে থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং কারা যেতে পারবে, যাওয়ার পর রাখাইন রাজ্যে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি কি হবে, স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করা যাবে কিনা, সেনাসদস্য ও উগ্র মগ সন্ত্রাসীদের উৎপীড়ন থেকে রেহাই পাবে কিনা এসবসহ আরও নানা বিষয়ে সন্দেহের ধূ¤্রজাল সৃষ্টি হয়ে থাকায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে অর্থাৎ রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে অনেকটা অনুৎসাহী ভূমিকায় রয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আজ উখিয়ায় বালুখালী ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ত্রাণ সামগ্রীও বিতরণ করবেন। গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের নেপিডোতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতার প্রেক্ষিতে শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঠিক কবেনাগাদ শুরু হবে তা স্পষ্টভাবে জানাতে পারেননি। তবে আশান্বিত করেছেন। মিয়ানমারে বা বাংলাদেশে প্রতিদিন এই ইস্যুতে দু’দেশের পক্ষে যা বলা হচ্ছে তা দ্রুততম সময়েই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে যায়। এরা নিজেদের মাঝে নানা আলোচনায় লিপ্ত হয়। পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শনিবার পর্যন্ত প্রত্যাবাসনের বিষয়টি রোহিঙ্গাদের মাঝে নেতিবাচক হয়েই আছে। উল্টো দু’দেশের যে কোন একটি দেশ সীমান্ত যদি বন্ধ করে দেয় এমন আশঙ্কায় রাখাইন রাজ্য থেকে অবশিষ্ট রোহিঙ্গারাও চলে আসার পথই অনুসরণ করছে। এছাড়া সমঝোতা স্মারকে একটি বিষয় স্পষ্ট রয়েছে, যা হচ্ছে ২০১৬ সালের অক্টোবর ও চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে যেসব রোহিঙ্গা এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে শুধু তাদেরই মূলত ফেরত নেয়া হবে বলে সম্পাদিত সমঝোতায় উল্লেখ রয়েছে। সঙ্গত কারণে এর আগে যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের কি হবে। মূলত এসব কারণেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে এবং এরা প্রত্যাবাসনে উৎসাহী হচ্ছে না। থেমে নেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নিজ নিজ বাড়িঘরে ফেরত যেতে মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থেমে নেই। শনিবার ভোরেও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, লম্বরিপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়েছে তিন শতাধিক রোহিঙ্গা। এদিকে ইতোপূর্বে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গা যারা ক্যাম্পে অবস্থান করছে, তাদের মধ্যেও কিছু কিছু রোহিঙ্গা স্বদেশে ফিরে না যেতে প্রচার চালাচ্ছে। টেকনাফ-উখিয়া অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দেয়ার পরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় স্থানীয় জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি ক্ষোভও বাড়ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারিরাও ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে আছেন। কেননা, প্রতিদিন নতুন নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ঠাঁই করে দিতে সকলকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া আশ্রিত রোহিঙ্গারা নানামুখী সমস্যাও সৃষ্টি করছে। অবশ্য এরপরও রোহিঙ্গা ইস্যুটি সরকারী দিকনির্দেশনা নিয়ে মোকাবেলা করে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন। জেলা প্রশাসন সূত্রমতে, মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আগমন থামছেই না। প্রতিদিনই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নতুনভাবে রোহিঙ্গারা আসছেই। এতে নানামুখী সঙ্কটের মধ্যে বিশেষ করে বাসস্থানের ক্ষেত্রে চরম সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কেন না নির্ধারিত জায়গাতে রোহিঙ্গাদের ঠাঁই করে দেয়ায় সঙ্কুলান হচ্ছে না। তাই নতুন করে জায়গা বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু আশপাশে সেই রকম উপযোগী জায়গা প্রয়োজন অনুসারে মিলছে না। ফলে প্রশাসনকে নতুন জায়গা খুঁজতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুনভাবে আরও জায়গা নেয়া হয়েছে। একইভাবে খাদ্য, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তাসহ সার্বিক কার্যক্রমেরও পরিধি বাড়াতে হচ্ছে। সূত্র মতে, রোহিঙ্গাদের জন্য উখিয়া ও টেকনাফে ইতোপূর্বে ৩ হাজার একর সরকারী জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই জমিতে ১২টি ক্যাম্প করে ২০ ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। অনেক আগেই রোহিঙ্গা বাসস্থানে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে ওসব জমি। অথচ, প্রতিদিনই ঘটছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। ফলে নতুন করে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। তাই বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসনকে নতুন জায়গা খুঁজতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ এখন পর্যন্ত অব্যাহত থাকায় বাসস্থানের সঙ্কট স্থায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, এখনও রোহিঙ্গারা আসছে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে কোন রোগ যেন বাংলাদেশে না আসে এবং ছড়িয়ে না পড়ে সে লক্ষ্যে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে উখিয়া ও টেকনাফে ৪১টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের দেয়া হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা সেবাও। এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৫০ জনকে হাম টিকা, ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৬৮ জনকে ওপিডি টিকা, ৮ লাখ ৮৩ হাজার ১১৫ জনকে কলেরার টিকা দেয়ার পাশাপাশি ১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৬ জনকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে জানিয়েছেন, উখিয়া টেকনাফসহ যেখানে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে, সেখানে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওই এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখার জন্য আমাদের লোকজনকে দিনরাত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তারপরও পরিস্থিতি আরও ভাল করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সাড়ে ছয় লাখ নিবন্ধিত ॥ উখিয়া-টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা শনিবার পর্যন্ত নিবন্ধন কার্ড পেয়েছে। নিবন্ধন কার্ড নিয়ে রোহিঙ্গারা ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করতে পেরে উৎসাহী হচ্ছে। উখিয়া-টেকনাফের ৭টি বুথে ৬ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিকের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। পাসপোর্ট এ্যান্ড ইমিগ্রেশন অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু নোমান মুহাম্মদ জাকের হোসেন জানিয়েছেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকার কারণে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন শেষ করা যাচ্ছে না। মিয়ানমারে ফিরে না যেতে প্রচারণা ॥ টেকনাফ ও উখিয়ার ১২টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বদেশে নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে যাওয়া এবং না যাওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও এতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কতিপয় সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা। কিছু রোহিঙ্গা নেতা (বিদ্রোহী) সাধারণ রোহিঙ্গাদের এত তাড়াতাড়ি ফিরে না যেতে প্ররোচনা দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রধান দাবি তাদের অধিকার ও নাগরিকত্ব প্রদান না করা পর্যন্ত স্বদেশে ফিরে যাবে না বলে দাবি তোলা হচ্ছে। এ দাবির পেছনে রোহিঙ্গাদের উস্কে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপের ক্যাডাররা। স্থানীয়দের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত দুইদিন ধরে উখিয়ার বালুখালী, কুতুপালং, পালংখালী, থাইংখালী ও টেকনাফের শামলাপুর, লেদা, উনচিপ্রাং ও নয়াপাড়াসহ প্রতিটি ক্যাম্পে অপরিচিতদের আনাগোনা বেড়েই চলছে। তারা ক্যাম্পের আশপাশে রোহিঙ্গা মাঝিদের ডেকে নিয়ে জাতিসংঘ পরিষ্কার ভাষায় না বলা পর্যন্ত আপাতত কেউ মিয়ানমারে না ফিরতে পরামর্শ দিয়ে চলছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি কতিপয় দেশী-বিদেশী এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরাও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে না ফেরার জন্য উদ্বুদ্ধ করে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছেন আজ ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আজ রবিবার কক্সবাজার আসছেন। রাষ্ট্রপতির রবিবার উখিয়ার বালুখালী ২নং অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করার কথা রয়েছে । অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলাউ মার্মা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি দুপুর দেড়টার দিকে ইনানীতে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত বেওয়াচ পৌঁছবেন। সেখান থেকে তিনি সড়কপথে উখিয়ার বালুখালী ২নং অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। ফিরে দেখা ॥ ১৯৭৮ সালে লুণ্টিন বাহিনীর ঘাঁটিতে সশস্ত্র আরএসও ক্যাডারদের হামলার ঘটনা ঘটে। ওইসময় অন্তত চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের চুক্তির অধীনে ৬ মাসের মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হলেও থেকে যায় অন্তত ২ লাখ রোহিঙ্গা। যারা বিএনপি-জামায়াতের ছত্রছায়ায় এদেশের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়ে জমিজমার মালিক বনে গেছে। অনেকে এদেশের ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট তৈরি করে পাড়ি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। ১৯৯১ সালের অক্টোবরে মংডুতে এক রাখাইন মহিলা শিক্ষিকাকে নির্যাতনের অভিযোগে রাখাইনরা গাড়ি থেকে নামিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে। এতে রাখাইন রাজ্য উত্তপ্ত হয়ে উঠে। শুরু হয় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯৯১-৯২ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। ওইসময় অন্তত তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা (বেসরকারী হিসেবে চার লক্ষাধিক) অনুপ্রবেশ করে। এদের ১৯টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুসারে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ২ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নেয়া হয়। থেকে যায় আরও অন্তত দেড়লাখ রোহিঙ্গা। সরকারী হিসেব মতে, এ সংখ্য ৩২ হাজার। যারা এখনও টেকনাফের নয়াপাড়া ও উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। এক রাতে ৮২ হাজার চারাগাছ নষ্ট ॥ রোহিঙ্গারা টেকনাফে রাতের আঁধারে ৭৫ একর সামাজিক বনায়ন জবর দখল ও রোপিত ৮২ হাজারটি চারাগাছ নষ্ট করে দিয়েছে। এতে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের ক্ষতি হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। শনিবার ভোরে টেকনাফে হ্নীলা মোচনী বনবিটের আওতাধীন নয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার আকস্মিক রাতের আঁধারে সৃজিত সামাজিক বাগানে বসতি গড়তে খুঁটি স্থাপন করার খবর পেয়ে সকালে বনবিভাগ, সিপিজি ও অংশীদারিত্বের সদস্যরা দুই ঘণ্টাব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে কয়েক রোহিঙ্গা উস্কানিদাতাদের সঙ্গে মোবাইলে আলাপ করলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা দলবদ্ধ এমনকি এক পর্যায়ে মারমুখী হয়ে ফের জবর দখলে নেমে পড়ে। সকাল ৮টায় সৃজিত সামাজিক বাগানের জমিতে বনকর্মীদের বাধা তোয়াক্কা না করে বাসা তৈরি করতে মাটি খুঁড়াখুঁড়ি শুরু করে রোহিঙ্গারা। জনবল কম হওয়ায় বাধ্য হয়ে বনবিভাগের লোকসহ সিপিজি ও অংশীদার সদস্যরা ফিরে আসে। অভিযানে যাওয়া মোচনী বন বিটের এফজি সালাহ উদ্দিন, পলাশ ভৌমিক, সামাজিক বনায়নের অংশীদার কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক বদিউর রহমান, মোঃ ইসমাইলসহ বন বিভাগ, পাহারা দল (সিপিজি) ও সৃজিত বাগানের অংশীদার কমিটির সদস্যরা জানান, গত জুন মাসে ৭৫ একর জমিতে ২০ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বিভিন্ন জাতের ৮২ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছিল। কারও কারও উস্কানি পেয়ে রোহিঙ্গারা বাগানে আশ্রয় নেয়ায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতির পাশাপাশি বনভূমি ধ্বংস ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। টেকনাফ বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস কান্তি জানান, বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×