ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রফেসর ড. মোঃ গিয়াস উদ্দীন মিয়া

পথ চলার ১৯ বছর

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

পথ চলার ১৯ বছর

সময়ের পরিক্রমায় ১৯তম বছরে পদার্পণ করল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়। গত বুধবার (২২ নবে¤র) ছিল বিশ^বিদ্যালয়ের জন্মদিন। তাই আনন্দ, উৎসব ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি যথাযথভাবে পালন করা হয়। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ কলেজ অব এগ্রিকালচার সায়েন্স (বিসিএএস) নামে অভিহিত হয়, যা ১৯৮৩ সালে জাপান সরকারের সহায়তায় ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা ও গবেষণা সুবিধাদি উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ সরকার এই কলেজটিকে ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন এগ্রিকালচার (ইপসা)-এ রূপান্তরিত করে কৃষি বিজ্ঞানে মাস্টারস ও পিএইচডি ডিগ্রী প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলত কৃষিনির্ভর। দেশের সিংহ ভাগ মানুষের উপজীব্য যেখানে কৃষি, সেখানে কৃষিভিত্তিক উন্নয়নের পরিপূর্ণ বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ইপসার চ্যান্সেলর শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত ইপসার দ্বিতীয় সমাবর্তনে ইপসাকে পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় ঘোষণা দেন। কৃষিতে উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং কৃষির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আনুষঙ্গিক শিক্ষাদান, গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে ইপসাকে পুনর্গঠন করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়’ নামে এ বিশ^বিদ্যালয় ১৯৯৮ সালের ২২ নবেম্বর থেকে যাত্রা শুরু করে। ২০০১ সালে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রী প্রদান করা হয়। বর্তমানে বিশ^বিদ্যালয়ে এমএস ও পিএইচডি ডিগ্রীর পাশাপাশি ২০০৫ সাল থেকে বিশ^বিদ্যালয়ে ৪ বছর মেয়াদী বিএস (কৃষি/ফিশারিজ/কৃষি অর্থনীতি) ও ৫ বছর মেয়াদী ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এর মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজসহ ৫টি অনুষদ রয়েছে। কৃষি অনুষদে ১৬টি, মাৎস্য বিজ্ঞানে ৫টি, ভেটেরিনারি মেডিসিন এ্যান্ড এ্যানিম্যাল সায়েন্সে ১০টি এবং কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদে ৫টি বিভাগসহ বিশ^বিদ্যালয়ে মোট ৩৬টি শিক্ষা বিভাগ চালু রয়েছে। অটাম ২০১৭ টার্ম পর্যন্ত ৩৭১জন পিএইচডি, ১৫৮৩জন এমএস এবং ৮২৯ জন বিএস পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীকে ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে। মৌলিক গবেষণায় অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করে বিভিন্ন ফসলের ৩৪টি জাত ও ৬টি প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। আরও ১০টি ফসলের জাত ও প্রযুক্তি অবমুক্তির অপেক্ষায় আছে। উদ্ভাবিত ফসলের জাত এবং প্রযুক্তিগুলো কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ^বিদ্যালয়ে রয়েছে যুগোপযোগী আধুনিক গবেষণা প্রকল্প ও গবেষণাগার, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য একাধিক সমঝোতা স্মারক চুক্তি, আধুনিক ভৌত অবকাঠামো, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক সুবিধাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো ও জরুরী সেবাসমূহ। বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ গিয়াস উদ্দীন মিয়া বলেন, কৃষি শিক্ষায় ব্যতিক্রমী এই প্রতিষ্ঠানটি উচ্চতর ডিগ্রী প্রদানের জন্য নর্থ আমেরিকার কোর্স বেজড কারিকুলামে চলছে। শিক্ষকগণ দক্ষতার সঙ্গে পাঠক্রম অনুসরণ করছেন। পরিবর্তনশীল পরিবেশের উপযোগী ফসলের জাত উন্নয়নেও আমরা কাজ করছি। কৃষি বিষয়টা খুবই চ্যালেঞ্জিং ও প্রতিযোগিতামূলক। আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা কৃষি গবেষণায় আন্তর্জাতিক পরিম-লে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কৃষি শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয়কে বিশ^মানে উন্নীত করা, গবেষণাগার সমূহকে আরও আধুনিকায়ন করা, কৃষির ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নতুন এবং সময়োপযোগী অনুষদ এবং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা, ফসলের টেকসইজাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে বিশ^বিদ্যালয় বহিরাঙ্গন কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্প্রসারিত করা। সর্বোপরি বিশ^বিদ্যালয়কে কৃষি শিক্ষার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে রূপদান করাই বিশ^বিদ্যালয়ের ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য। লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়
×