ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এম নজরুল ইসলাম

তিনি আমাদের বড় গর্বের ধন

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

তিনি আমাদের বড় গর্বের ধন

২৩ নবেম্বর, বৃহস্পতিবার দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠার শীর্ষ সংবাদটি যথার্থ অর্থেই ছিল ব্রেকিং নিউজ। শুধু ব্রেকিং নিউজ বললে ভুল হবে, আমাদের শ্লাঘা আরও অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে এই খবরটি। ‘সততার শীর্ষ তিনে’ শীর্ষক খবরে বলা হয়েছে, ‘প্যারাডাইস পেপার্স আর পানামা পেপার্সের পর এবার পিপলস এ্যান্ড পলিটিকস, বিশ্বের ৫ সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেছে, যাদের কোন দুর্নীতি স্পর্শ করেনি। এদের বিদেশে কোন ব্যাংক এ্যাকাউন্টও নেই, উল্লেখ করার মতো কোন সম্পদও নেই। বিশ্বের সবচেয়ে সৎ এই পাঁচ সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ পিপলস এ্যান্ড পলিটিক্সের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতিতে যাদের সৎ ভাবা হতো, যাদের অনুকরণীয় মনে করা হতো তাদের অনেকেই কলঙ্কিত হয়েছেন পানামা পেপার্স এবং প্যারাডাইস পেপার্সে। তবে বিপরীতধর্মী প্রতিবেদন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেতৃত্বের সততার মান বিচার হয়েছে। প্রথম প্রশ্ন ছিল, সরকার/রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে তিনি কি তাঁর রাষ্ট্রের বাইরে কোন ব্যাংক এ্যাকাউন্ট করেছেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর তার ব্যক্তিগত সম্পদ কতটুকু বেড়েছে। তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, গোপন সম্পদ গড়েছেন কি না। চতুর্থ প্রশ্ন সরকার/রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ আছে কি না। আর পঞ্চম প্রশ্ন ছিল, দেশের জনগণ তার সম্পর্কে কী ভাবেন? এই পাঁচটি উত্তর নিয়ে পিপলস এ্যান্ড পলিটিকস ১৭৩ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করেছে। এই গবেষণায় সংস্থাটি এ রকম মাত্র ১৭ সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছেন যারা শতকরা ৫০ ভাগ দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৭৩ সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সৎ সরকার প্রধান হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল। পাঁচটি প্রশ্নে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৯০। পিপলস এ্যান্ড পলিটিক্সের গবেষণায় দেখা গেছে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশের বাইরে কোন ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নেই। সংস্থাটি গবেষণায় দেখেছে, বেতন ছাড়া শেখ হাসিনার সম্পদের স্থিতিতে কোন সংযুক্তি নেই। শেখ হাসিনার কোন গোপন সম্পদ নেই বলে নিশ্চিত হয়েছে পিপলস এ্যান্ড পলিটিক্স। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ৭৮ ভাগ মানুষ মনে করেন সৎ এবং ব্যক্তিগত লোভ লালসার উর্ধে। বিষয়টি সংসদে তুলেছিলেন একজন সংসদ সদস্য। তাঁর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জীবনকে বাজি রেখে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সততা নিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের জীবনে অর্থ-সম্পদ, টাকা-পয়সা কী আছে না আছে, এ নিয়ে তিনি কখনও চিন্তা করেন না। এ বিষয়ে তাঁর কোন দুশ্চিন্তাও নেই। নিজে কী পেলেন বা না পেলেন, সেটি বড় কথা নয়, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে কতটুকু কাজ করতে পারলেন, সেটিই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড়। তিনি বলেছেন, ‘সততাই আমার মূল শক্তি। কিছু নিতে নয়, আমরা দেশকে দিতে এসেছি। দেশের জন্য আমার বাবা-মা, ভাইসহ সবাই জীবন দিয়ে গেছেন। আমিও জীবনবাজি রেখে দেশের মানুষের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি, যতদিন বেঁচে আছি করে যাব। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন উন্নত-সমৃদ্ধ হয়, বিশ্ব দরবারে যেন মর্যাদার সঙ্গে চলে- এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’ ‘সততার শীর্ষে তিনে’ শীর্ষক খবরটি পড়ে রোমাঞ্চিত হয়েছি, বিস্মিত হইনি। কারণটিও খুব স্বাভাবিক। প্রথম কারণটি হচ্ছে, বাংলাদেশ তো এমন নেতার জš§ দিতে জানে। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, দীর্ঘদিন আমি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি ও জানি। বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক সব খবরের মধ্যে এই খবরটি নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া। নেতৃত্বের গুণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মর্যাদার আসন পেয়েছে। এই খবরটি সেই মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দেবে। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের আজকের অবস্থান প্রমাণ করে শেখ হাসিনা অনেক বড় মাপের নেত্রী। এর আগে টাইম ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের প্রভাবশালী দশ নারী নেত্রীর একজন মনোনীত হয়েছিলেন। একজন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা সব সময় নিজেকে প্রমাণ করেছেন। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেওেয়া এক সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার কাজ সাধারণ মানুষের উন্নয়ন। আমার রাজনীতি সাধারণ মানুষের জন্য, নিজের জন্য নয়।’ জনগণের প্রতিনিধি তিনি, জনগণই তাঁকে বসিয়েছে নেতৃত্বের আসনে। জনগণের মনের কথা তিনি বুঝতে পারেন সহজেই। তাই তো, জোর দিয়ে বলতে পারেন, ‘জনগণ চায়, তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হোক। আমি তাদের সেই চাহিদা পূরণেই কাজ করছি। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও চাকরির ব্যবস্থা করছি।’ শেখ হাসিনার দেশপ্রেমে কোন ঘাটতি নেই। তাঁর চিন্তা ও চেতনায় কেবলই বাংলাদেশ ও দেশের মানুষ। তাঁর স্বপ্নের আঙিনায় যে সবুজ মানচিত্রটি আঁকা, সেটি বাংলাদেশের। সেখানে এদেশের মানুষেরই বিচরণ। বাংলাদেশের তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই ‘মানব ধর্মই’ তাঁর ব্রত। তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সর্বজনীন ও সর্বকালীন মানব’ হিসেবে বাঙালী জাতির হƒদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গকারী এই মহামানবের কন্যা শেখ হাসিনাও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন মানুষের কল্যাণে। রাজনৈতিক পরিবারে তাঁর জš§, তাই পারিবারিকভাবেই ‘কল্যাণমন্ত্রে দীক্ষা’ পেয়েছেন তিনি শৈশবে। নির্লোভ ও নির্মোহ নেতৃত্বের প্রথম যে পুরস্কারটি তিনি পেয়েছেন, তা হচ্ছে জনগণের অফুরন্ত ভালবাসা। এর বাইরে আন্তর্জাতিক আরও অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন দেশরতœ শেখ হাসিনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির আন্তর্জাতিক গুরুত্ব ও স্বীকৃতির চিহ্ন হিসেবে ১৯৯৯ সালে ২২ সেপ্টেম্বর অর্জন করেছেন ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার। কৃষিতে অসামান্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক সেরেস পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও অনেক অর্জন তাঁর। ২০১৫ সালে পেয়েছেন চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কার। ২০১৫ সালে ওঞট (ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঞবষবপড়স টহরড়হ) অধিৎফ. একই বছর রাজনীতিতে নারী পুরুষের বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভুমিকা পালনে পেয়েছেন ডওচ (ডড়সবহ রহ চধৎষরধসবহঃ ) এষড়নধষ অধিৎফ. ২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষা ও উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো তাঁকে শান্তিবৃক্ষ পদকে (চবধপব ঞৎবব অধিৎফ) ভূষিত করে। খাদ্য উৎপাদন ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভারসিটি তাঁকে সম্মাননা সার্টিফিকেট প্রদান করেছে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কো অপারেশন শেখ হাসিনাকে সাউথ সাউথ পুরস্কারে ভূষিত করে ২০১৩ সালে। একই বছর ‘একটি বাড়ি ও একটি খামার প্রকল্প’-এর জন্য তিনি মন্থন এ্যাওয়ার্ড পান। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো তাঁকে কালচারাল ডাইভারসিটি পদকে ভূষিত করে। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের স্পিকার ঔযড়হ ইবৎপড়ি গচ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দূরদর্শী নেতৃত্ব, সুশাসন, মানবাধিকার রক্ষা, আঞ্চলিক শান্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে শেখ হাসিনার অনবদ্য অবদানের জন্য এষড়নধষ উরাবৎংরঃু অধিৎফ প্রদান করেন । ২০১০ সালে তিনি পান গউএ (গরষষবহরঁস উবাড়ষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষ) অধিৎফ. একই বছর ২৩ নবেম্বর তাঁকে আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অসমান্য অবদানের জন্য ঝঃ.চবঃৎংনঁৎম টহরাবৎংরঃু তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করেন। ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক-২০০৯’-এ ভূষিত হন । ২০০৫ সালে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে অবদান রাখার জন্য শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করেছে পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া। এছাড়া ১৯৯৯ : ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঋঅঙ কর্তৃক ১৯৯৯ সালে সেরেস পদক লাভ করেছেন তিনি। ১৯৯৮ সালে পেয়েছেন ‘মাদার তেরেসা পদক’। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রাখার জন্য ইউনেস্কো শেখ হাসিনাকে ‘ফেলিক্স হুফে বইনি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে সম্মানিত করেছে তাকে। ১৯৯৮ সালে বিশ্বভারতীর এক আড়ম্বরপূর্ণ বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৯৭ সালে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জš§শতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি শান্তি, গণতন্ত্র ও উপমাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনে অনন্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে ‘নেতাজী মেমোরিয়াল পদক ১৯৯৭’ প্রদান করা হয়। এমন অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় পুরস্কার দেশের মানুষের ভালোবাসা, যা তিনি অর্জন করেছেন তাঁর সততার গুণে। ‘মানুষের দায় মহামানবের দায়, কোথাও সীমা নেই। অন্তহীন সাধনার ক্ষেত্রে তার বাস।... দেশ কেবল ভৌমিক নয়, দেশ মানসিক। মানুষে মানুষে মিলিয়ে এই দেশ জ্ঞানে জ্ঞানে, কর্মে কর্মে।...আমরাও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গ করেছি। সেই ভবিষ্যতকে ব্যক্তিগতরূপে আমরা ভোগ করব না।...ভবিষ্যতে যাঁদের আনন্দ, যাঁদের আশা, যাঁদের গৌরব, মানুষের সভ্যতা তাঁদেরই রচনা। তাঁদেরই স্মরণ করে মানুষ জেনেছে অমৃতের সন্তান, বুঝেছে যে, তার সৃষ্টি, তার চরিত্র, মৃত্যুকে পেরিয়ে।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথাগুলো শেখ হাসিনার জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। তিনি দেশের ভবিষ্যতের জন্য উৎসর্গ করেছেন নিজের বর্তমান। ব্যক্তিগতভাবে বর্তমানকে ভোগ করেন না তিনি। কাজেই তাঁকে নিয়ে গর্ব করতে পারে বাঙালী জাতি। তিনি আমাদের পরম গর্বের ধন। লেখক : অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক [email protected]
×