ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

ব্যাংকিং সেক্টরে এখনও দক্ষ মানবসম্পদের অভাব

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

ব্যাংকিং সেক্টরে এখনও দক্ষ মানবসম্পদের অভাব

ধীরে ধীরে ব্যাংকিং সেক্টরে মীড এবং জুনিয়র লেভেলে দক্ষ মানব সম্পদের অভাব হ্রাস পাচ্ছে। এমনকি নারী অফিসারদের সংখ্যা কমে এসেছে। অথচ ব্যাংকিং সেক্টরে সার্বিকভাবে ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং চালুর পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও গঠনমূলক হওয়ায় আগের তুলনায় কাজের চাপ কমে এসেছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকিং সেক্টরে দক্ষ মানবসম্পদের অভাব প্রকট হয়ে আসছে বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট এবং কয়েকটি সরেজমিন জরিপে বেরিয়ে এসেছে। অথচ ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোন অভাব নেই। উদ্ভাবনী ব্যাংকিং কার্যক্রম ও দক্ষ ব্যাংকারের অভাবে সমাধা কষ্টকর হচ্ছে। অন্যদিকে ঋণ খেলাপী যে বাড়ছে তাও কিন্তু দক্ষ ব্যাংকার এবং সার্বিক ব্যাংকের ইন্টার্নাল, এক্সটানাল, সরকারী অডিট কার্যক্রম, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ঠিক সময়মতো পরিচালিত না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে। পাশাপাশি ফরেনসিক অডিট কার্যক্রম ব্যাংকে চালু হলে যে সমস্ত ব্যাংকার ঠিকমতো হয় দক্ষতা, অজ্ঞতার অভাবে কাজ করছেন না কিংবা আলসেমি করে কাজ করছেন না অথবা যে মাফিয়া চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ব্যাংকিং সেক্টর তখন দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবকে প্রকট করে তুলেছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত এ চক্রটি ভাঙ্গার কাজ সমাধা করে তোলা বাঞ্ছনীয় ছিল। উদাহরণ হিসেবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও কর্মসংস্থান ব্যাংক এখন রুগ্ন প্রায়। নব্বইয়ের দশকে যখন আমি একটি সদ্য বিরাষ্ট্রীয়করণকৃত ব্যাংকে যুক্ত হই তখন আমাদের দু’মাসের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ যত না বাস্তবসম্মত ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল তাত্ত্বিক। আমরা ওই ব্যাংকের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বার বার জিজ্ঞাসা করতাম-প্র্যাকটিক্যাল কবে শিখব। প্রিন্সিপাল বলতেন, শাখায় গেলে কাজের চাপ বাড়লে শেখা যাবে। আরেকটি কথা তিনি স্মরণ করিয়ে দিতেন, ব্যাংকিং সেক্টরে কেউ যদি কাজ শিখতে চায় তবে তাকে হাতে কলমে শেখার জন্য অবশ্য পাস্ট রেকর্ড-ভাউচার, লেজার, ডেইলি এ্যাফেয়ার্স, স্টেটম্যান্টগুলো কিভাবে লেখা হয়েছে, সংরক্ষণ করা হয়েছে সেটির প্রতি ভাল করে অবসর সময়ে খেয়াল রাখা দরকার এটিকে তিনি অবসর ট্রেনিং বলে অভিহিত করতেন। অন্যদিকে প্রশিক্ষণ দিতে এসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক একটি কথা বলেছিলেন, সব সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার আর নিজের ব্যাংকের সার্কুলার মুখস্থ করে ফেলতে। এটি আমার কাছে বেদবাক্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরে সে সময়েও দুর্নীতি ছিল। কিন্তু যেহেতু সার্কুলার মুখস্থ থাকার এর প্রায়োগিক কৌশলটি জানা থাকায় যখনই ওপর থেকে চাপ আসত তখনই অন্য শাখায় ওই বিষয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে আলাপ করে সেটি সমাধার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করতাম। বিআইবিএমএ যখন প্রশিক্ষণ নিতে যাই তখনও ইন্টার্নি পিরিয়ড শেখ হয়নি। ফরেন এক্সেচেঞ্জ ব্যাংকিংয়ে বিশেষত সে প্রশিক্ষণটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন বর্তমানে বিআইবিএম-এর ডিজি যিনি কিনা সে সময়ে অত্যন্ত দক্ষ ফ্যাকাল্টি ছিলেন। তার ক্লাসগুলো চমৎকার বাস্তবসম্মত উদাহরণে ভরপুর ছিল। এখনও বিআইবিএমের মান আগের মতো আছে কিনা জানি না, হয়ত রয়েছে। তবে সম্প্রতি পিলে চমকানোর মতো কয়েকটি জরিপ বিআইবিএমটি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের গষেণামূলক একটিতে দেখানো হয়েছে ব্যাংকিং সেক্টরে মানব সম্পদে নারীদের চাকরির হার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। আরেকটি জরিপে দেখলাম, বিআইবিএমের মতে ব্যাংকিং সেক্টরে সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারদের একটি বড় অংশ জড়িত থাকে। আমার ২৮ বছরের কর্মজীবনের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৩ বছর কেটেছে ব্যাংকে। কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। একটি বাস্তব উদাহরণ দেই। আমি তখন বিএসআরএসের কাওরানবাজার শাখার এজিএম। একটি হোটেলের মালিক ১০ কোটি টাকার ঋণের জন্য আবেদন করলেন। ঋণটি প্রসেস করার আগে কর্মকর্তাদের পাঠালাম। তারা বেশ ভাল রিপোর্ট দিলেন। কিন্তু গোলবাধল আমার সঙ্গে আলোচনায়। সকালে কোলাটেরাল হিসেবে সে সময়ের সামনের জায়গা সেটি এখন ঘেরা দেয়া এবং গর্ত হয়ে গেছে সেটি দিতে চাইলেন। আমি বললাম হবে না। ঐদিন বিকালেই দিতে চাইলেন আশুলিয়ার ইটভাটার জায়গা-সোজাসাপটা আমার জবাব- জমি কিছুতেই আপনাদের হতে পারে না। পরের দিন সকালে উনি যখন গুলশানের বাড়ি দেয়ার কথা বলে ফোন করছেন তার আগেই আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায় থেকে দু’বার ফোন পেয়ে গেছি। তখন আমি পূর্ব দিনের তারিখে এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকিং সংশ্লিষ্ট নয় বরং প্রজেক্ট ইমপ্লিমেটশান ডিপার্টমেন্টের আওতাভুক্ত হিসেবে লিখে চলেছি। আসলে তখন যে কাজ করতে হয় সেটি নিষ্ঠার সঙ্গে করা প্রয়োজন। তবে একটি জিনিস দেখেছিÑ ব্যাংকে দুর্নীতি থাকুক না থাকুক পরচর্চা ও মিথ্যে অপবাদ কম হয়। আসলে সময় এসেছে একটি গঠনমূলক কর্মপদ্ধতি তৈরি করা যাতে ব্যাংকিং সেক্টরে দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ তৈরি করা। নচেৎ ভুল-ভ্রান্তি থেকেই দুর্নীতিবাজরা সুযোগ-সুবিধা নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ দিনের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়ার যে রেওয়াজ করেছে এটি এক মাসে উন্নত করা উচিত। আমাদের সময় ইন্টারনাল অডিট-এক্সটার্নাল অডিট ছিল। শেষোক্তের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, চার্টার্ড এ্যাকাউন্টিং ফার্ম এবং সরকারী নিরীক্ষা ছিল। তবে অধুনা বিভিন্ন প্রকল্পে ফরেনসিক অডিটের যে সূচনা ঘটেছে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা নিরীক্ষা করবেন তারা যেন আবার সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পর্কে দক্ষ হোন সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আমাদের সময়ে যারা বিভিন্ন শাখায় দুর্নীতি করতেন, তাদের সিংহভাগকে অডিট বিভাগে বদলি করত সে সময়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এ আশায় যেÑ তারা যেহেতু অন্যায় প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা অতি সহজেই অন্যায় খুঁজে বের করবে। এখন উচ্ছ্বল ও মেধাবী তরুণ-তরুণীরা অনেক বেশি বেতনে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে ঢুকছে। একটি ব্যাংকে দেখলাম ৮৫ হাজার টাকা দেবে, আরেকটিতে ৬৫ হাজর টাকা দেবে। অথচ সরকারী ৮ম স্কেলে বেতন কত? অতিরিক্ত বেতনের জন্য অল্প সময়ে মাথা বিগড়ে যায়Ñ ন্যায়-অন্যায় মনে থাকে না; ইচ্ছে থাকলেও হয়ত শিরদাড়া সোজা করে বিরোধিতা করতে পারে নাÑ আর ধান্দায় থাকে কখন ওই ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে সামান্য বেশি বেতনে চলে যাওয়া যায়। ফলে গ্রাহক সেবার মান নি¤œমুখী। চলতি বছরের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিআইডিএসের যে সম্মেলন হয় তার বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাংকাররা যেভাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে মনে হয় ব্যাংকিংয়ে কেবল মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠান কিংবা অর্থ লোপাট হওয়ার প্রতিষ্ঠান অথবা ঋণখেলাপী সংস্কৃতি তৈরি করার প্রতিষ্ঠান তা নয় বরং এটি যে সমাজকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান সেটি ভুলে গেছে। বর্তমানে সরকারের বিশেষ নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এসএমই লোন বিতরণ এবং নারী উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাংকাররা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন না। এটি আসলে একটি বড় ধরনের সমস্যা। আমার পোস্ট ডক্টরেল রিসার্চ অন এটিস্প্রিউনিউরিয়াল ম্যানেজমেন্টের গবেষণার জন্য দেশের একজন শীর্ষ স্থানীয় নারীবাদী, সংবাদ জগতের নারী চেয়ারম্যান এবং নারী উদ্যোক্তা চেম্বারের প্রধানের সঙ্গে কয়েক বছর আগে ডাটা কেন নেই জানতে চেয়েছিলাম। মাঝখান থেকে হলো কি ভদ্রমহিলা আমি সে সময়ে যেখানে চাকরি করি সেখানে আমার কর্মরত বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানের কাছে বদনাম করলেন। পরে যখন উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, উনি চুপ করে রইলেন। অবশ্য গবেষণা থেকে থাকেনি। সেদিন থেকে সুশীল সমাজের প্রতি আমার এক ধরনের বিতৃষ্ণা- খালি বলে কর্পোরেট গবার্নেন্সের কথা। আরেকটি কথা না বললেই নয়, ব্যাংকারদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সদা সজাগ থাকা বাঞ্ছনীয়। এ দেশের গোয়েন্দারা এবং দুদুক তদন্ত করে দেশ থেকে বিদেশে সে অর্থ পাচার মালওয়্যারের মাধ্যমে ঘটেছে বলে দাবি করেছে সেটির ক্ষেত্রেও প্রাথমিকভাবে জিডি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে করেছে তাতে প্রতীয়মান হয় যে, কর্তব্য কর্মে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা দায়ী ছিলেন। অথচ এককভাবে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর মহোদয়কে যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। যে দুজন উর্ধতন কর্মকর্তা অর্থাৎ ডেপুটি গবর্নরকে দায়িত্ব পালনে অব্যাহতি দেয়া হয় তাদের আসলেই বাস্তবতা বিবর্জিত বিভাগে দায়িত্ব দেয়া ঠিক হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গবর্নর পদে দীর্ঘ ২৫ বছর বা তদুর্ধ্ব সময়ে কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকে চাকরি করে সুনামের সঙ্গে ন্যূনতমপক্ষে পাঁচ বছর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপে কাজ করেছে এমন কাউকে ডেপুটি গবর্নর পদগুলোর একটিতে পদায়ন করা প্রয়োজন। সামনে যখন বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গবর্নর পদে লোক নেয়া হবে তখন অন্তত খন্দকার ইব্রাহীম খালিদ সাহেবের মতো না হোক বাণিজ্যিক ব্যাংকিং সম্পর্কে তোতা পাখির মতো একাধারে নিয়ম নীতিগুলো যেন মুখস্থ থাকে একই সঙ্গে ফ্লিড লেভেলে এগুলো কিভাবে বাস্তবায়িত হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধ্যান-ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। আসলে সরকারের যত শুভ উদ্যোগই থাক না কেন ব্যাংকিং সেক্টরে নীতিমালাগুলো বাস্তবায়নে ন্যূনতপক্ষে ডেপুটি গবর্নর পদে একজন হলেও দক্ষ বাণিজ্যিক ব্যাংকার প্রয়োজন। ডেপুটি গবর্নর পদটি কখনও কেবল প্রমোশনের পদ হতে পারে না। সারা বাংলাদেশ বর্তমান সরকারের অনুসারীর কম নেই। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় হয়ত পদ একটি অথচ প্রার্থী যারা বর্তমান সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়ন করবেন তাদের সংখ্যা ২০-২৫ জন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ নিয়ে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠান করেছিলেন যেমন কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বর্তমানে যুগপৎভাবে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) তারা মূলত প্রতিষ্ঠাকালীন মূল উদ্দেশ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। কৃষি ব্যাংক বা রাকাবে উচিত নয় বড় করে ট্রেড ফাইন্যান্সিংয়ের কাজ করা। অথচ তারা কৃষি, গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প, গ্রামীণ এলাকায় সঞ্চয় বিনিয়োগ ব্যবস্থা তৈরি করলে তাদের কর্মকা- এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচীতে ব্যাপক কর্মসূচী দরকার। যখন একজন বাণিজ্যিক ব্যাংকার কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয় তিনি তো মোটা দাগে ব্যাংকিং জানেন কিন্তু কিভাবে কৃষির ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন করা যায়, কৃষি উন্নয়নের জন্য নিয়ম মেনে রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করে তার প্রয়োগিক কৌশল গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। অথচ তারা এখন অর্থমন্ত্রীর ভাষায় ট্রেড ফাইন্যান্সিং করতে গিয়ে নন পারফর্মিং লোনের বেড়াজালে আটকে যাচ্ছে। তাদের উচিত ইনফর্মাল মার্কেটে কাজ করে ফর্মাল সেক্টরে কিভাবে মানবসম্পদ তৈরি করা যায় সে ব্যাপারে দক্ষতা ও কার্যকারিতার পরিচয় দেয়া। মানবসম্পদকে যদি বিশেষায়িত করা হয় তবে কৃষি ব্যাংকও হয়ে উঠতে পারে ভিশন-২০২১ এর অন্যতম হাতিয়ার। এদিকে অর্থনীতিতে যে উবধফ বিরমযঃ ষড়ংং ফর্মাল সেক্টর হচ্ছে তার অনেকখানি কিন্তু ব্যাংকারদের অদক্ষতা, অকর্মণ্যতা এবং কাজ না জানার কারণেই হচ্ছে। অন জব ট্রেনিং এবং অফ জব ট্রেনিং দুটো ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। যাকে যে বিষয়ে ট্রেনিংয়ে পাঠানো হচ্ছে, সে যেন পারঙ্গম হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরে বিশেষত পাবলিক লিঃ ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রেও জবাবদিহিতা অবশ্যই মন্ত্রণালয়ভিত্তিক না করে বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে করা উচিত। দেশে ব্যাংকাররা যদি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতেন তবে প্যারাডাইস পেপার্সে বাংলাদেশীর নাম থাকত না। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের সুস্পষ্ট নিয়মনীতি এক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে। প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, আউটপুট কি হচ্ছে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার। উচ্চ বেতন দিলেই যে দুর্নীতিমুক্ত ব্যাংকার পাওয়া যাবে সেটি ঠিক নয়। সে জন্য দরকার বেসরকারী খাতে সর্বোচ্চ বেতন স্কেল বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারণ করা। সরকার যেখানে দেশকে এগিয়ে নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সেখানে যোগ্য ও দক্ষা ব্যাংকার তৈরি করা এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকল্প অধিক হারে গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয় সেদিকে খেয়াল রাখা ও প্রেষণা দেয়া দরকার। ব্যাংকাররা অযথা তৃতীয় পক্ষকে কাজে না লাগায় সে জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা দরকার। ব্যাংকিং খাতে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ সাজসজ্জার নামে যে বিপুল অর্থ ব্যয়িত হচ্ছে তা কেবল শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ধ করতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা দরকার। লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট pipulbdgmail.com
×