ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সময়জ্ঞান

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

সময়জ্ঞান

জাপানের রাজধানী টোকিওর উত্তরাঞ্চলীয় শহরতলীর মধ্যে চলাচলকারী একটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের মাত্র কুড়ি সেকেন্ড আগে স্টেশন ছেড়ে চলে যায়। ফলে এতে যাত্রীদের ‘ভীষণ অসুবিধার’ জন্য সংশ্লিষ্ট রেলের অপারেটর গভীর দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। এই সংবাদ রীতিমতো বিস্ময়ের জন্ম দেবে সময়ের ব্যাপারে যারা কিঞ্চিত অজ্ঞান, তাদের। মানে যাদের সময়জ্ঞান বড়ই শিথিল। পৃথিবী তো বসে থাকে না, সে অবিরাম সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। আমরা কথায় কথায় বলি, সময় ও স্রেত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। তো, তর্কের খাতিরে বলাই যায় জাপানের ওই রেলের একবারে তর সয়নি, কুড়ি সেকেন্ডও সে অপেক্ষা করতে পারেনি, দৌড় দিয়েছে। বিষয়টি ইচ্ছাকৃত নয়, ‘ভুল’। সেজন্যে অবশ্য কোন যাত্রী নালিশ জানাননি, মামলাও ঠোকেননি। কিন্তু নৈতিকতার জায়গা থেকে রেল কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এটি সময়ানুবর্তিতা, সৌজন্য ও ভদ্রতার এক বিরল নজির। অবশ্য এ ধরনের ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধের জন্য জাপানের নাগরিকদের পূর্বসুনাম রয়েছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী সেই সুনামের আরেকটি অধ্যায় বহুল প্রচারিত হলো। এবার আসা যাক বাংলাদেশের রেলের প্রসঙ্গে। একটা মজার বাক্য তো চালুই আছে নয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে? অর্থাৎ ট্রেনের স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কোন টাইমটেবিল নেই। প্লাটফর্মের দেয়ালে বড় বড় করে লেখা থাকলেও ট্রেন আসা ও যাওয়ার সময়ের সঙ্গে সাধারণত সে লেখার সময়ের মিল পাওয়া যাবে না। রেল চলে গদাইলস্কর চালে, তার খেয়াল খুশি মাফিক। অবশ্য বর্তমানে পূর্বের অবস্থা থেকে রেল অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। একমাত্র ঈদের সময় সেই সূচি অনেকটা ল-ভ- হয়ে যায়। অন্য সময়ে কাঁটায় কাঁটায় নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশনে ট্রেন প্রবেশ না করলেও কিছু বিলম্ব হয়ে থাকে। এটাকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নেয় বাঙালী যাত্রী। কিন্তু দু’চার ঘণ্টা যদি দেরি করে আসে কোন ট্রেন, সেজন্য কি কখনও মৌখিক দুঃখ প্রকাশ করে থাকে কর্তৃপক্ষ? তবে শুধু রেলের সময়জ্ঞান এবং কর্তৃপক্ষের কা-জ্ঞান নিয়ে কথা বললে কিছুটা একপেশে হয়ে যায় বিষয়টি। দেশে এমন কোন নামী-দামী বড় প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কি রয়েছে যাদের সময়জ্ঞান টনটনে? সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কি ঘোষিত সময়ে অনুষ্ঠান শুরু করার চল রয়েছে? বিয়েবাড়ির কথা বাদই দিলাম, অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক আয়োজনের বেলায় দেখা যায় গেস্ট এসে গেছেন, হোস্ট আসেননি। আবার আয়োজক-আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রায় সবাই এসে গেছেন, আসেননি সভাপতি কিংবা প্রধান অতিথি। শুধু তার জন্য শত মানুষ বসে থাকেন। কাক্সিক্ষতজন এলে তবেই শুরু হয় অনুষ্ঠান। এতে যে অনেক মানুষের মূল্যবান অনেক সময়ের অপচয় হলো এটা ধর্তব্যেই নেন না সেই ভিআইপি। দুঃখপ্রকাশ তো দূরের কথা। সিনেমার একটি গান বেশ জনপ্রিয় এক সেকেন্ডের নাই ভরসা, বন্ধ হইবো রং তামাশা চক্ষু মুদিলে। হ্যাঁ, জীবনের জন্য সত্য হলো, এক সেকেন্ডও ভরসা নেই। শুধু এক্ষেত্রেই আমাদের অনেকেই সেকেন্ডের মূল্যটা কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারেন। অন্য কোন ব্যাপারে ৬০ সেকেন্ডও তার কাছে কদর পায় না। এমনি অনেক সময় ষাট মিনিটও নয়। জাপানের রেলের কুড়ি সেকেন্ড আগে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তাই তাদের জন্য গভীর শিক্ষণীয়। অথচ যারা মোটেই সময়ানুবর্তী নয়, তারা এটাকে নিছক কৌতুক ও নির্বোধের বাড়াবাড়ি বলেই মনে করবে। সময়ের কাজ সময়ে করা যেমন দরকার, তেমনি সময়ানুবর্তী হওয়াও মানুষের জন্য জরুরী। সময় অমূল্য সম্পদ এটুকু বুঝে তা মেনে চললেই জীবনে চলার পথে বিবিধ ক্ষতি কমানো সম্ভব।
×