ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুগাবের পতনে তারাই ছিলেন অন্যতম নিয়ামক শক্তি

জিম্বাবুইয়ের রাজনীতিতে প্রবীণ যোদ্ধাদের অগ্রণী ভূমিকা

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

জিম্বাবুইয়ের রাজনীতিতে প্রবীণ যোদ্ধাদের অগ্রণী ভূমিকা

জিম্বাবুইয়ের লৌহমানব রবার্ট মুগাবে গত মঙ্গলবার তার ৩৭ বছরের শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করেছেন বলা ভুল হবে বরং বলা যায়, তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর তিনি ও তার স্ত্রীর দায়মুক্তির শর্ত দিয়ে মুগাবে পদত্যাগ করেন। এর আগে মুগাবে সব সময়ই বলে এসেছিলেন যে, তিনি কখনও ক্ষমতা ছাড়বেন না, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে, প্রেসিডেন্ট পদে থেকেই তার মৃত্যু হবে। জীবনের দীর্ঘপথ রোডেশিয়ার শ্বেতাঙ্গ শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ১৯৮০ সালে স্বাধীন জিম্বাবুইয়ের প্রতিষ্ঠা করেন। সেজন্য তিনি আফ্রিকান জাতিসমূহের মুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ ও নেলসন ম্যান্ডেলার মতো সমপর্যায়ের নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। কিন্তু ম্যান্ডেলা যেমন ক্ষমতালিপ্সার উর্ধে ওঠে নিজেকে বিশ্ব নেতা হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছেন, মুগাবে তা পারেননি। তাই সুদীর্ঘকাল (৩৭ বছর) দেশ শাসনের পর তাকে ৯৩ বছর বয়সে অবমাননাকর বিদায় নিতে হলো। ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার কয়েকদিন আগেও কেউ কল্পনাই করতে পারেনি যে, এত তাড়াতাড়ি মুগাবে যুগের অবসান হবে। তাই রাজনীতি বিশ্লেষকরা তার পতনের পটভূমি বিশ্লেষণ করে নানা ধরনের কারণ ও বিচার বিশ্লেষণ করছেন। এসব বিশ্লেষণে যেসব তথ্য ওঠে এসেছে তাতে দেখা যায় মুগাবের ক্ষমতার ভিত্তি প্রধানত তিনটি ভিত্তির ওপর আশ্রয় করে গড়ে উঠেছিল। প্রথম ভিত্তিটি ছিল ক্ষমতাসীন দল জানু পি-এফ, দ্বিতীয়টি সেনাবাহিনী এবং তৃতীয়টি প্রবীণ সেনা কর্মকর্তা ও যুদ্ধকালীন সহযোদ্ধা দল। স্বাধীনতাকামী এই সহযোদ্ধা দলটি ছিল মুগাবের কট্টর সমর্থক। মুগাবের দক্ষিণ হস্ত বলে পরিচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমারসন নানগাগওয়াকে পক্ষকাল আগে যখন কোন কারণ ছাড়াই পদচ্যুত করা হয় তখনই ব্যাপকভাবে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, মুগাবে পতœী গ্রেস মুগাবে (৫২) জিম্বাবুইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, যার মূল উদ্দেশ্য তার নবতিপর বৃদ্ধ স্বামীর মৃত্যুর পর সেদেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া। দারিদ্রক্লিষ্ট ও অত্যন্ত নিম্ন পর্যায় থেকে উঠে আসা গ্রেস মুগাবের বিলাসবহুল ও অপব্যয়ী স্বভাবের জন্য জনগণ তাকে রীতিমত ঘৃণার চক্ষে দেখত। অথচ মুগাবে তাকেই সে দেশের মহিলা লীগের প্রধান আসনে বসিয়েছিলেন। দেশের অর্থনীতি যখন চরমভাবে বিপর্যস্ত, কর্মসংস্থান নেই, যুব সমাজ বেকার তখন মুগাবে ও মুগাবে পতœীর বিলাসবহুল জীবনযাপনে সাবেক সহযোদ্ধারা নিজেদের প্রতারণার শিকার বলে মনে করতে থাকে। এ প্রসঙ্গে জিম্বাবুইয়ে স্বাধীনতা যোদ্ধা দলের সেক্রেটারি জেনারেল ভিক্টর মাতেমাদানদা বলেন, ঘটনার ধারাবাহিকতায় মুগাবের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক একেবারে ভেঙ্গে যায়। এরপর গত সপ্তাহান্তে সেনাবাহিনী যখন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে তখন হাজার হাজার সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধের লড়াকু নেতারা যোগদান করেন। তাদের মুখে এক কথা মুগাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। স্বাধীনতার সকল সুযোগ-সুবিধা নিজে ও পরিবারের সকলে মিলে ভোগ করেছেন এবং দেশবাসী বঞ্চিত হয়েছে। অথচ অতীতে মুগাবে তার ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য যতগুলো পাতানো নির্বাচন করেছেন, সবগুলোতে তার সহযোদ্ধা দল ও তাদের তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগিয়েছেন। এরা তাদের সহিংস নির্বাচনী তৎপরতার সময় বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি, মারপিট এমনকি হত্যাকা-ও ঘটিয়েছে। এরও আগে ২০০০ সালে জিম্বাবুইয়ে বসবাসরত শ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের জমিজমা ও খামারগুলো কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই দখল করে নেয়ার জন্য এসব স্বাধীনতা যোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়ে। এসবের পিছনে মুগাবের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল বলে জানা যায়। এএফপি
×