ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিনাইয়ে জঙ্গী আস্তানায় বিমান হামলা

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

সিনাইয়ে জঙ্গী আস্তানায় বিমান হামলা

উত্তর সিনাই উপদ্বীপের শুক্রবার জুমার সময় একটি মসজিদে বোমা ও বন্দুক হামলায় তিন শতাধিক নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিশোধ নিতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের অঙ্গীকার করেছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি। শুক্রবার বির আল-আবেদ শহরের আল রাওদা মসজিদে প্রথমে বোমা হামলা, পরে প্রাণ বাঁচাতে ছুটে বেড়ানো লোকদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। মিসরের সেনাবাহিনী জানায়, এর জবাবে সন্ত্রাসীদের আস্তানা লক্ষ্য করে তারা বিমান হামলা চালাবে। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও ডয়চে ভেলে অনলাইনের। সাম্প্রতিক মিসরের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই হামলার দায় এ পর্যন্ত কেউ স্বীকার করেনি। যদিও ইসলামিক স্টেট আগের হামলাগুলোর দায় নিজেদের কাঁধে নিয়ে নিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট শুক্রবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এটাকে কাপুরুষোচিত হামলা বলে আখ্যা দেন। তিনি নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, হামলাকারীরা শাস্তি এড়াতে পারবেন না। সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ এই হামলার প্রতিশোধ নেবে। নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে। হামলার কয়েক ঘণ্টা পর মিসরীয় বিমান বাহিনী পাহাড়ী এলাকার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। বেশ কয়েক বছরে মরু অঞ্চলে মিসরীয় সেনাবাহিনীকে ইসলামপন্থী বিদ্রোহী ও ইসলামিক স্টেটের জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। জঙ্গীরা সাধারণত খ্রীস্টানদের গির্জা, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও সুফি মুসলমানদের মসজিদের ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলা চালায়। সিসি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের চেষ্টাকে বন্ধ করে দিতে এই হামলা চালানো হয়েছে। সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী এই শাহাদতের প্রতিশোধ নেবে। মিসরের টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গেছে, রক্তাক্ত লাশগুলো মসজিদের ভিতরে পড়ে রয়েছে। তাদের অধিকাংশের মুখম-ল সাদা কাপড়ে ঢাকা। কোন কোন মরদেহ মসজিদের গালিচা দিয়ে আবৃত ছিল। বির আল-আবেদ মসজিদটি মূল শহরের বাইরে হওয়ায় সন্ত্রাসীদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এটি সুফি মুসলমানদের মসজিদ হওয়ায় হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইএসের ভাষায় সুফিদের কাফের হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৬ সালে আইএস যোদ্ধারা শতবর্ষী এক সুফি ধর্মীয় নেতাকে হত্যা করার ভিডিও প্রকাশ করে। তার বিরুদ্ধে শয়তানিবিদ্যা চর্চার অভিযোগ আনে জঙ্গী সংগঠনটি। কায়রোর নীল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিমতি কালডাস বলেন, হামলার ধরন আইএসের সঙ্গে মিলে যায়। আইএসের বিরুদ্ধে সরকারী অভিযানে সহযোগিতা করার দায়ে এ হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। কালডাস বলেন, আইএস বেসামরিক লোকদের বেশি লক্ষ্যবস্তু বানায়। অতীতে তারা মিসরীয় কপ্টিক খ্রীস্টানদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ঘন বসতিপূর্ণ সিনাই উপদ্বীপে সরকারী বাহিনীর ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু ২০১৩ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে অপসারণের পর সেই হামলার কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এর পরের বছর এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩৩ সেনা সদস্য নিহত হন। তখন সিসি উপদ্বীপটিতে রাষ্ট্রীয় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছিল। মিসরীয় ওই অধ্যাপক বলেন, সিনাইয়ে পোড়া মাটি নীতির কারণে দেশের অনেকেই সরকারের সমালোচনা করেন। তবে ওই অঞ্চলটি সরকারের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং। তার মতে, ওই অঞ্চলটা পাহাড়ী মরুভূমি। খুবই অনুন্নত। সর্বোচ্চ কৌশল প্রয়োগ করেও নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। হামলাকারীরা একদিন আগে রাফা সীমান্ত পার হয়ে মিসরে ঢুকেছে। যেটা ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা অঞ্চলের প্রবেশের প্রধানপথ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এ হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। ন্যাটো সেক্রেটারি জেন্স স্টোলটেনবার্গ এটাকে বর্বরোচিত হামলা বলে আখ্যায়িত করেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেন, শয়তান ও কাপুরুষ ছাড়া এ হামলা আর কেউ করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিনাইয়ের মসজিদের হামলাকে নিষ্ঠুর ও ভয়ঙ্কর বলে নিন্দা জানান। টুইটারে এক বার্তায় তিনি বলেন, বিশ্ববাসী সন্ত্রাসবাদকে আর সহ্য করবে না। আমরা সামরিকভাবে তাদের পরাজিত করব। উগ্রবাদী হামলাকে আমরা মূল্যহীন করে দেব। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিসরের মসজিদে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। টুইটারে মোদি বলেন, মিসরের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। নিরপরাধ ব্যক্তিদের মৃত্যুতে আমরা গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। মিসরের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তুর্কী, ইতালি ও কুয়েতও হামলার নিন্দা জানিয়েছে। গতমাসে আত্মঘাতী হামলায় ১৬ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় মিসরের নিরাপত্তা বাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
×