ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খুশি ও লাজুক হতে শিখছে রোবট

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

খুশি ও লাজুক হতে শিখছে রোবট

মানুষের মস্তিষ্কের রহস্য আজও পুরোপুরি জানা যায়নি। সেই মস্তিষ্কের কাজ নকল করার চেষ্টা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা তার জটিল কাঠামো সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জন করছেন। বিশেষ করে অনুভূতি নকল করা বড় এক চ্যালেঞ্জ। সে নাকি খুশি হতে পারে, লাজুক হতে পারে। রোবটের মধ্যে কি অনুভূতি ও সচেতনতা ভরে দেয়া সম্ভব, সেই স্বপ্ন বাস্তব করতে হলে বিজ্ঞানীদের প্রয়োজন এমন এক কন্ট্রোল সেন্টার, যার ভিত্তি হবে মানুষের মস্তিষ্ক। অসাধারণ এক প্রকল্পের মাধ্যমে মস্তিষ্কের কাজকর্ম বোঝা ও কম্পিউটারে তা নকল করার চেষ্টা চলছে। মিউনিখের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোইস ক্নল ইউরোপের অন্য বিজ্ঞানীদের মতো মানুষের মস্তিষ্কের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করছেন। সেখানকার তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রো. আলোইসক্নল বলেন, ‘হিউম্যান ব্রেন প্রোজেক্টের মৌলিক আইডিয়া হলো, স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্কের যতটা সম্ভব কাজ এক কম্পিউটারে নকল করা। অর্থাৎ সবার আগে জানতে হবে, মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে। নিউরন, জৈবিক মস্তিষ্কের অংশগুলো কীভাবে কাজ করে, তারা পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে তথ্য আদান প্রদান করে, কম্পিউটারের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া কীভাবে নকল করা সম্ভব।’ ইঁদুরের মস্তিষ্কে প্রায় ৭ কোটি নিউরন রয়েছে। মানুষের তুলনায় অনেক ছোট হওয়া সত্ত্বেও কাঠামোর ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কম জটিল ইঁদুরের মস্তিষ্ক সিমুলেশনের প্রক্রিয়া বেছে নেয়া হলো। সেই মস্তিষ্কের তথ্য কীভাবে কোন কম্পিউটারে পাঠানো যায়, সেই প্রশ্ন নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে। মস্তিষ্ক শরীরের ইন্দ্রিয় থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বায়োলজিক্যাল কমান্ড বা নির্দেশ সৃষ্টি করে, যা গতির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রক্রিয়া ঠিক কীভাবে ঘটে। তার নকল করতে হলে চাই বিশাল, শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার। মিউনিখের ‘সুপার এমউসি’ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কম্পিউটার। তার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ প্রসেসর রয়েছে। কিন্তু এই কাজের জন্য সেটিও যথেষ্ট বড় নয়। প্রো. আলোইসক্নল বলেন, ‘একটি নিউরনের কম্পিউটিং ক্ষমতাকে ভিত্তি হিসেবে ধরলে বলা যেতে পারে, এমন এক কম্পিউটার হয়ত মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতার এক শতাংশের সিকিভাগ ধারণ করতে পারে।’মৌলিক পাটিগণিতের ক্ষেত্রে আমরা, মানে মানুষ কোন পকেট ক্যালকুলেটরের তুলনায় অধম। অন্যদিকে চারপাশের পরিবেশ বুঝতে আমাদের মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে। কোন্ তথ্য গুরুত্বপূর্ণ, কোন্টা নয় তা চট করে বুঝে ফেলি। অথচ তথ্য ও আনফিল্টারড ডেটা সামলাতে গিয়ে কম্পিউটার তার ক্ষমতার সীমায় পৌঁছে যায়। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার চালাতে একটা ছোটখাটো শহরের সমপরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। সে তুলনায় সাধারণ লাইট বাল্ব জ্বালানোর জন্য যেটুকু বিদ্যুত লাগে, মস্তিষ্কের ঠিক সেটুকুই প্রয়োজন হয়।
×