ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোবট যুগ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

রোবট যুগ শুরু

অনুকূলের কথা মনে আছে, সত্যজিৎ এর ছোট গল্প অনুকূল লেখা হয়েছিল অনেক বছর আগে। তখনই কলকাতার এক লোক একটি প্রাইভেট এজেন্সি থেকে তার ঘরের কাজ করার জন্য এনেছিলেন কাজ করার রোবট। তারপর কত কিছু ঘটল সেই অনুকূলকে নিয়ে। কলকাতায় এই গল্পটিকে ছায়া হিসেবে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি শল্পদৈর্ঘ্য ছবি। কিন্তু তখন খুব অবাক হলেও এখনকার জীবনে রোবটের এই বিপ্লবটা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। বরং অনেকে অপেক্ষা করে তাকিয়ে থাকে খবরের পাতার দিকে আর কোন খবর আসবে কিনা। রোবট যুগ শুরু হয়েছে। আর সেক্ষেত্রে বিপ্লবটি হবে ‘রোবটিক বিপ্লব।’ তবে গবেষকরা মনে করছেন, সাধারণের ধারণামতো রোবটিক বিপ্লব হবে না। এক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন হবে। সাধারণত আমরা রোবট বিষয়ে যেমনটা ধারণা করি যে, মানুষ কিংবা বড় খেলনার আকৃতির রোবট, বাস্তবতা তেমন হবে না। এক্ষেত্রে রোবট বলতে কোন আকৃতির যন্ত্রমানব দিয়ে যে পৃথিবী ছেয়ে যাবে, এমনটা মানতে নারাজ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন হবে। এক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পুতুলের মতো রোবট যে আপনার চারপাশে ঘুরঘুর করবে, এমনটা মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। তবে আপনার চারপাশে অসংখ্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি কাজ করবে, যেগুলোর কার্যক্ষমতা আপনার জীবনকে সহজ করে দেবে। এসব উন্নত বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রপাতিকেই রোবট বলছেন তারা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিষয়টিকে অনেকে সংজ্ঞায়িত করতে চাইছেন। এটি অনেকটা বুদ্ধিমান যন্ত্রপাতির মাঝে বাস করার মতো। অসংখ্য বুদ্ধিমান ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির একটি জোয়ার আসতে যাচ্ছে শীঘ্রই। আর এ জোয়ারে গা ভাসানোর জন্য এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্বের সব বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সাধ্যমতো স্মার্ট ডিভাইস তৈরিতে মনোযোগী হয়েছে। তারা চাইছে যেভাবে সম্ভব এ রোবট যুগে নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা মেলে ধরতে। প্রযুক্তি বিশ্বের বর্তমান ধারায় দেখা যায়, প্রতি ১০ থেকে ১৫ বছর পর পর একটি নতুন ধারা যুক্ত হচ্ছে। এ ধারায় ছিল পিসি বা পার্সোনাল কম্পিউটারের বিপ্লব, ইন্টারনেট বিপ্লব ও মোবাইল ফোন বিপ্লব। এবার সে সব বিপ্লবকে পেছনে ফেলে নতুন বিপ্লবের সময় এসেছে। বর্তমানে যেসব প্রযুক্তির উন্নয়ন হলেই রোবট বিপ্লব হবে তার একটি তালিকা করছেন গবেষকরা। এতে দেখা যায় কয়েকটি প্রযুক্তির কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। এ প্রযুক্তিগুলো সহজলভ্য হলেই তা নতুন বিপ্লবের দ্বার উন্মুক্ত করবে। এ ছাড়া রয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও মানুষের প্রস্তুতি। এক দৃষ্টিতে রোবট বিপ্লব কাছে আনার লক্ষণগুলো হলো : হার্ডওয়্যার ॥ নানা ধরনের সেন্সর ও অন্য সংবেদনশীল যন্ত্রপাতিগুলো সহজলভ্য হয়ে উঠছে। মোবাইল ফোনের সেন্সরগুলোই পরবর্তীতে রোবট বিপ্লবে কাজে লাগবে। এ ছাড়া রয়েছে ব্লুটুথ, উচ্চগতির ওয়াইফাই, কম্পিউটার চিফ ইত্যাদির সহজলভ্যতা। সফটওয়্যার ॥ প্রত্যেক বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এখন রোবট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত। তাদের অনেকেই ভার্চুয়াল এ্যাসিস্ট্যান্ট, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছে। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন উন্নতমানের সফটওয়্যার, যা এই রোবটিক বিপ্লবেরই পদধ্বনি শোনাচ্ছে। মাইক্রোসফট কর্টানা, গুগল নাউ, এ্যাপল সিরি, এ্যামাজন ইকো ইত্যাদির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও যোগ হচ্ছে অত্যাধুনিক নানা ফিচার। আইবিএমসহ বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। অন্য একটি বিষয় হলো মানুষ এ রোবট যুগকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত কি না। গবেষকরা বলছেন, মানুষ এখন আগের যে কোন সময়ের তুলনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। আর এতেই মানুষের এ রোবটিক যুগের জন্য প্রস্তুত বিষয়টি অনুমান করা যায়। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে এখন আগের তুলনায় মানুষ পরিবর্তিত হয়েছে। তাই গবেষকরা মনে করছেন মানুষ এখন রোবট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। অতীতে যে যন্ত্রপাতিগুলো খুব দামী ছিল, এখন তা কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে। আর এ কারণে প্রযুক্তি মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে। এগুলো এখন অনেকের কাছেই একঘেয়ে বিষয়। এখন সময় হয়েছে নতুন ধরনের প্রযুক্তিপণ্য দিয়ে এ চাহিদা পূরণ করার। আর এ চাহিদাই নিয়ে আসবে নতুন বিপ্লবের।
×