ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমবে

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ চিকিৎসা ও পর্যটনসহ নানা প্রয়োজনে প্রতি বছর রাজশাহী থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ যাতায়াত করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। দেশভাগের আগে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে রাজশাহীর সরাসরি রেল যোগাযোগও ছিল। অবিভক্ত বাংলায় রেল যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল রাজশাহী। কিন্তু দেশভাগের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বন্ধ হয়ে যায় ভারতের সঙ্গে রাজশাহীর যাত্রীবাহী রেল যোগাযোগ। এতে দীর্ঘকাল ধরেই ভারতে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষকে। ভারত ভ্রমণে দীর্ঘদিনের সেই ভোগান্তির অবসান ঘটতে যাচ্ছে শীঘ্রই। ঢাকা-কলকাতা ও খুলনা-কলকাতার পর এবার আলোচনায় এসেছে রাজশাহী-কলকাতা যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস। রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। আগামী ডিসেম্বরে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ বিষয়ক নীতিনির্ধারণী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহীতে। ওই বৈঠকে রাজশাহী-কলকাতা যাত্রীবাহী রেল চলাচলের বিষয়টি গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে। জানা যায়, রাজশাহী অঞ্চল থেকে ভারতগামী বিপুলসংখ্যক যাত্রীর কথা বিবেচনা করে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে রাজশাহী থেকে কলকাতা পর্যন্ত একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর প্রস্তাব পাঠান ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে। ওই প্রস্তাবে মিলেছে ইতিবাচক সাড়া। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল আলম বলেন, ট্রেনটি চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েকে একটি চিঠি লিখেছেন। দুই দেশ থেকেই আলাপ-আলোচনা করে ট্রেনটি দ্রুতই চালুর চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, এ রুট দিয়ে এখন মালবাহী ট্রেন চলাচল করছে। যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু খুব বেশি কঠিন হবে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহী-কলকাতার প্রস্তাবিত মৈত্রী এক্সপ্রেসটি যাবে মালদার সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে। রাজশাহীর মানুষের ভারত যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের সিঙ্গাবাদ, মালদা, ফারাক্কা, কাটোয়া, খাগড়াঘাট হয়ে হাওড়ায় পৌঁছানোর কথা আছে। এদিকে রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চলাচলের খবরে রাজশাহীসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। রহনপুর রেলবন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে পণ্যবাহী ট্রেন যোগাযোগ চালু রয়েছে। এজন্য দুই দেশের রেলপথও সংস্কার করা হয়েছে। নেপাল এ রুট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সার আমদানিও করেছে। নেপাল ভারত হয়ে তাদের সীমান্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রী পরিবহনে এ রুট ব্যবহার করতে রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে। তৃতীয় এ মৈত্রী এক্সপ্রেসটি চালু হলে রহনপুর রেলস্টেশন চত্বরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সুবিধা চালু করতে হবে। বর্তমানে রহনপুরে কাস্টমস অফিস থাকলেও তাদের নিজস্ব ভবন নেই। রহনপুর রেলবন্দর চত্বরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস স্টেশন নির্মাণ করার জন্য রেলওয়ের যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। সে জায়গাতেই প্রয়োজনীয় সব অফিস খোলা হবে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে। সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, তৃতীয় এ মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হলে ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব পাবে রাজশাহী। তখন রাজশাহী হয়ে উঠবে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। তাছাড়া ভারতগামী এ অঞ্চলের বহু মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করবে এ মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন। এসব বিষয় চিন্তা করেই তিনি ট্রেন চালুর বিষয়ে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি বলেন, ভারতের রেলপথ বিভাগ প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। আগামী মাসে তিনি আবার এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলবেন। তখন বিষয়টির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।
×