ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিষমুক্ত সবজি চাষ ॥ লক্ষ্মীচাপের কৃষকদের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

বিষমুক্ত সবজি চাষ ॥ লক্ষ্মীচাপের কৃষকদের মুখে হাসি

রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে গিরেন্দ্র রায় উৎপাদিত সবজি নিজে খাচ্ছেন সেই সঙ্গে বিক্রিও করছেন। বাড়ির আঙ্গিনা বা মাঠে সবজিসহ ফসল উৎপাদনের জন্য এখন তিনি জৈব সার ব্যবহার করছেন। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করার কারণে ফলনও ভাল হচ্ছে। এছাড়াও তার উৎপাদিত সবজি ও ফসলের চাহিদাও ভাল। অর্গানিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত (কীটনাশক) সবজি উৎপাদনের এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে নীলফামারী সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া, জংলীপাড়া, বিএসসিপাড়া, শীশাতলা ও মেম্বারপাড়া ছাট গ্রামগুলো। মাঠের পর মাঠ চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত বিভিন্ন জাতের সবজি। কীটনাশক ছাড়া সবজিতে কত স্বাদ এখন বুঝতে পেরে ভোক্তাদের চাহিদাও বেড়ে গেছে। বিষমুক্ত সবজি চাষ করে এখানকার কৃষক এখন স্বপ্ন বুনছেন। এই এলাকায় সবজির সকল প্রকার আইটেম উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে শীত মৌসুমের শুরুতেই সেখানে বেগুন, ফুলকপি, লালশাক, পালংশাক, কায়তা, সীম, লাউ, পুইশাক উৎপাদিত হচ্ছে। শীতের আগাম সবজি উৎপাদন করে ভাল দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। এ ছাড়া হলুদ ও আখ চাষও করছে এখানকার কৃষকরা। সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে চেখে পড়ে এসব কৃষক পরিবারের নারী পুরুষ ও শিশু মিলে নিজেদের জমিতে এবং বসতভিটার ধারে সবজি আবাদে মেতে উঠেছে। সবজি চাষীরা বলছেন কেঁচো ক¤েপাস্ট ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন তারা। ফলনও হচ্ছে বা¤পার। এতে তারা অনেক লাভবান হচ্ছে। গিরেন্দ্র রায় জানান, তিনি এবার ২৫ শতক জমিতে আগাম ফুলকপির আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে ৭০ কেজি ফুলকপি বিক্রি করেছেন ৮০ টাকা কেজি দরে। সবজি আবাদে তার স্ত্রী স্বপ্না রানী রায় ও পুত্র সন্তান পলক রায় সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, কীটনাশক ব্যবহার করে সবজি আবাদ আর করি না। এখন জৈবসার ব্যবহার করেই সবজি চাষ করছি। লালশাক চাষী কামাল শাহ জানান তিনি এবার কিটনাশকমুক্ত ৩০ শতক জমিতে লালশাক আবাদ করেছেন। বাজারে এই শাকের প্রচুর চাহিদা। তিনি জমিতেই এই শাক বিক্রি করছেন ২০ টাকা কেজি দরে। বিষমুক্ত লালশাক আবাদে তিনি জৈবসার ব্যবহার করেছেন বলে জানান। মনি চন্দ্র রায় বলেন, আমি এবারে ৩০ শতাংশ জমিতে কীটনাশক মুক্ত বেগুন চাষ করেছি। এখানে শুধুমাত্র বাড়িতে তৈরি জৈবসার ও জৈব ভিটামিন ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছি। এতে আমার সবজি চাষে খরচও কম হচ্ছে। প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি করছি ৩৫ টাকা কেজি দরে। একই গ্রামের মাধব চন্দ্র্র রায় বলেন, এবারে আমিও এক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে রাসায়নিক সার ছাড়াই কেঁচো সার ও বাড়িতে তৈরি করা জৈবভিটামিন দিয়ে কায়তা করলা ও লাউ চাষ করেছি। এতে ফলন ভাল হয়েছে। এলাকাবাসী জানায় লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের ছোট ছোট বিভিন্ন গ্রামে কীটনাশন ছাড়াই সবজি আবাদের কারণে এখন আমাদের ইউনিয়নটি বিষমুক্ত সবজি ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এলাকায় বাড়ি বাড়ি দেশী জাতের পেঁপে চাষ কর হচ্ছে। এখানকার সবজিচাষীরা জানায় পোকা দমন করতে গিয়ে যে বিষ প্রয়োগ করা হতো তা পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, বিষ প্রয়োগের যে বিধান আছে আমরা তা মেনে চলি না। ফলে একদিকে উপকারী পোকামাকড় ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষক ও ভোক্তার স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে সবজি উৎপাদন। তাই আমরা কীটনাশকের পথ ছেড়ে দিয়ে বিষমুক্ত সবজি আবাদে লাভবান হচ্ছি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোলাম মো. ইদ্রিস বলেন, চলতি শীত মৌসুমেই বিষমুক্তভাবে কৃষকরা এক লাখ ১৮ হাজার ৪২২ মে. টন সবজি উৎপাদন করছে। পাঁচ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। জেলা সদরের লক্ষীচাপ ইউনিয়নে কৃষকদের একটি সংখ্যা (৫০০ পরিবার) রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে হাতে তৈরি জৈব সার ও কেঁচো সার ব্যবহার করে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। -তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে
×