ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ফাতেমা এখন ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ফাতেমা এখন ব্যবসায়ী

মীরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের হাছিনা, ফাতেমা, ময়ুরেরনেছা, আমির হোসেনরা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে তারা এখন ব্যবসায়ী। এক সময় পেটের দায়ে সংসার চালানোর তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিলেও এখন কেউ স্টেশনারীর দোকান, কেউ বাঁশের তৈরী চাটাই বিক্রি, কেউবা আয়বর্ধনমুলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। নতুন করে শামছুন নেহার, কালো ত্রিপুরাও তাদের পুরোনো পেশা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করছে। ২০১৬ সালে করেরহাট ইউনিয়নকে ভিক্ষুকমুক্ত ইউনিয়ন ঘোষনার পর থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতিজন ভিক্ষুককে ১ লক্ষ করে অনুদান প্রদান করে তাদের ব্যবসাসহ বিভিন্ন আয়বর্ধনমুলক কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এর ধারবাহিকতায় ঘেড়ামারা এলাকার হাছিনা আক্তার, আমির হোসেন, দক্ষিণ অলিনগর এলাকার ফাতেমা আক্তার, ময়ুরের নেছা তাদের নিজ এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান দিয়েছেন। ব্যবসা থেকে যে আয় হয় তা থেকে কিছু অংশ দিয়ে সংসার পরিচালনা করে, বাকি টাকা দিয়ে ব্যবসার মূলধন বৃদ্ধি করছে তারা। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে সরে এসে সম্মানজনক পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পেরে তারা নিজেরা যেমন খুশি এলাকায়ও ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়ন সংস্থা অপকা দাতাসংস্থাপল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন ভিক্ষুকদের এসব সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। করেরহাট ইউনিয়নের ঘেড়ামারা এলাকার হাছিনা আক্তার বলেন, তার স্বামী মোখলেছ ৩ বছর আগেতার প্রতিবন্ধী ছেলেকে ফেলে চলে যায়। সেই থেকে ছেলেকে নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করতেন তিনি। ১ বছর আগে অপকা তাকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেয়। সেই টাকায় তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান দেন। দোকানের বিক্রি থেকে যে টাকা আয় হয় সেই টাকায় তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালাতে পারেন। একই এলাকার আমির হোসেন (৭৭) বলেন, ৩ বছর ধরে তিনি ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অপকা থেকে অনুদানের টাকা পেয়ে তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান দিয়েছেন। লাভের টাকার একটি অংশ দিয়ে সংসার চালান, বাকি অংশ দিয়ে দোকানের মূলধনবৃদ্ধি করেন। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেওয়ায় তিনি সম্মান বোধ করছেন। ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচীর আওতায় করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদে আরো দুজন শামছুন নেহার, কালো ত্রিপুরাকেও দুই লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। এই টাকা দিয়ে তারা দোকান দেবেন বলে জানান। অপকার নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলমগীর বলেন, অপকা সমৃদ্ধি কর্মসূচীর আওতায় ইতোমধ্যে ৬ জন ভিক্ষুককে ৬ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে করেরহাট এলাকার সকল ভিক্ষুককে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে সরে আসার জন্য অনুদান প্রদান করা হবে। করেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, অনুদানের টাকা দিয়ে দোকান ও অন্যান্য আয়বৃদ্ধিমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ভিক্ষুকরা পুনর্বাসিত হয়েছে। অপকার উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন সংগঠনের পাশাপাশি বিত্তবানরা এগিয়ে এলে ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িতদের পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে। -রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×