ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেলুন বিক্রেতা সাইদ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

বেলুন বিক্রেতা সাইদ

পথে-প্রান্তে, মাঠে ও মেলাসহ নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন আকৃতির বেলুন বিক্রি করে জীবন ধারণ করছেন চল্লিশোর্ধ সাইদ উল্ল্যাহ। বেলুন হালকা হলেও বহন করা কষ্টের। কারণ বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে দোল খায় বেলুন। গ্যাস ভরে ফুলিয়ে বিক্রি করতে হয় এ ধরনের বেলুন। নানান রঙ-বেরঙের বেলুন দেখেই আকৃষ্ট হয় শিশুরা। আবার অনেক সময় অভিভাবকরাও শিশুদের আনন্দ দিতে বেলুন কিনে নিয়ে যান। সব শ্রেণীর শিশুদের বেলুন খেলনা খুবই প্রিয়। আর যদি বেলুনের আকৃতি হয় উড়োজাহাজ কিংবা ডলফিন মাছ, তা হলে তো কথাই নেই। এছাড়া রয়েছে ঘোড়া, গরু ও জেব্রাসহ নানা ধরনের পশু পাখি ও জলজ প্রাণীর আকৃতি বেলুন। গ্যাস দিয়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বেলুনকে পশু-পাখি ও জলজ প্রাণীর মতো নানা আকৃতিতে পরিণত করা হয়। ফুলানো বেলুন বাতাসের সঙ্গে দুলতেও দেখা যায়। বেলুনের এক মাথায় সুতো দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। রঙ-বেরঙের বেলুন নিয়ে ছুটে বেরিয়ে পড়েন সাইদুল উল্ল্যাহ। কিছুদিন আগে বেলুন বিক্রেতা সাইদ উল্ল্যাহর সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার শিমরাইলে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় জানান তার আশা-আকাক্সক্ষা ও বেলুন বিক্রির নানা কাহিনী। সাইদ উল্ল্যাহ। বাবা শহির উদ্দিন। ময়মনসিংহ জেলার শ্রীবরদী থানার শংকর ঘোষ গ্রাম থেকে বিশ বছর আগে জীবিকার তাগিদে ছুটে আসেন প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জে। বর্তমানে ২০০০ টাকায় ভাড়া থাকেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৮নং ওয়ার্ডের ২নং ঢাকেশ্বরী এলাকায়। বেছে নেন দিন-মজুরের কাজ। নির্মম পাঁজর ভাঙ্গা খাটুনি দিতে হয় দিন মুজুরের কাজে। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে হয় ইট বালু। বিনিময়ে ৪শ’-৫শ’ টাকা আয় হয়। কিন্তু প্রতিদিন দিনমজুরের কাজে যাওয়া সম্ভব হয় না। কারণ ইট বালু টানার কাজ করলে সারা শরীর ব্যথা হয়ে যায়। ফলে সাইদ উল্ল্যাহ খুঁজতে থাকেন সহজ পরিশ্রমের কাজ। অবশেষে খুঁজে নেন হেঁটে বেলুন বিক্রির ব্যতিক্রম পেশা। পাইকারী বেলুন কিনে ফেরি করে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ৪০-৫০টি বেলুন গ্যাস দিয়ে ফুলিয়ে ছুটে যান বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু সড়ক-মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে বেলুন বিক্রি হয় বেশি। শিশুরা বেলুনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বায়না ধরেন বেলুনের কিনতে। ফলে তাদের অভিভাবকরা শিশুদের কিনে দিতে বাধ্য হন বেলুন। প্রতিটি বেলুন ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়। কোন কোন দিন বেলুন বিক্রি করে ৪শ’/৫শ’ টাকা আয় হয়। সাইদ উল্ল্যাহর স্ত্রী বানু আদমজী ইপিজেডে কাজ করেন। স্বামী-স্ত্রীর আয় দিয়েই চলছে তাদের সংসার। তাদের গ্রামের বাড়িতে বাবার কিছু চিহ্ন ছাড়া আর কোন সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই তার। তাদের একমাত্র শিশু পুত্র সায়েম। সাইদ উল্ল্যাহ গরিব বাবার সন্তান হওয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও স্কুলের গ-িতে পা রাখতে পারেননি। তাই কার জীবনে পূর্ণতা পাননি বলে মনে করেন তিনি। -মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে
×