ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া

বঙ্গোপসাগরের বুকে সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৩টি দেশের অংশগ্রহণে চোখ ধাঁধানো আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় এই মহড়া চলবে তিন দিন। এটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে উক্ত মহড়া সফল করতে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদস্য রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, চীন, ভারত, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের প্রতিনিধিগণ ঢাকায় আয়োজিত একটি প্রস্তুতিমূলক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে সমুদ্রে দুর্যোগকালীন সময়ে উদ্ধার তৎপরতার বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা উন্নয়নের লক্ষ্যে এক ওয়ার্কশপও অনুষ্ঠিত হয়। এখানে উল্লেখ্য, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যকার মেরিটাইম সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কোন্নয়ন, সন্ত্রাস ও চোরাচালান দমনসহ বিভিন্ন পেশাগত সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীপ্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। জানা গেছে, আগামী ২৭ নবেম্বর কক্সবাজারের ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে এ মহড়ার উদ্বোধন করবেন। পরে তিনি হেলিকপ্টারে এ মহড়ায় অংশগ্রহণকারী যুদ্ধজাহাজগুলোর প্লিট রিভিউ পরিদর্শন ও বিচ কার্নিভালের উদ্বোধন করবেন। এরপর ২৮ ও ২৯ নবেম্বর বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত হবে সম্মিলিত মহড়া। মহড়ায় যুদ্ধজাহাজগুলোকে অগ্নিনির্বাপণ, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ হতে জরুরী উদ্ধার অভিযান ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ ট্রলার ও জেলেদের অনুসন্ধান, সমুদ্রে জরুরী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ বিমান অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক জাহাজের অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা প্রদান, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজকে পোতাশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা এবং প্লিট রিভিউ অনুষ্ঠিত হবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নৌবাহিনীর মধ্যকার আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা জোরদারে এ আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ায় আইওএনএস (ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম) এর ৩২টি দেশের মধ্যে ২৩ সদস্য ও ৯ পর্যবেক্ষক দেশগুলোর নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং নৌপ্রধান, উর্ধতন নৌকর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন। উল্লেখ্য, আইওএনএসের ২৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিসিলিস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তানজেনিয়া, তিমুর, লেসেথ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্য। ৯ পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে রয়েছে চীন, জার্মানি, ইতালি, জাপান, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং স্পেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যকার মেরিটাইম সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কোন্নয়ন, সন্ত্রাস ও চোরাচালানসমূহ বিভিন্ন পেশাগত সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংস্থার প্রথম সম্মেলন ২০০৮ সালে ভারতে, দ্বিতীয় সম্মেলন ২০১০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, তৃতীয় সম্মেলন ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, চতুর্থ সম্মেলন ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এবং ২০১৬ সালে ৫ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। ২০১৬-২০১৮ দু’বছরের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী এ সংস্থার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। এই আয়োজনে দেশগুলোর নৌসেনারা একই সঙ্গে মহড়া দিচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভেদ সত্ত্বেও মহড়ায় শামিল হয়েছে মিয়ানমারও। এমন দৃশ্য নিকট অতীতে বিরল। আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমীকরণে চলমান পরিস্থিতিতে এতটা দেশের সাড়া দেয়াকে খুব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। এই মহড়ার সাফল্য ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে রাখবে এই প্রত্যাশা সবার।
×