ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির সামনে দুই পথ

ডিসেম্বর থেকে জেলায় জেলায় খালেদার গণসংযোগ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

ডিসেম্বর থেকে জেলায় জেলায় খালেদার গণসংযোগ

শরীফুল ইসলাম ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল চাঙ্গা করতে নানামুখী কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এরই অংশ হিসেবে ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী জেলায় জেলায় জনসংযোগ শুরু করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সেই সঙ্গে দলের সব কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ করবেন। এর পাশাপাশি সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন ও ২০১৫ সালের নেতিবাচক আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে দলের রাজনৈতিক ইমেজ বৃদ্ধি করতে ১৫ জুলাই লন্ডন সফরে গিয়ে বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলকে চাঙ্গা করার সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। ২ মাসেরও বেশি সময় লন্ডনে ছেলের বাসায় অবস্থানের পর ১৮ অক্টোবর দেশে ফিরেন তিনি। ২৩ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি সারাদেশে গণসংযোগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ দিনব্যাপী গণসংযোগ করেন খালেদা জিয়া। সফরের মূল গন্তব্য উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেখানে যাওয়া-আসার পথে তিনি গণসংযোগের কাজ সেরে নেন। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা অতিক্রমকালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে এলাকার সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীরা বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে রাস্তায় জড়ো হয়ে শোডাউনের চেষ্টা করে। আর এ কারণে খালেদা জিয়ার কর্মসূচী সফল হয়। এরপর ১২ নবেম্বর রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক শোডাউন করে বিএনপি। মূলত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে থাকায় এবং দীর্ঘদিন পর একটি বড় অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাওয়ায় সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এ জনসভায় শরীক হয়। এর ফলে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা কর্মসূচী পালনেও সফল হয় বিএনপি। এভাবে পর পর ২টি কর্মসূচী সফল হওয়ায় দীর্ঘ সময় পর বিএনপিতে কিছুটা চাঙ্গাভাব ফিরে আসে। এর পর দলীয় হাইকমান্ড দলকে আরও চাঙ্গা করতে অন্যান্য নতুন কর্মসূচী হাতে নেন। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। তাদেরকে দলে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। আর তারাও খালেদা জিয়ার নির্দেশ মেনে এখন থেকে নিয়মিত দলীয় কর্মকা-ে সক্রিয় থাকার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে জনমত তৈরি করতে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এ ছাড়া সুবিধাজনক সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। আর ডিসেম্বরের থেকে তিনি সারাদেশের বিভিন্ন জেলা সফর কর্মসূচী শুরু করবেন। মূলত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করতেই তিনি জেলা সফরে যাবেন। ইতোমধ্যেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন জেলা নেতাদের এ কথা জানানো হয়েছে। আর কেন্দ্রের নির্দেশ পেয়ে জেলা নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জেলা সফর কর্মসূচী পালনকালে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানোর কাজও এগিয়ে নেবেন। সেই সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থীও চূড়ান্ত করবেন। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে তণমূল নেতাদেরও পরামর্শ নেবেন। সূত্র মতে, বিএনপি হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও একাদশ জাতীয় সংসদে দল অংশ নেবে। আর এবার মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। তাই সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা যেন নির্বাচনের আগে সক্রিয় হয়ে নিজ নিজ দলীয় প্রার্থীর জন্য কাজ করে। দলীয় হাইকমান্ডের কাছ থেকে এমন বার্তা পেয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও কিছুটা চাঙ্গা হয়। আর এ কারণেই খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর বড় ২টি কর্মসূচীই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে সফল হয়। এদিকে লন্ডন থেকে খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর একদিকে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও অপরদিকে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নানামুখী তৎপরতা চালাতে থাকে বিএনপি। তবে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকায় সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে এখনও আশাবাদী হতে পারছে না বিএনপি। তারপরও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ পরিষ্কার করতে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চলার পথ যে খুব বেশি মসৃণ হবে না ধরে নিয়েই এ নির্বাচনের এক বছর আগে থেকে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে সামনে এগিয়ে যেতে চায় বিএনপি। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, বিএনপির সামনে এখন দুটি পথ। হয় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করা না হয় আন্দোলনের প্রস্তুতি জোরদার করে সরকারকে চাপে ফেলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি করা। আর এ দুই পথকে মাথায় রেখেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচী জোরদার করতে চাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আর খালেদা জিয়ার জনসংযোগ কর্মসূচী জোরদারের মাধ্যমে বিএনপি আবারও মাঠের রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। দেশব্যাপী জনসংযোগ শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবারও রাজধানীতে একটি বড় ধরনের সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। যাতে সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক লোক জড়ো করে দেশবাসীকে জানান দিতে চায় নির্বাচনে বিজয়ের জন্য তাদের দল প্রস্তুত। আর রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করে এর ঢেউ সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে দলের জনপ্রিয়তা, শক্তি ও সাধারণ মানুষের সমর্থন বৃদ্ধি করতে চায় বিএনপি। গত বছর ১৯ মার্চ জাঁকজমকভাবে জাতীয় কাউন্সিল করে ৫৯২ সদস্যের ঢাউস কমিটি দিয়েও দলকে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় করতে পারেননি বিএনপি। তাই খালেদা জিয়া লন্ডন সফরকালে তার ছেলে তারেক রহমান দল চাঙ্গা করার বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এর পর থেকেই দল চাঙ্গা করার কৌশল হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও তারেক রহমানের পরামর্শে নানামুখী কর্মসূচী হাতে নিয়ে সফল হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে বিএনপির মুখপাত্র ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া দেশের বিভিন্ন জেলা সফরে যাবেন। তিনি যেখানে যাবেন সেখানেই জনতার ঢল নামবে, কারণ তিনি এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। ইতিপূর্বে খালেদা জিয়া উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে যাওয়া-আসার পথে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভায় জনতার ঢল নেমেছিল। এতেই প্রমাণ হয় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির পক্ষে জনতার রায় আসবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শীঘ্রই বিভিন্ন জেলা সফরে যাবেন। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও দলকে চাঙ্গা করতে তিনি আরও কিছু কর্মসূচী পালন করবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে চাঙ্গা করে বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে।
×