ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২০১১ সালে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছর, ২০২০ সালে নির্মাণ শেষ করার নতুন পরিকল্পনা

সাত বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৯ ভাগ ॥এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অগ্রগতি নেই বললেই চলে

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

সাত বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৯ ভাগ ॥এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অগ্রগতি নেই বললেই চলে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজধানীর যানজট নিরসনে আশা জাগানো প্রকল্পগুলোর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ছিল অন্যতম। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা শেষে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এতে নতুন আশা জেগেছিল সবার মধ্যেই। অন্তত কিছুটা হলেও যানজট কমবে। যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয় সেখানে একটু হলেও যদি স্বস্তি মেলে, তাহলে মন্দ কি। সত্যিই তো। মন্দের তো কিছু নেই। কষ্টের বিষয় হলো, আশা জাগানিয়া প্রকল্পটির প্রায় সাত বছরের অগ্রগতির খবর খুবই হতাশাজনক। শুনলে চোখ কপালে উঠবে। ২০১১ সালে শুরু হয়ে তা শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছর। প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষে কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১০ ভাগের কম। তবুও আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বলছেন, ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে। বিমানবন্দর এলাকায় গেলে প্রকল্পের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে খিলক্ষেত থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চোখ গেলে বোঝা যাবে একটা কিছু হচ্ছে। কয়েকটি বিমও মাথা জাগিয়েছে। এরপর আর তেমন অগ্রগতি নেই। প্রকল্পের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের কাজ দৃশ্যমান হতে আরও সময় লাগবে। তবে তৃতীয় ধাপের কাজ কবে শুরু হবে তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। বিলম্ব কেন ॥ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিলম্ব হওয়ার পেছনে অন্তত পাঁচটির বেশি কারণ মিলেছে। প্রথম সমস্যা হলো, অর্থ সঙ্কট। এরপর ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও নক্সায় পরিবর্তন আনা। এছাড়াও সময়মতো অর্থ ছাড় না হওয়া ও তদারকির অভাব। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও আশাবাদী সবাই। বলছেন, ২০২০ সালে কাজ শেষ হবার কথা। যদিও সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা মোটেও সম্ভব হবে না। প্রকল্পের চলমান অবস্থা ॥ প্রকল্পের সাইট অফিস থেকে শুরু করে ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ চলছে। ছোট ছোট রঙ্গিন টিনের ঘরে অফিস করা হয়েছে। বাইরে ঝোলানো আছে সাইনবোর্ডও। তবে এলাকা সংরক্ষিত। ভারি ভারি যন্ত্রপাতি রয়েছে। কাজের গতি বাড়াতে ডোবা-নালা ভরাট করা হচ্ছে। আনা হচ্ছে বালু। এমন চিত্র শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এলাকায়। বিমানবন্দরের সামনে প্রি-কাস্ট ইয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। ওই ইয়ার্ডে এক্সপ্রেসওয়ের গার্ডার তৈরি করা হবে। পরে তা নিয়ে মূল কাঠামোর সঙ্গে জোড়া দেয়া হবে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাইয়ের কর্মকর্তারা জানান, এক্সপ্রেসওয়ের ২ নম্বর পায়ার ওপর ক্রস বিম বসানোর জন্য স্টীলের কাঠামো তৈরির কাজ শেষ। ইতোমধ্যে কংক্রিট ঢালাই হয়েছে। পরে ক্রস বিমের ওপর বসানো হবে গার্ডার। এভাবেই প্রকল্পের সুপার স্ট্রাকচার দৃশ্যমান হবে। প্রকল্পের প্রথম অংশে বিমানবন্দর থেকে বনানী ওভারপাস পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটারের মধ্যে ২৩৩ পায়ার বসবে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০ পায়ার পুরোপুরি নির্মাণ হয়েছে, আংশিক শেষ হয়েছে ২৭টির। এছাড়া বনানী এলাকাতেও কাজের কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেছে। অনেক আগেই বনানী এলাকায় সড়কের পাশে থাকা কিছু গাছপালা কাটা হয়। সরিয়ে নেয়া হয় নার্সারিগুলো। বনানী ওভারপাসের কাছে পাইলিংয়ের কাজ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। মাটির নিচে পাইলিং হয়ে গেলে ভিত্তি তৈরি করে উপরে দাঁড়াবে পায়ার। প্রকল্পের দ্বিতীয় ভাগে বনানী থেকে তেজগাঁও অংশের অধিগ্রহণ করা জমি থেকে বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার কাজও চলছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সেখানে দ্বিতীয় ভাগের মূল কাজ শুরু হতে পারে। এরপর তৃতীয় ধাপের কাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের তৃতীয় অংশের (মগবাজার থেকে কুতুবখালী) জমি অধিগ্রহণও শেষ হয়েছে। সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে আরও এক বছর পর। ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ আদৌ শেষ করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে প্রকল্প পরিচালক ফেরদৌস বলেন, সরকার আমাদের ওই পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। যেদিকে যাবে এক্সপ্রেসওয়ে ॥ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রামগামী কিংবা ঐ এলাকার যানবাহন দ্রুত পৌঁছাতে পারবে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গাড়ি নামা ও ওঠার পৃথক লুপ থাকবে। ৪৬ কিলোমিটারের দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে ॥ দেশে এ যাবতকালের নির্মাণাধীন সবচেয়ে বড় এক্সপ্রেসওয়ে হলো এটি। এক্সপ্রেসওয়ের মূল লাইনের দৈর্ঘ্য বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এছাড়া ৩১টি র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। স্প্যানম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্প এলাকা তিন অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার, দ্বিতীয় অংশে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার এবং তৃতীয় অংশে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা দেবে সরকার। বাকি টাকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই বিনিয়োগ করবে। প্রকল্পের জন্য মোট ২২০ দশমিক ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ২৫ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করবে ইতাল-থাই। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয় নির্মাণের জন্য ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে প্রথম চুক্তি করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। সে বছর ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের আপত্তির মুখে নক্সা কিছুটা পরিবর্তন হয় সাম্প্রতিক। তাদের পক্ষ থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করে নতুন আরেকটি নক্সা অনুমোদন করে সরকার। সংশোধিত নক্সায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের ওপর দিয়ে এবং কমলাপুর থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) অতীশ দীপঙ্কর সড়কের ওপর দিয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত এবং পরের অংশটি গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার অংশের ওপর দিয়ে যাত্রাবাড়ী অতিক্রম করে কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। নক্সার পাশাপাশি মহাখালী ও মালিবাগের র‌্যাম্পের অবস্থানেও পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির কাঠামোগত ধরনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যয় কমানোর জন্য এক্সপ্রেসওয়েটি বক্স গ্রিডারের বদলে আই গ্রিডারে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়েটি তিন অংশে ভাগ করে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা হবে। এক্ষেত্রে একটি অংশ শেষ হওয়ার পরই তা চালু করা যাবে। পরিবর্তিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতেই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা। ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা ॥ প্রকল্প অগ্রগতির ক্ষেতে মূল সমস্যা হলো ভূমি অধিগ্রহণ। কারণ, প্রকল্প নির্মাণের কিছু জমি সরকারী হলেও বেশিরভাগ ব্যক্তিমালিকানাধীন। তাই জমিসংক্রান্ত ইস্যুতে নানা জটিলতা সৃষ্টির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় কাজ আটকে থাকে দুই বছর। নক্সা পরিবর্তন ও মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হয়। চুক্তি সংশোধনের পর ওই বছরই শুরু হয় ভূমি জরিপ। ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর এবং ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট দুই দফা এ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রকল্প পরিচালক ফেরদৌস বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে মূল এ্যালাইনমেন্ট যাওয়ার কারণে জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হয়েছে। দুই-তিন বছর পিছিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের। তাছাড়া বিনিয়োগকারীর ফান্ডিং কনফার্ম হয়নি। এ কারণেও সময় বেশি লেগেছে। তবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আশ্বাস দিয়েছে, আগামী মাসের মধ্যেই প্রকল্পের অর্থের জোগান হয়ে যাবে। আর তা হলেই পুরোদমে কাজ শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ২০১১ সালে, ওই বছরই ভিত্তি স্থাপন; কিন্তু ছয় বছরের বেশি সময় পরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এগিয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) এ প্রকল্পে বিনিয়োগ ও নির্মাণ কাজের দায়িত্বে আছে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা আর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সময়মতো অর্থ জোগাড় করতে না পারায় দীর্ঘদিন আটকে ছিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। তবে সেসব বাধা ‘অনেকটাই কেটে যাওয়ায়’ আগামী তিন বছরে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করে ২০২০ সালে নির্ধারিত সময়েই তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া যাবে বলে আশা করছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক কাজী মুহাম্মদ ফেরদৌস। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৯ শতাংশ। কাজের গতি কম, এটা ঠিক। তবে এতদিন মাটির নিচের কাজ বেশি হওয়ায় ভিজিবল হয়নি। এখনও উপরের কাজ তেমন শুরু হয়নি। ডিসেম্বর থেকে ফুল স্যুইংয়ে কাজ শুরু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা। এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট আরও একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আর্থিক সমস্যার পুরোপুরি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান করা কঠিন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নজরদারি বাড়ানোরও তাগিদ দেন তারা। টোল আদায় ॥ যানজট এড়াতে হলে টোল পরিশোধ করে ব্যবহার করতে হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসেওয়ে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ২১ বছর পর্যন্ত উড়াল সড়কের টোল আদায় করার কথা থাকলেও নতুন চুক্তি অনুযায়ী সময় বেড়েছে বলে জানা গেছে। ২০ কিলোমিটার রাস্তার জন্য প্রাইভেটকারকে প্রতিবারের জন্য টোল দিতে হবে ১২৫ টাকা। যাত্রীবাহী বাসের জন্য টোল দিতে হবে ২৫০ টাকা। ৬ চাকার ট্রাককে দিতে হবে ৫০০ টাকা এবং ছয়ের বেশি চাকার ট্রাককে দিতে হবে সাড়ে ৭০০ টাকা। এর মধ্যে ২৫ ভাগ টোল পাবে সরকার। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৩ হাজার ৫০০ যানবাহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করবে বলে প্রাথমিক সমীক্ষায় ধরা হয়। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণ হলে নগরীর উত্তর-দক্ষিণে যানবাহন চলাচলে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। ফলে নগরবাসীর ভ্রমণ সময় কমবে। ভোগ্যপণ্য বাধাহীনভাবে চলাচল করতে পারবে। অর্থাৎ নগরীর যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ২০মিনিট। তবে টোল ছাড়া নতুন এই উড়াল সড়ক ব্যবহার করা যাবে না। ২০০৯ সালের ১৭ জুন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বৈঠকে উড়াল সড়ক নির্মাণের দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেয়া হয়। ২০১০ সালের ৪ মার্চ দেশী-বিদেশী ৯ প্রতিষ্ঠান উড়াল সড়ক নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করে প্রাথমিক প্রস্তাব জমা দেয়। এসব প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রকৌশলী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটি চারটি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য বিবেচনা করে আর্থিক এবং কারিগরি প্রস্তাব আহ্বান করে। একই বছরের ২৩ আগস্ট উড়াল সড়ক নির্মাণ রুট অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। সরকারী-বেসরকারী যৌথ বিনিয়োগে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। দেশীয় ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন সেন্টার (আইআইএফসি) এবং বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল প্রতিকিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করলেও বিদেশী বিশেষজ্ঞরা প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করেছিল। প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থ্যাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরে এ ধরনের প্রকল্পের ব্যয় বিবেচনা করে দেশীয় বিশেষজ্ঞরা প্রতি কিলোমিটারের ব্যয় নির্ধারণ করেন। তখন বিশেষজ্ঞদের তরফ থেকে জানানো হয় বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণের ব্যয় এর চেয়ে বেশি হবে না। সেতু বিভাগের তথ্যমতে, শুরুতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যয় হওয়ার কথা ছিল আট হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ তদারকিতে স্বাধীন পরামর্শক নিয়োগে ব্যয় হয় ৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটিও সরকারের তহবিল থেকে বহন করা হবে। প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ বিনিয়োগকারী ও ২৭ শতাংশ সরকারের বহন করার কথা ছিল। ২০১২ সালের ১৭ মে সড়কের নক্সায় কিছুটা পরিবর্তন এনে দৈর্ঘ্য কমানো হয় চার কিলোমিটার। ওঠানামার র‌্যাম্পের অবস্থানের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফের চুক্তি করা হয়েছে।
×