ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী থাকবেন সোহরাওয়ার্দীতে

বজ্রকণ্ঠের বিশ্ব স্বীকৃতি- আজ সারাদেশে আনন্দ শোভাযাত্রা

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

বজ্রকণ্ঠের বিশ্ব স্বীকৃতি- আজ সারাদেশে আনন্দ শোভাযাত্রা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশব্যাপী সরকারীভাবে আজ শনিবার আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। সরকারী চাকরিজীবীসহ দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ শামিল হবেন এই আনন্দ শোভাযাত্রায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল জেলা, উপজেলা পর্যায়ে, বিদেশে বাংলাদেশের সব মিশন আনন্দ শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল তিনটায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করবেন। এর আগে দুপুর ১২টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে কর্মসূচী শুরু হবে। পরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সরকারী-কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিশু-কিশোর, ক্রীড়া সংগঠন ও খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক, শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, এনজিও, স্কাউটস ও রোভার, পুলিশের সুসজ্জিত ঘোড়া, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুসজ্জিত বাদক দল, সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি এবং সর্বস্তরের জনতার অংশগ্রহণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উদ্দেশে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে। শোভাযাত্রাটি রাসেল স্কয়ার, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে সমবেত হবে। এর আগে এ আনন্দ শোভাযাত্রায় সব সরকারী চাকরিজীবীকে অংশ নেয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’ এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি লাভ করায় ২৫ নবেম্বর ঢাকা মহানগরীসহ সব জেলা ও উপজেলায় আনন্দ শোভাযাত্রা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচীটি যথাযথভাবে উদযাপনের জন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের ঢাকায় অবস্থানরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় কর্মসূচীতে এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এছাড়া গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের সদস্যরাও শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন। শুক্রবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম আনন্দ শোভাযাত্রার বিস্তারিত কর্মসূচী তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইউনেস্কো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়েছে। এ গৌরবময় অর্জনকে উৎসবমুখর ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উদযাপনের লক্ষ্যে এসব কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য জাতির জন্য একটা বড় অর্জন। এই কর্মসূচী রাজনৈতিক কোন বিষয় নয়। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কর্মসূচীতে স্বাগত বক্তব্য, প্রেক্ষাপট বর্ণনা, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হবে। এরপর প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লেজার শো অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার মতোই অনুরূপ কর্মসূচীর আয়োজন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সারা দেশেও। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সকাল দশটায় এসব কর্মসূচী শুরু হবে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা করে উপজেলায় এসে সমবেত হবে। জেলাতেও বিভিন্ন এলাকা থেকে শোভাযাত্রা করে জেলার নির্ধারিত স্থানে সমবেত হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনসমূহেও অনুরূপ কর্মসূচীর উদযাপন করা হবে। আনন্দ শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা প্যারিসের ইউনেস্কোর সদর দফতরে গত ২৯ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। ইউনেস্কো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্যের তালিকা সংরক্ষণ করে থাকে। মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারের অন্তর্ভুক্ত প্রামাণ্য ঐতিহ্যের তালিকা বিশ্ব প্রেক্ষাপটে গুরুত্ববহ। ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা এবং বিশ্ববাসী যাতে ঐতিহ্য সম্পর্কে সহজে জানতে পারে তা নিশ্চিত করা। প্রসঙ্গত, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাঙালী জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা অবিস্মরণীয় গৌরবের এক অনন্য দিন। সুদীর্ঘকালের আপোসহীন আন্দোলনে বিস্ফোরণোন্মুখ একাত্তরের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বঙ্গবন্ধুর এই তেজদৃপ্ত ঘোষণাই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি।
×