ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৫ জেলায় যৌন, প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার শীর্ষক প্রকল্প চালু

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

৫ জেলায় যৌন, প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার শীর্ষক প্রকল্প চালু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত কয়েক দশকে মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস, শিশুর বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি এবং পারিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে। এসব অর্জন সত্ত্বেও কিশোরীদের গর্ভধারণ, গুণগত মাতৃত্ব এবং নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা, নবজাতকের মৃত্যুহার এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। এখনও প্রতি বছর প্রায় ৬২ হাজার নবজাতক মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। মা, নবজাতক, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসহ সমন্বিত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার উন্নত করতে কানাডীয় সরকার, ইউনিসেফ ও ইউএনএফপিএ’র সহায়তায় দেশের পাঁচটি পিছিয়ে থাকা জেলায় ‘যৌন, প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার এবং মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা উন্নতি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চালু করেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইউনিসেফ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি উদ্বোধন করে। সংবাদ সম্মেলনে কানাডা সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী মারি-ক্লডে বিবিউ, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইউরি কাতো ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার উপস্থিত ছিলেন। ‘বাংলাদেশের মা, নবজাতক ও শিশুদের স্বাস্থ্য উন্নতিতে বাংলাদেশ সরকারের অংশীদার হতে পেরে কানাডা গর্বিত। এ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সাড়ে ১৫ হাজার জীবন রক্ষা পাবে এবং ১৭ লাখ ৫০ হাজার কিশোরী, নারী ও শিশু যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পাবে। এটা কোন ছোট বিষয় নয়। বিশ্বময় এ রকম কাজই ধীরে ধীরে পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দিচ্ছে’- বলে আশা প্রকাশ করেন কানাডা সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী মারি-ক্লডে বিবিউ। এ প্রকল্প স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদার করতে, সক্ষমতা বৃদ্ধিতে, কমিউনিটিতে সচেতনতা বাড়াতে ও শিক্ষার মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়নেও ভূমিকা রাখবে। সরকারী ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কমিউনিটি কাঠামোকে জোরদার করতেও সাহায্য করবে প্রকল্পটি। বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা ২৫টি জেলায় সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ঘিরে উন্নত বাড়িতে ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবাসংক্রান্ত আচরণ ও অভ্যাস গড়ে তুলতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করে ইউনিসেফ। এর অংশ হিসেবে ৩২টি হাসপাতালে অসুস্থ নবজাতকদের জন্য স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট (স্কানু) চালু, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নিউবর্ন স্ট্যাবিলাইজিং ইউনিট চালু এবং সেবার মান উন্নত করা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। নতুন এ প্রকল্পের অধীনে পিছিয়ে থাকা পাঁচটি জেলা- জামালপুর, মৌলভীবাজার, সিরাজগঞ্জ, রাঙ্গামাটি ও পটুয়াখালীতে এসব সুবিধা বাড়ানো হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (এসডিজি) মা ও নবজাতকের রোগব্যাধি ও মৃত্যুহার হ্রাস, কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা প্রদানে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ইউনিসেফের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। এ লক্ষ্যে এ প্রকল্প একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী উদ্যোগ।’ ইউএনএফপিএ ইতোমধ্যেই মা ও নবজাতকের মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষিত ধাত্রীদের একটি পেশাজীবী ক্যাডার তৈরিতে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করছে। এছাড়া সমন্বিত ও সুষম যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে ও যাদের প্রয়োজন তাদের কাছে বর্ধিত পরিবার পরিকল্পনাসামগ্রী এবং এ সম্পর্কিত তথ্য পৌঁছে দিতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইউরি কাতো বলেন, ‘মা ও নবজাতকের জন্য সুফল নিশ্চিত করতে হলে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা, মহিলা ও মেয়েদের প্রজননসেবা সংক্রান্ত অধিকার রক্ষা এবং শিক্ষার মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়কে ক্ষমতায়ন করার কোন বিকল্প নাই। এ কারণেই প্রকল্পটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত কৌশল নেয়া হয়েছে।’ ইউনিসেফ ও ইউএনএফপিএ উভয়েই জরুরী প্রসবকালীন ও নবজাতক সেবা প্রদানে কাজ করবে। নবজাতকের সেবা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদারকরণে নেতৃত্ব দেবে ইউনিসেফ। অন্যদিকে সেবা প্রদানের আগে ধাত্রীদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সব ধরনের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় ধাত্রীদের সম্পৃক্তকরণে মনোনিবেশ করবে ইউএনএফপিএ। দুটি সংস্থাই কমিউনিটিতে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে। পরিবার পরিকল্পনা ও কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে যৌন ও প্রজনন অধিকার রক্ষায় নেতৃত্ব দেবে ইউএনএফপিএ এবং স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা, মাতৃত্ব, নবজাতক জন্মের আগে ও পরে মৃত্যু পর্যালোচনা ও নজরদারি (এমপিডিএসআর) এবং উদ্ভাবনী ও ভাল চর্চার প্রসারে নেতৃত্ব দেবে ইউনিসেফ। বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারের সহায়তাপুষ্ট চলমান ২০১৭-২২ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি কার্যক্রমের প্রধান বিষয়গুলোর সঙ্গে মিল রেখেই এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
×