ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইনী পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

আইনী পরামর্শ

প্রশ্ন : আমার বয়স ১৯ বছর। আমি বাংলায় অনার্সের ছাত্রী। বাবা-মা, ভাই-বোনের সংসার। মধ্যবিত্ত পরিবার। মাস ৬ পূর্বে আমার ২৫ বছর বয়সী এক ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর কথোপকথনের মধ্য দিয়ে সম্পর্ক ভালবাসায় রূপ নেয়। সে ঢাকাতে তার চাচার বাসায় থাকে। আমি সে বাসা দেখেছি। একদিন তার অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে সে বলে যে, তার অফিস এটা। এ ছাড়াও সে নিজের সম্পর্কে অনেক বড় বড় পরিচয় দেয়। হঠাৎ একদিন এসে বলে তার বাবা-মা বাড়িতে তার বিয়ে ঠিক করেছে। তার বাবা অসুস্থ। সে বউয়ের মুখ দেখতে চায়। তাই তাদের কথা অনুযায়ী তাকে এখনই বিয়ে করতে হবে। আমি অপ্রস্তুত। বাসায়ও কেউ জানে না। কোন চিন্তা না করেই পরের দিন আমার কিছু গয়না, আর অল্প কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ও আমাকে এক কাজী অফিসে নিয়ে যায়। ওখানে তার চাচার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। সঙ্গে তার আরও দুই বন্ধু। ওখানে নিয়ম অনুসারে আমাদের বিয়ে হয়। সে আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। বলে যে আমরা আমাদের নতুন সংসার জীবন শুরু করার জন্য এটা ভাড়া নিয়েছি। বিয়ের দিন থেকে আমাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক শুরু হয়। বিবাহিত জীবনের ১ মাস না যেতেই সে অশান্তি শুরু করে। বাসায় আসে এক-দুই দিন পর পর। আমি একা ঘরে ভয় পাই। এক রাতে সে বাসায় ফিরলে ভীষণ রকমের ঝগড়া হয়। সে আমাকে মারধর করে এবং বলে সে নাকি আমাকে বিয়ে করেনি। আমার ভরণপোষণ এবং আমাকে দেখার দায়িত্ব তার নয়। আমি তার চাচার বাসায় গিয়ে খবর নেই। ওই বাসায় উনি থাকেন না। তার এক বন্ধুর নম্বরে কল দেই, সেটা বন্ধ। ওর অফিসে খবর নেই সেখানে ওই নামে কেউ কাজ করে না। যে কাজী অফিসে বিয়ে পড়ানো হয়েছিল গিয়ে দেখি, সেখানে অফিস নেই। সে এখন আমাকে স্ত্রী হিসেবে পুরোপুরি অস্বীকার করছে। আমি এখন অসহায়, নিরুপায়। বাবা-মায়ের কাছে ফেরার উপায় নেই। কি করব, কোথায় যাব জানালে উপকৃত হব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর, ঢাকা উত্তর : আপনার কথা শুনে মর্মাহত হলাম। জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত জেনে-বুঝে, ভেবে-চিন্তে নেয়া উচিত ছিল। যাই হোক সমস্যা যখন হয়েছে তখন সমাধানের পথ বের করতে হবে। প্রথম কথা মনোবল রাখতে হবে। জীবনে আলো-অন্ধকার দুটোই আছে। তবে মাঝে মাঝে কিছু আঁধার যেন খুব গাঢ় হয়। ভেঙ্গে পড়া যাবে না। নতুন সূর্য উঠবেই। সে পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে। যেহেতু আপনি এখন পুরোপুরি একা। তাই সবার আগে বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে তাদের পুরো ঘটনা বলতে হবে। আপনার এ সমস্যাটি ঞযব চবহধষ পড়ফব ১৮৬০-এর ধারা ৪৯৩-এর বিবাহ সংক্রান্ত অপরাধসমূহের আওতাভুক্ত। আপনি উক্ত আইনের অধীনে আপনার সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করতে পারেন। ধারা ৪৯৩ হচ্ছে প্রতারণামূলকভাবে আইনানুগ বিবাহের বিশ্বাসে প্ররোচিত কোন ব্যক্তি কর্তৃক স্বামী-স্ত্রীরূপে বসবাস। এই ধারার মূল কথা হলোÑ একজন পুরুষ একজন নারীর সঙ্গে যৌন সহবাস করবে। কিন্তু তিনি জানেন যে, উক্ত নারীর সঙ্গে তার কোন বৈধ বিয়ে হয়নি। অথচ উক্ত নারী বিশ্বাস করবেন যে, তার উক্ত পুরুষের সঙ্গে বৈধ বিয়ে হয়েছে এবং নারীর এই বিশ্বাস পুরুষটির কর্মে বা আচরণে উদ্দীপ্ত হবে। আপনার সমস্যা এই বিষয়গুলোর সঙ্গে মিলে যায়। উক্ত অপরাধের জন্য অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপরাধী দশ বছর পর্যন্ত যে কোন বর্ণনার কারাদ-ে এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
×