ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশিবাজারে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামানের জিজ্ঞাসার জবাবে এ দাবি করেন তিনি। এ মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দী ও মামলার অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে বিচারক খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান- তিনি দোষী না নির্দোষ। জবাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।’ এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদা জিয়া কোন কাগজপত্র জমা দেবেন কী না তা জানতে চান বিচারক। জবাবে বিএনপি নেত্রী বলেন, প্রয়োজন মনে করলে তিনি কাগজপত্র জমা দেবেন, একই সঙ্গে সাফাই সাক্ষীও দেবেন। বৃহস্পতিবার খালেদার নিজেকে নির্দোষ দাবি করার মধ্য দিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দ্বিতীয়বারের মতো খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে একই আদালতে তিনি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে ষষ্ঠ দিনের মতো প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন। এদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বক্তব্য দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে খালেদা জিয়া মামলার কার্যক্রমকে বিলম্বিত করছেন বলে আদালতে অভিযোগ করেছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিতে বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ বারের মতো আদালতে উপস্থিত হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে বিশেষ আদালতে এসে পৌঁছান তিনি। ১১টা ৩১ মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করেন, শেষ করেন ১২টা ৪৫ মিনিটে। তবে তার বক্তব্য শেষ না হওয়ায় আগামী ৩০ নবেম্বর শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করে আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ট্রাস্টের তহবিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম এমন কোন বক্তব্য রাষ্ট্রপক্ষের কোন সাক্ষী দেয়নি। আমার বিরুদ্ধে দুটি অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে আপনি (বিচারক) দেখতে পাবেন এই দুটি রিপোর্ট দুই ব্যক্তির হলেও বাক্য ও শব্দচয়ন অভিন্ন।’ পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, ‘২০০৮ সালের ২৫ জুন সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আজিজুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়- এই মর্মে প্রথম অনুসন্ধানী রিপোর্ট করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় অনুসন্ধানী রিপোর্টে আজিজুলের নাম কেটে মফিজুলের নাম বসানো হয়।’ তিনি বলেন, ‘ট্রাস্টের সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই, তা সত্ত্বেও দুদক কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। টাকার উৎস সম্পর্কে কোন তথ্যপ্রাপ্তি ছাড়াই এজাহার রুজু করেছেন। আমাকে ও আমার রাজনৈতিক দলকে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তিনি মিথ্যা তথ্য এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন। আর তার এই মিথ্যা বক্তব্যের সূত্র ধরে একটি রাজনৈতিক দল আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে চলেছে।’ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা, বাদী ও অনুসন্ধানকারী হারুন অর রশীদকে একজন ‘ইন্টারেস্টেড সাক্ষী’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘হারুন অর রশীদ অতি উৎসাহী ও আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ। তিনি নিরপেক্ষ অনুসন্ধান না করে নিজেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে একটি অসত্য রিপোর্ট দাখিল করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ফলে এই সাক্ষীর সাক্ষ্য আইনের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘হারুন অর রশীদ ২০০৫ সালে (বিএনপি আমলে) চাকরিচ্যুত হওয়ার কারণে তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ কারণেই তাকে আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য বেছে নেয়া হয়। তিনি স্বার্থান্বেষী মহলের ইচ্ছা ও নির্দেশনা অনুযায়ী আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আমার বিরুদ্ধে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করেন। তিনি আমার বিরুদ্ধে আদালতে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মামলার কার্যক্রম দুই সপ্তাহ মুলতবি রাখতে আবেদন জানান এবং তার স্থায়ী জামিনের জন্য আরেকটি পৃথক আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করে মামলার কার্যক্রম যথারীতি আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি রাখেন। খালেদা জিয়া বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন : কাজল ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বক্তব্য দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে খালেদা জিয়া মামলার কার্যক্রমকে বিলম্বিত করছেন বলে আদালতে অভিযোগ করেছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। মামলায় ষষ্ঠ দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তার বক্তব্য শেষ না করায় রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল। আদালতকে বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) আদালতে ৩৪২ ধারায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখানে তিনি একজন সাক্ষীর (হারুন অর রশীদ) ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে (সাক্ষীকে) ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন। তিনি এই নিয়ে ছয় সপ্তাহ বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি মুখে না বলে লিখিত বক্তব্য দিয়ে আপনাকে (বিচারক) সহযোগিতা করতে পারতেন।’ মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘৪৯৭ ধারায় তারা (খালেদার আইনজীবীরা) স্থায়ী জামিন চাচ্ছেন। কিন্তু তার জামিন স্থায়ী করার কিছুই নেই।’
×