ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউনিটপ্রতি ৩৫ পয়সা ॥ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ল

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাইকারি না বাড়লেও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রতিইউনিটে ৩৫ পয়সা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শতকরা হিসেবে গড়ে এই দর বৃদ্ধির পরিমাণ পাঁচ দশমিক তিন ভাগ। বিল মাস ২০১৭ ডিসেম্বর থেকে বর্ধিত এই দর কার্যকর হবে। আগামী জানুয়ারি থেকেই সয শ্রেণীর গ্রাহককে বিদ্যুত ব্যবহারে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কার্যালয়ে (বিইআরসি) এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের নতুন দর ঘোষণা করা হয়। বর্ধিত দামে বিদ্যুত বিক্রি করে কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা আয় করবে। এবারের দাম বৃদ্ধি থেকে ছাড় পায়নি কৃষি এবং তৃণমূলের লাইফ লাইনে থাকা গ্রাহকও। পাইকারি না বাড়িয়ে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি কেন জানতে চাইলে কমিশন চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, বিতরণ খরচ বৃদ্ধির বিবেচনায় কমিশন এই দাম বাড়িয়েছে। তিনি জানান, ২০১৫ সালের তুলনায় এবার পাইকারিতে প্রতিইউনিটে বিদ্যুতের দাম ৬ পয়সা করে কমানো হয়েছে। তিনি জানান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ২৫ ভাগ এবং অন্য বিতরণ কোম্পানির ১৩ ভাগ গ্রাহক ন্যূনতম বিদ্যুত ব্যবহার করেও যে অতিরিক্ত বিল দিত তা থেকে মুক্তি পাবেন। সব মিলিয়ে দেশে এমন গ্রাহক সংখ্যা ৯০ লাখ যাদের বিদ্যুতের দাম বাড়ার বদলে কমবে। এ ধরনের গ্রাহক শ্রেণী যাই বিদ্যুত ব্যবহার করুক না কেন তাদের আরইবি এলাকায় হলে ন্যূনতম ৯০ টাকা এবং অন্য বিতরণ এলাকার জন্য ১০০ টাকা বিল দিতে হতো। এখন ডিমান্ড চার্জ ২৫ টাকার সঙ্গে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিলই দিতে হবে। কমিশন সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে ক্ষেত্রে এনার্জি কস্ট এবং বিতরণ ব্যয় বিবেচনা করা হয়। বিতরণ কোম্পানিগুলো গড়ে ৬ টাকা ৮৪ পয়সা পর্যন্ত গ্রাহকের আঙ্গিনায় বিদ্যুত পৌঁছে দিতে খরচ করে। এর বিপরীতে বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রতিইউনিটে এখন ৬ টাকা ৫০ পয়সা রাজস্ব আদায় করছে। এতে তাদের প্রতিইউনিটে ৩৫ পয়সা লোকসান হচ্ছে। কমিশন এবার এই ৩৫ পয়সাই বৃদ্ধি করেছে। পাইকারি দর না বাড়লেও বিতরণ কোম্পানির জন্য বিদ্যুতের দাম পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এবার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এর বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য কমানো হয়েছে। অন্য বিতরণ কোম্পানির ক্ষেত্রে তা বাড়ানো হয়েছে। কমিশন আদেশে বলছে, পিডিবি বিতরণের জন্য গত অর্থবছরে বিদ্যুত কিনত ৫ টাকা ১২ পয়সায় এখন ৩৩ পয়সা বাড়িয়ে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা ৪৫০ পয়সা, আরইবির চার টাকা ২৩ পয়সার দাম ইউনিটে ১৭ পয়সা কমিয়ে ৪ টাকা ০৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিপিডিসিকে ৫ টাকা ৮৫ পয়সার বিদ্যুত কিনতে হবে ইউনিটে ৮ পয়সা বাড়িয়ে ৫ টাকা ৯২৮ পয়সায়। ডেসকোকে ৫ টাকা ৮৫ পয়সার বিদ্যুত ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৬ টাকা ০৬৬ পয়সা আর নেসকোর দাম ৬২ পয়সা কমিয়ে ৫ টাকা ১২ পয়সা থেকে ৪ টাকা ৪৯৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এবার বিদ্যুতের লাইফ লাইনে থাকা গ্রাহকের দামও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য শ্রেণীতেও ৫ থেকে ৭ দশমিক ২১ ভাগ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে। বেড়েছে কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুতের দামও। কৃষি ॥ সেচে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্প ॥ ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুতের দাম অফপিক ৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৩৮ পয়সা, পিক সময়ে ৯ টাকা ২৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৮৪ পয়সা আর ফ্ল্যাট দরের ক্ষেত্রে ৭ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছে। বণিজ্যিক ॥ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আগের ফ্ল্যাট রেইট ৯ টাকা ৮০ পয়সার স্থলে করা হয়েছে ১০ টাকা ৩০ পয়সা, অফপিক সময়ের ৮ টাকা ৪৫ পয়সার স্থলে ৯ টাকা ২৭ পয়সা এবং পিক সময়ের জন্য ১১ টাকা ৯৮ পয়সার স্থলে ১২ টাকা ৩৬ পয়সা প্রতিইউনিটের নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও মধ্যচাপ শ্রেণীর অর্থাৎ ৫০ কিলোওয়াট থেকে ৫ মেগাওয়াট, উচ্চচাপ ৫ থেকে ৩০ মেগাওয়াট এবং অতিউচ্চ চাপ ২০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ মেগাওয়াট ব্যবহারকারীদের জন্যও দর পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার পাইকারি বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোতে পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে এই অর্থ বছরে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কমিশন আশা করছে এই অর্থ সরকার বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ভর্তুকি হিসেবে দেবে। সব শ্রেণীর গ্রাহকের উপর আর্থিক চাপ কমাতে এবার পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি বলে কমিশন জানায়। এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়, প্রথম ধাপে বিদ্যুত উৎপাদনে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি ব্যবহারে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচে খুব একটা হেরফের হবে না। যাতে পাইকারি দর পরিবর্তন করার দরকার হবে। সরকার জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে আসত সেক্ষেত্রে বৃদ্ধির পরিবর্তে আরও দাম কমানো যেত এমন প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখন যে অবস্থায় দর আছে তা ধরেই হিসেব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকার দাম পুনর্নির্ধারণ করলে তা বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ॥ এবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিইআরসি ডিমান্ড চার্জ সার্ভিস চার্জকে মূল দরের সঙ্গে সমন্বয় করেছে। এর আগে বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের মতো করে অনেক ক্ষেত্রে এই অর্থ আদায় করত। এখন থেকে আর সেই সুযোগ থাকছে না। প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে এখন থেকে আর কোন নিরাপত্তা জামানত (সিকিউরিটি ডিপোজিট) নেয়া যাবে না। আর যেসব গ্রাহক প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করবেন তাদের আগের মিটারের সিকিউরিটি ডিপোজিট ফেরত দিতে হবে। কমিশনের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার সময় কমিশন সদস্য আব্দুল আজিজ খান, মাহমুদউল হক ভূইয়া, রহমান মুরশেদও উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত বিইআরসি গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর গণশুনানি করে। গ্রাহক শ্রেণী বর্ধিত দাম পূর্বের দাম শতকরা বৃদ্ধি লাইফ লাইন ০-৫০ ইউনিট ৩.৫০ ৩.৩৩ ৫.১০৫ প্রথম ধাপ ০-৭৫ ইউনিট ৪.০০ ৩.৮০ ৫.২৬৩ দ্বিতীয় ধাপ ৭৬-২০০ ইউনিট ৫.৪৫ ৫.১৪ ৬.০৩১ তৃতীয় ধাপ ২০১ -৩০০ ইউনিট ৫.৭০ ৫.৩৬ ৬.৩৪৩ চতুর্থ ধাপ ৩০১-৪০০ ইউনিট ৬.০২ ৫.৬৩ ৬.৯২৭ পঞ্চম ধাপ ৪০১-৬০০ ইউনিট ৯.৩০ ৮.৭০ ৬.৮৯৬ ষষ্ঠ ধাপ ৬০০ ইউনিটের উর্ধে ১০.৭০ ৯.৯৮ ৭.২১৪
×