পানামা পেপার্স আর প্যারাডাইস পেপার্স নামক কেলেঙ্কারি বিস্ময় জাগিয়ে তুলেছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্ব মানবের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জনগণের সেবকদের ‘পূত-পবিত্র’ অবয়বের আড়ালে লুকিয়ে আছে দেশ ও জনগণবিরোধী এক দুরাত্মা। বিশ্বের ক্ষমতাধর ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের চেহারাছুরত যতই সৌন্দর্য বিস্তার করুক, আড়ালে তার এক দুর্বৃৃত্ত ও অসৎ মানসিকতার বিশাল স্তম্ভ প্রোথিত হয়ে আছে। এসব ‘মহৎপ্রাণ’ মানব কী চমৎকার পদ্ধতিতে কর ফাঁকি দেয়, অর্থপাচার করে। নিজ দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলতে পারেন নির্বিকারভাবে যারা, তারাই আবার দ-মু-ের হর্তাকর্তা। তবে কোন্ পথে কীভাবে এই পাচারপর্ব সম্পন্ন হয় তার হদিস বা তথ্য-উপাত্ত এখনও মেলেনি। কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা যে বিত্তবানদের মধ্যে বেশি, তা স্পষ্ট হলো এই কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর। অথচ এদের অনেকেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন জনগণের করের অর্থে।
নিজেরা কর ফাঁকি দিতে কেমন অভিনব পন্থা বেছে নেন তা আর গোপন থাকল না। কঠিন গোপনীয়তার আবরণ তাদের পড়েছে খসে। উন্মোচিত হয়ে গেছে ‘ভাল মানুষির’ মুখোশ। কার নাম নেই এই তালিকায়? বিস্ময় জাগবেই তালিকায় চোখ বুলালে। মনে হবে এও কি সম্ভব? নিষ্কলুষ সৎ মানবের আড়ালে যে কত কী থাকতে পারে তা তুলে ধরেছে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্স। রথী-মহারথীদের ‘পূত-পবিত্র’ অবয়ব দেখে বিশ্বাস জাগে না যে, তারাও জড়িত হতে পারেন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে। এটা ভাবাও অনেকের জন্য কষ্টকর এবং কষ্টকল্পিত। কারও কারও চোখ ‘ছানাবড়া’ হয়ে যেতেই পারে। বিশ্বের ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ছাড়াও উন্নয়নশীল, এমনকি অনুন্নত দেশের শিল্পপতি, রাজনীতিকরাও অবৈধ উপায়ে অর্থপাচারের মতো ঘৃণিত কাজে জড়িত। আর এই পাচারের নেপথ্যে কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাও অত্যধিক। তাই বলে কেউ এখনও তাদের প্রতি ‘ধিক’ উচ্চারণ করেনি। বিশ্ববাসীর ঘোর এখনও কাটেনি এমন দেশ ও জাতিবিরোধী অসম্ভব কর্মকা-ের বিষয়ে। আসলে মানুষ এখনও ভাবতে পারছে না এমন ঘৃণিত কাজের সঙ্গে এই ‘উঁচুমানবেরা’ জড়িত থাকতে পারেন।
অফশোর কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগকারীদের তালিকায় বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নাম দেখে পুরো জাতি হতবাক। পানামা পেপার্সে ১৪ জন ও প্যারাডাইস পেপার্সে ২১ জনের নাম দেখে বাংলাদেশের মানুষ হতচকিত হতেই পারে। সেই ১৯৫০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অফশোর কোম্পানিগুলো বিশ্বের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ গোপনে বিনিয়োগ করে আসছে। আর এই তথ্য ছিল দীর্ঘকাল ধরে লুক্কায়িত। সুবিধা এই যে, এই গোপন বিনিয়োগের ফলে বিনিয়োগকারীকে কখনও কর দিতে হয় না কিংবা সামান্য পরিমাণে কর দিতে হয়। আর এভাবে বিনিয়োগ করেই লাভবানা হন তারা। অর্থকড়ি নিয়ে এক নিশ্চিন্ত অবস্থায় তারা বেশ সুখপ্রদ অবস্থানে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু সত্য উন্মোচিত হবে বলে যে চিরন্তন বাক্য ভুবনজুড়ে স্থায়িত্ব পেয়েছে তারই আলোকে এখন দুশ্চিন্তা এসে ভর করেছে বুঝি। গত বছর পানামা পেপার্স কলঙ্ক কাহিনী প্রকাশিত হওয়ায় অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীসহ আরও অনেককে পদত্যাগ করতে হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন নিজ দেশে অনেকে।
বাস্তব সত্য এই যে, বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের কয়েকজন ‘খ্যাতনামা’ ব্যক্তিও এই অনৈতিক কাজে জড়িত। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদানের দায়িত্ব সরকারেরই। অর্থপাচার রোধে সরকার নানা ব্যবস্থা গ্রহণের পরও কীভাবে এসব অর্থপাচার হয়েছে, হচ্ছে তার হদিস বের করা জরুরী। সরকারই পারে এসব রোধে কার্যকর পথ অবলম্বন করতে। নিশ্চয়ই এই কাজ থেকে বিরত থাকবে না সরকার- এটাই জনগণের বিশ্বাস।
শীর্ষ সংবাদ: