ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

-তৌকীর আহমেদ

‘হালদা’ দর্শকের ছবি

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

‘হালদা’ দর্শকের ছবি

তৌকীর আহমেদ। শুধু অভিনেতা হিসেবে নয়, একজন দক্ষ নির্মাতা হিসেবেও তিনি মিডিয়ায় বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন। বড় পর্দার নির্মাতা হিসেবে তৌকীর আহমেদ এ পর্যন্ত ‘জয়যাত্রা’, ‘রূপকথার গল্প’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ও ‘অজ্ঞাতনামা’ নামে চারটি জনপ্রিয় ও ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। এর আগে ‘জয়যাত্রা’ ছবির নির্মাতা হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। তার নির্মিত সর্বশেষ ‘অজ্ঞাতনামা’ ছবিটি বিশ্বের বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হচ্ছে। আগামী ১ ডিসেম্বর তার পরিচালনায় পঞ্চম ছবি ‘হালদা’ মুক্তি পাবে। বর্তমানে এ ছবির প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি। ‘হালদা’ ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তৌকীর আহমেদ কথা বলেন আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন- রুহুল আমিন ভূঁইয়া আনন্দকণ্ঠ : বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে বলুন তৌকীর আহমেদ : আগামী ১ ডিসেম্বর মহাসমারোহ মুক্তি পেতে যাচ্ছে হালদা ছবিটি। বর্তমানে এ ছবির প্রচারণার নিয়ে ব্যস্ততা চলছে। অর্ধশতাধিক হলে ছবিটি মুক্তি পাবে। আনন্দকণ্ঠ: ট্রেলার গান প্রকাশের পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন? তৌকীর আহমেদ: ট্রেলার গান প্রকাশের পর প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। তারা তাদের ভাল লাগা মন্তব্য করছে। হালদা নিয়ে মানুষের মধ্যে অন্যরকম আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আনন্দকণ্ঠ: ছবিতে কোন বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন? তৌকীর আহমেদ: তিতাসের মতোই হালদা একটি নদীর নাম। সেই হালদা পাড়ের মানুষের জীবন আর সংগ্রামটাই তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। প্রকৃতি ও মোড়লদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কীভাবে টিকে আছে জেলে সম্প্রদায়। প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের দুঃখ, আনন্দ, বেদনা সবই দেখা যাবে এই ছবিতে। শুধু তাই নয়, বাংলার প্রায় হারাতে বসা গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যর ছোঁয়াও এ সিনেমার মাধ্যেমে দর্শক দেখতে পাবে। অতীতে এমন গল্প নিয়ে কোনও বাংলা সিনেমা তৈরি হয়নি। আনন্দকণ্ঠ: হালদা ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই তৌকীর আহমেদ: হালদা দর্শকের ছবি। ছবিতে মানুষের গল্প বলা হয়েছে। গল্পের সঙ্গে ভাবনাও আছে। এই ছবির মধ্যে গানও আছে, বিনোদনও আছে। আছে একটি নদী ও নারীর কাহিনীও। নদী ও নারীর মধ্যে একটা জায়গায় খুব মিল আছে। আমরা নারীকে নির্যাতন করি, আমরা নদীকেও নির্যাতন করি। নদী ও নারীকে নির্যাতন সইতে হয় আজন্ম। ‘হালদায়’ সেসব গল্পকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আনন্দকণ্ঠ: ছবির চরিত্রগুলো নিয়ে কিছু বলুন? তৌকীর আহমেদ: এ ছবিতে সবাই বেশ পরীক্ষিত অভিনেতা-অভিনেত্রী। মোশাররফ করিমকে এ ছবিতে যেভাবে দর্শক দেখবেন সেভাবে আগে কখানো দেখেননি। এখানেও একটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন দর্শক। এছাড়া জাহিদ হাসান, তিশা, বাবু, রুনা খান, শাহেদ আলী, মোমেনা চৌধুরীসহ প্রত্যেকে বেশ ভাল অভিনয় করেছেন। আমার মনে হয়, দর্শক তাদের অভিনয় পছন্দ করবেন। আনন্দকণ্ঠ: ‘হালদা’ ছবিটি নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী? তৌকীর আহমেদ: আমি ‘হালদা’ নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। দর্শক ছবিটিকে বেশ ভালভাবে গ্রহণ করবে বলে আশা করছি। আর ছবিতে দর্শকদের জন্য সুন্দর একটা বার্তাও থাকছে। ‘হালদা’ তো আসলে নদীর নাম। যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা নদী। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ‘হালদা’। যেটাকে না বুঝে আমরা নষ্ট করে ফেলছি। ছবিতে আসলে সচেতনতার একটা বার্তা থাকবে। আনন্দকণ্ঠ: হালদা ছবির শূটিং করার সময় কোন সমস্যা হয়েছে কি? তৌকীর আহমেদ: চট্টগ্রামের হালদা নদীর আশপাশেই হয়েছে এর শূটিং। এ ছবি শূটিং করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতায় পড়তে হয়েছিল ইউনিটকে। আমরা যেখানে শূটিং করেছি, এর আগে সেখানে কোন শূটিং হয়নি। তাই সকাল থেকেই লোকজন শূটিং দেখার জন্য ভিড় জমাত। তাই এর মধ্যে শূটিং শেষ করা খুব কষ্টের ছিল। এছাড়া লোকজনের ভিড় কন্ট্রোল করাটা সহজ ছিল না। এজন্য আমরা খুব ভোর বেলা শূটিং শুরু করতাম। কারণ তখন সবাই ঘুমিয়ে থাকত। শূটিং বিষয়টি একটি বড় সমস্যা। আমরা সব সময়ে বাস্তবতা কে পূর্ণ নির্মাণের চেষ্টা করি। পূর্ণ-নির্মাণ করতে গেলে অনেক আয়োজন করতে হয়। বিশেষ করে হালদার আয়োজনের বিষয় ছিল শত শত নৌকা বাইচ, বলি খেলা প্রতিটি দৃশ্য ধারণের মধ্যেই আয়োজনের বিষয় ছিল। কখন আবার বৃষ্টি, বৃষ্টির মধ্য দৃশ্য ধারন। সুতারাং ঘন মানুষের একটা চাপ থাকত তার জন্য আমাদের শূটিং একটু পিছিয়ে দিতে হয়েছে। যে কারণে অনেক সময় খুব ভোরে চলে যেতাম শূটিং করার জন্য ৪-৫ টার সময়। লোকজন একটা বড় সমস্যা ছিল আর আয়োজনটা বড় ব্যাপক থাকার কারণে খুব কষ্টসাথ্য ছিল। আর নদীগুলো জোয়ার ভাটার নদী। পানি নেমে গেলে তখন হাঁটু সমান কাদা। শূটিং মানেই একটা লড়াই। এটা হয়ত আমরা বন্দুক দিয়ে করছি না ক্যামরা দিয়ে করছি। এটা লড়াই এর মতোই একটি বিষয়। শূটিং মানেই যুদ্ধ। এভাবে রাত-দিন মিলে শূটিং শেষ করেছি। ইউনিটের সবাই বেশ পরিশ্রম করেছে। আনন্দকণ্ঠ: ছবিতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা সংলাপে ব্যবহৃত হয়েছে। অভিনেতাদের তা বলতে কি সমস্যা হয়নি? তৌকীর আহমেদ: হ্যাঁ! তা তো বটেই যেহেতু আমরা সহজ করে চট্টগ্রাম ভাষার ফ্লেভার রাখার চেষ্টা করেছি। আসল ভাষা বললে তো কেউ বুঝবে না এবং এটা বলাও সম্ভব না। চট্টগ্রাম ভাষার একটা ছোঁয়া রেখেছি। গাইড দেয়ার জন্য ওই এলাকার লোক ছিল শূটিং করার সময় এবং ডাবিং করার সময়ও। আনন্দকণ্ঠ: আমরা জানি হালদা কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে মিশেছে কিন্তু ট্রেলারে সমদ্র দেখানো হয়েছে। বিষয়টি একটু খুলে বলবেন কি? তৌকীর আহমেদ: সমদ্র দেখানো হয়েছে কেননা, ওখানে সমুদ্রর ঘটনা আছে। হালদায় এখন জীবিকা কমে গেছে। দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এই হালদা নদী। মা মাছেরা এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথিতে এখানে ডিম ছাড়ে। এই নদী ও নদীর গতি-প্রকৃতি, নদীর ক্ষয় ও নদী তীরবর্তী মানুষের জীবন প্রবাহ ও জটিলতা উঠে এসেছে গল্পে।’ আনন্দকণ্ঠ: চট্টগ্রাম ছাড়া ‘হালদা’র শূটিং অন্য কোথাও কি হয়েছে? তৌকীর আহমেদ: মূলত হালদা পাড়েই ছবির আউটডোর শূটিং হয়েছে। সেটা চট্টগ্রামের রাউজান এবং হাটহাজারীর বিভিন্ন লোকেশনে। আমি জানি যে ‘হালদা’ চট্টগ্রামের একটা নদী। ওখানে গিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়েছে। আনন্দকণ্ঠ: ছবিটি কি ইন্টারন্যাশনল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল দেখানো হবে? তৌকীর আহমেদ: হ্যাঁ! আমরা বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে পাঠাব। অনেক সময় হয় কি ফেস্টিভ্যালে ভিন্ন দেশের মানুষ থাকে। এ ছবির গল্পের সঙ্গে তারা কতটা মিলিত তার ওপর নির্ভর করে। সব ছবি থেকে আমরা ফেস্টিভ্যালে সমান সাড়া পাই না।
×