ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জোড়া গোল করে ফিরলেন বেনজামাও, দুই তারকার প্রশংসায় কোচ জিনেদিন জিদান

রেকর্ড গড়ে স্বরূপে সি আর সেভেন

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

রেকর্ড গড়ে স্বরূপে সি আর সেভেন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিদারুণ মন্দ সময় যাচ্ছিল রিয়াল মাদ্রিদের দুই সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও করিম বেনজামার। মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ম্যাচের আগে দু’জনের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সংবাদ মাধ্যগুলো! অনেকেই বলেন, এ জুটি একেবারের বেমানান! গোল করতেই পারেন না তারা!! ইত্যাদি ইত্যাদি। সমালোচনা মুখ বুজে সয়েছেন দু’জনই। হয়তো মাঠে জবাব দিবেন বলেই এই মনোব্রত। অবশেষে সেটাই করেছেন দু’জন। এ্যাপোয়েল নিকোশিয়ার বিরুদ্ধে দু’জনই খেলেছেন অসাধারণ ফুটবল। গোল করেছেন দু’টি করে। রোনাল্ডো তো দুই গোল করে অসাধারণ দু’টি রেকর্ডের মালিক হয়েছেন। স্প্যানিশ লা লিগায় বড্ড বেশি বাজে সময় পার করছেন রোনাল্ডো। আট ম্যাচে করেছেন মাত্র ১ গোল। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লীগে বরাবরের মতোই উজ্জ্বল পর্তুগীজ তাকরা। আগের ম্যাচগুলোতেও গোল করেছেন, পরশু রাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ্যাপোয়েলের বিরুদ্ধে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে লক্ষ্যভেদ করে এক বছরে সর্বোচ্চ ১৭ গোল করার কীর্তি গড়েছেন সি আর সেভেন। পাঁচ মিনিট পর আরেকবার প্রতিপক্ষের জাল কাঁপান তিনি। এর মধ্য দিয়ে রিয়ালের জার্সিতে ইউরোপিয়ান ম্যাচে গোলের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পর্তুগীজ সুপারস্টার। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এক বছরে সর্বোচ্চ ১৬ গোল করার কীর্তি ছিল রোনাল্ডোরই। এবারের জোড়া গোলে সংখ্যাটিকে ১৮তে উন্নীত করেছেন ফিফা সেরা তারকা। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের রোনাল্ডোর গোল ৯৮টি। অন্যদিকে উয়েফা সুপার কাপে করেন দুই গোল। সবমিলিয়ে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় রিয়ালের জার্সিতে রোনাল্ডোর গোলসংখ্যা ১০০টি। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এই নিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে গোল করেছেন রোনাল্ডো। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে গোল করতে পারলে বোরাক এলমাজের টানা ছয় ম্যাচে গোল করার কীর্তি স্পর্শ করতে পারবেন। রিয়ালের জার্সিতে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার শেষ ১০ ম্যাচের ৯টিতেই গোল করেছেন রোনাল্ডো। এই ১০ ম্যাচে তার পা থেকে আসে ১৮ গোল। ২০১৫ ও ২০১৭ সালে ১৬ গোল করা রোনাল্ডো ২০১৩ সালেও ছিলেন দারুণ ফর্মে। সেবার করেছিলেন ১৫ গোল। রোনাল্ডোর ধারে কাছে আছেন শুধু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি। বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ২০১২ ও ২০১৬ সালে ১৩ গোল করেছিলেন। অন্যদিকে ২০১২ ও ২০১৪ সালেও রোনাল্ডো সমানসংখ্যক (১৩) গোল করেন। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের এক আসরে সর্বোচ্চ ১৭ গোল করার রেকর্ডও রোনাল্ডোর দখলে। যা এবার টপকে গেলেন নিজেই। এ্যাপোয়েলের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে নিদারুণ চাপে ছিলেন বেনজামা। অভিযোগ ছিল, নিজ দেশের কোচ হওয়ায় জিদান তাকে বারবার ব্যর্থতার পরও সুযোগ দিচ্ছেন। এর পক্ষে নিন্দুকদের যুক্তিও ছিল। এই ম্যাচের আগে ফরাসী ফরোয়ার্ড ২৭৯ দিন ধরে গোল পাননি! বিষয়টা পুরোটা সত্য না হলেও আবার অনেকটাই সত্য। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে গোল ছিল না তার। চলতি মৌসুমে কি স্প্যানিশ লা লিগা কি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সব জায়গায়ই বাজে সময় পার করছিলেন বেনজামা। গত মৌসুমে শেষ ষোলোর ম্যাচে নেপোলির বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন তিনি। এরপর ইউরোপের কুলিন প্রতিযোগিতায় পরশুর ম্যাচের আগ পর্যন্ত আর গোল পাননি। ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখের পর ৯ মাসেরও বেশি সময় তথা ২৭৯ দিন গোল পাননি বেনজামা। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে রোনাল্ডোর গুরুত্বপূর্ণ গোলে অবদান রাখেন বেনজামা। তবে গোলমুখে বরাবরই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। বাজে পারফর্মেন্সের পাশাপাশি তার দুঃসময়ের সঙ্গী হয়েছে ইনজুরিও। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের এবারের মৌসুমের প্রথম চার ম্যাচের দুটিতে খেলেছেন। ইনজুরির কারণে এ্যাপোয়েল এবং বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিরুদ্ধে খেলতে পারেননি। অবশেষে সব সমালোচনা ছাপিয়ে জোড়া গোল করে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন ফরাসী এই তারকা। ম্যাচশেষে তাই দুই প্রিয় শিষ্যের প্রশংসা করতে ভুল করেননি রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান। ফরাসী গ্রেট বলেন, এই সন্ধ্যাটা আমাদের সকলের জন্য অসাধারণ ছিল। আমরা সঠিক পথেই আছি। ক্রমাগতই আমরা নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিচ্ছি। এটা সবসময় সহজ নয়। কিন্তু সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এটা সম্ভব হয়েছে। এই গোলগুলো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে রোনাল্ডো ও বেনজামার জন্য এটা দরকার ছিল। কারণ তারা গোলের জন্যই খেলে থাকে। জিদান আরও বলেন, আমরা জানি পরের রাউন্ডে প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন তারা সবাই ভাল। আমরা এমন একটি দলের বিপক্ষে মাঠে নামব যারা গ্রুপ সেরা। এ কারণেই তারা ভাল হতে বাধ্য।
×