ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর ৪ লেন মহসড়ক প্রকল্পে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা দিচ্ছে এডিবি

আরও একধাপ এগোল উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বপ্নের প্রকল্পের কাজ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

আরও একধাপ এগোল উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বপ্নের প্রকল্পের কাজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বপ্নের ‘এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার-লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের কাজ আরও একধাপ এগোল। একনেকে অনুমোদন পাওয়ার এক বছর পর প্রকল্পের বিপরীতে এডিবির সঙ্গে সই হয়েছে ঋণচুক্তি। প্রথম ধাপে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে)। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম এবং এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশ। এ সময় ইআরডি, এডিবি এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়কটি জাতীয় মহাসড়কের অংশ। এটি চারলেনে উন্নীত হলে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে যানবাহন চলাচল বাড়বে। এ ছাড়া এটি ব্যবহার করে পরবর্তীতে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত ও নেপাল এবং বুড়িমারী দিয়ে ভারত ও ভুটানের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। আঞ্চলিক আন্তঃযোগাযোগের অংশ হওয়ায় সড়কটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হবে। উন্নত দেশগুলোর মতোই আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে এ চার-লেনে। প্রকল্পের আওতায় এ সড়কের দু’পাশে ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহনের লেনও তৈরি করা হবে, যার ফলে এটি ছয়লেনে প্রশস্ত হবে। এর পাশাপাশি মহাসড়কে দুই হাজার ৬৩৫ মিটারের তিনটি ফ্লাইওভার, ৪১১ মিটারের একটি রেলওয়ে ওভারপাস, ৩২টি ব্রিজ, ১৬১টি কালভার্ট, ১১টি পথচারী ওভারপাস, ৩৯টি আন্ডারপাস এবং একটি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৮৮১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে এডিবি ঋণ দেবে ৯ হাজার ৩৩৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বাকি ২ হাজার ৫৪১ কোটি ২১ লাখ টাকা সরকারী তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে আগস্ট ২০২১ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বপ্ন বাস্তব হওয়ার পথ সুগম হলো। ঋণচুক্তি হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ দ্রুত শুরু করা যাবে। অনুষ্ঠানে ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, আমরা এখন অর্থছাড়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। চলতি বছর এডিবির ঋণ প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড়ের পরিমাণ আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি হবে। আমাদের ৬-৭টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এসব প্রকল্পের বিপরীতে অর্থছাড় ও প্রক্রিয়াধীন। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ছাড়কৃত বিদেশী সাহয্যের পরিমাণ প্রায় ১৫০০ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। আশা করছি বাজেটে ৭ বিলিয়ন ডলার বিদেশী সাহয্যের যে টার্গেট দেয়া হয়েছে, তা অর্জন করতে পারব। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশ বলেন, প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকার মানুষের জন্য বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। উন্নত সড়ক যোগাযোগ, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং প্রতিবেশী ভারত নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সংযোগ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের জীবনমানে সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এডিবির মাল্টি-ট্র্যান্স ফিন্যাসিং ফ্যাসিলিটিজ (এমএফএফ) বা স্তরভিত্তিক অর্থায়ন সুবিধার আওতায় রয়েছে সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)। এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ শীর্ষক প্রকল্পটি এর অংশ। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পায়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এডিবির অর্থায়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী সর্বমোট ১২০ কোটি মার্কিন ডলার এমএফএফ ঋণের প্রথম কিস্তির (ট্র্যান্স-১) জন্য মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল হতে ১৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার এবং এডিবি ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে। এডিবির দেয়া ওসিআর ঋণ ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে। সুদের হার হবে লাইবর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ও ম্যাচুরিটি প্রিমিয়াম শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া অব্যয়িত ঋণের ওপর কমিটমেন্ট চার্জ শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ। কনসেশনাল ঋণ ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে এবং প্রকল্পের মেয়াদে বার্ষিক সুদের হার ২ শতাংশ। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ এডিবির সদস্য হওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সহায়তা দিচ্ছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেয়া এডিবির ঋণ সহায়তার পরিমাণ প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে এডিবি প্রধানত বিদ্যুত, জ্বালানি, পরিবহন, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, কৃষি, পানি সম্পদ এবং সুশাসন সেক্টরকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
×