ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ সদস্য সিআইডিতে

তনুর পরিবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

তনুর পরিবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর পিতামাতাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। মামলার তদন্তের অগ্রগতির জন্য সিআইডি কর্মকর্তারা তনুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তনুর পরিবারের সদস্যরা সিআইডিকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। যা মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মামলাটি সহসাই আলোর মুখ দেখছে বলে সিআইডি সূত্রগুলো বলছে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও স্বল্প সময়ের মধ্যেই তনু হত্যাকা-ের রহস্যের জট খুলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তনুর পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে কুমিল্লা থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গত ২০ নবেম্বর কুমিল্লা সিআইডি অফিস থেকে তাদের পরিবারের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে তনুর মা আনোয়ারা বেগম, বাবা ইয়ার হোসেন, ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল ও মিনহাজ হোসেন এবং চাচাত বোন লাইজুকে নিয়ে ঢাকার মালিবাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে যেতে বলা হয়। তনুর মা আনোয়ারা বেগম সাংবাদিকদের জানান, এর আগে কুমিল্লায় তদন্তকারী সংস্থাগুলো তাদের অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। শুরুতেই হত্যাকা-ের সঙ্গে থাকার যাদের সম্ভবনা রয়েছে, তাদের নাম বলেছি। প্রতিবারই তারা বিভিন্ন সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে ওই নামগুলোই বলছেন। যাদের ধরতে বলা হয়েছে, তাদের গ্রেফতার করলেই সবকিছু খোলাসা হয়ে যাবে। পরিবারিক সূত্রে আরও জানা গেছে, সিআইডির চিঠি মোতাবেক বুধবার সকাল ১০টার দিকে তনুর বাবা-মা ও ভাইসহ ৫ জন ঢাকার সিআইডি কার্যালয়ে যান। সেখানে তাদের ঘটনার বিষয়ে পৃথক পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয় ও তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাতে তারা অপারগতা প্রকাশ করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ জানান, তনু হত্যার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত করতে সিআইডি কাজ করে যাচ্ছে। যদিও তিনি তনুর পরিবারের ঢাকায় যাওয়া এবং সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, তনু হত্যাকা-ের রহস্যের জট খুলতেই তার পরিবারের পাঁচ জনকে ডাকা হয়েছিল। তাদের কাছে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে চাওয়া হয়েছে। কারা কারা হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, সম্ভাব্য হত্যাকারীদের জড়িত থাকার সম্ভবনার পেছনে যৌক্তিক কারণগুলো কি কি, কেন তনুকে হত্যা করা হয়েছে, হত্যাকা-ের পেছনে বিশেষ কোন কারণ আছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা সেসব বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছে। সেইসব তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এসব তথ্যের সঙ্গে হত্যাকা-ের প্রকৃতপক্ষেই কোন যোগসূত্র আছে কিনা সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তনু হত্যাকা-ের বিষয়টি এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। হত্যাকা-ের প্রকৃত রহস্য জানতে আরও সময় লাগবে। নানা দিক থেকেই তনু হত্যাকা-ের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তনুর পরিবারের সদস্যদের আগের দেয়া তথ্য এবং এবারের দেয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের জবানবন্দী লিখিত ও অডিও এবং ভিডিও আকারে রেকর্ড করা হয়েছে। এসব তথ্যের সঙ্গে তদন্তে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে বুধবার রাজধানীতে সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তনু হত্যাকা-ের রহস্যের জট খুলতেই তার স্বজনদের ঢাকায় ডেকেছে সিআইডি। এটি তদন্তের অংশ। তদন্তেই হত্যাকা-ের সত্যি ঘটনাটাটি উদঘাটিত হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তনু হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটিত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তনু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ পর্যন্ত অন্তত অর্ধশতাধিক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রাণু পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। খুনীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেফতারের দাবি করে আসছে তনুর পরিবার ও সুধী সমাজ।
×