ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির ছাতার তলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী, ক্যাডার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

বিএনপির ছাতার তলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী, ক্যাডার

শংকর কুমার দে ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি জোটের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে জামায়াত-শিবির। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যেখানে যখনই জনসভা করবেন সেখানেই জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ১২ নবেম্বর রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জনসভা সফল করতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী যোগ দিয়েছিলেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের মাঠের শক্তি বৃদ্ধিতে জামায়াত-শিবিরের যেসব নেতাকর্মী, ক্যাডারের বিরুদ্ধে খুন, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ, বিজিবি সদস্যদের হত্যা, অস্ত্র লুট, পুলিশের ফাঁড়ি আক্রমণ, নাশকতার মতো গুরুতর অভিযোগের মামলা রয়েছে তারাও প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করেছে। এতে আগামীতে আবারও সহিংস নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘদিন আড়ালে-আবডালে থাকার পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটকে ক্ষমতায় আনতে জামায়াত-শিবিরের মহানগর, জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতা-র্কীরা আগে থেকেই মাঠে নেমে গোপনে ঘরোয়া মিটিং করে বেড়াচ্ছে। এসব গোপন মিটিংয়ের খবর পেয়ে ইতোমধ্যেই বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করে বিপুলসংখ্যক কর্মী-ক্যাডার গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেছেন, যেহেতু নির্বাচন কমিশনে জামায়াত-শিবিরকে নির্বাচনের অযোগ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে, সে কারণেই তাদের বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়ে জোটের শক্তি প্রদর্শন করানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া জামায়াত-শিবিরের কর্মী-ক্যাডারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে এই ধরনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গী সম্পৃক্ততায় মদদদানে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কারণে এতদিন অনেকটা আড়ালে আবডালে ছিল তারা। এখন আবার হঠাৎ করেই তাদের প্রকাশ্যে তৎপরতাকে অশনিসংকেত বলে আশঙ্কা গোয়েন্দা সংস্থার। কারণ বিগত ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে জামায়াত-শিবিরের সরকারবিরোধী সহিংস আন্দোলন ছিল দৃশ্যমান। ঝটিকা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তাদের নাশকতামূলক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচীতে তারা ছিল অগ্রভাগে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী জঙ্গীবিরোধী অভিযানে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী, ক্যাডাররা। এতদিন তাদের কোথাও তৎপরতা দেখা যায়নি, প্রকাশ্যে ছিল না রাজপথের কোন কর্মসূচী, ছিল না কোন ঝটিকা মিছিল। এখন আবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে এককভাবে প্রকাশ্যে তৎপরতা দেখা গেলেও এর পেছনে শক্তি, সাহস, অর্থ, জঙ্গী গোষ্ঠীর তৎপরতাসহ নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে জামায়াত-শিবির। এমনকি বিদেশী রাষ্ট্র বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সাহায্য সহযোগিত পাওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। একটাই উদ্দেশ্য, যেভাবেই হোক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকাকে হঠাতে হবে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, মামলা মোকদ্দমা, গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীদের দীর্ঘদিন ধরেই রাজপথে প্রকাশ্যে দেখা মেলেনি। এমনকি তাদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশী অভিযান চালিয়েও পায়নি। অথচ হঠাৎ করেই গত ১২ নবেম্বর রাজধানীতে বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত খালেদা জিয়ার জনসভায় বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী, ক্যাডাদের যোগদানের ঘটনায় নতুন কৌশল মনে করা হচ্ছে। এতদিন দলটি আত্মগোপনে থেকে ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল দলীয় কার্যক্রম। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দলটির পরিচিতি লাভ করেছে। ফাঁসি হয়েছে দলের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মীর কাশেম আলীর। সর্বশেষ জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা মীর কাসেমের ফাঁসির রায় কার্যকর করার সময় থেকেই অদৃশ্য হয়ে যায় জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। এমনকি ফাঁসির রায় কার্যকরের বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বান করা হলেও মাঠে দেখা যায়নি তাদের কোন তৎপরতা। কিন্তু গত ১২ নবেম্বর বিএনপি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত খালেদা জিয়ার জনসভায় অংশগ্রহণের পর থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী, ক্যাডারদের মধ্যে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে, যার কারণে তারা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে নানা ধরনের নির্দেশনা পাচ্ছে এবং পালন করে যাচ্ছে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত-শিবিরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী, ক্যাডার ঘাঁপটি মেরে ছিল। এখন আবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ছাতার তলে এসে জড়ো হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী, ক্যাডাররা। এমনকি জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যদেরও বিএনপির অদৃশ্য মহল থেকে মদদ দেয়া হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের একটা বিরাট অংশ জঙ্গীবাদ বা উগ্রপন্থায় জড়িয়েছে। একইভাবে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতেও জায়গা করে নিয়েছে একাংশ। জামায়াত-শিবিরের একাংশ বিএনপির সঙ্গে মিশে গিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার নামে মাঠে নেমে সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে পারে, যা বিগত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। কারণ এর আগে সরকারবিরোধী সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকাষে-র মাধ্যমে যেসব রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করা হয়েছে তার অগ্রভাগে ছিল জামায়াত-শিবির। এখন আবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই জামায়াত ও শিবিরের তালা ঝোলানো কার্যালয়গুলো খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। জামায়াতের ছাত্রশিবির ও ছাত্রী সংস্থা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ও চাষী কল্যাণ সমিতি নামের সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনী প্রস্তুতি সামনে রেখেই জামায়াত-শিবিরের মূলত এই ধরনের তৎপরতা ও প্রস্তুতি রয়েছে, যা পরবর্তীতে সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে নির্বাচন ভ-ুল করার উদ্দেশে নাশকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার আশঙ্কা।
×