ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাস্টবিনে পলিথিনে মোড়া সেই শিশু রুহির ঠাঁই হলো ‘ছোটমণি নিবাসে’

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

ডাস্টবিনে পলিথিনে মোড়া সেই শিশু রুহির ঠাঁই হলো ‘ছোটমণি নিবাসে’

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ জন্মের পর মায়ের মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। শপিংব্যাগের মধ্যে রাস্তায় পড়ে ছিল ২ দিনের নবজাতক। মায়ের পেট থেকে পড়েই কী নির্মমতা! শিশুটির শরীরের সঙ্গে মায়ের নাড়ি লেগেই ছিল। উদ্ধারের পর টানা দেড় মাস তার আশ্রয় মেলে ঢামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের স্পেশাল কেয়ার বেবি ইউনিটে। ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের আদরে এখন পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত শিশুটি। চিকিৎসকেরা তার নাম রেখেছেন রুহি। সুস্থ হতেই রুহির ঠাঁই মিলল নতুন ঠিকানায়। তার এবারের ঠিকানা রাজধানীর আজিমপুরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘ছোটমণি নিবাস’। ভবিষ্যতেও হয়তবা তার ঠিকানা আবার পরিবর্তিত হবে। হয়তবা যাবে সরকারের শিশু পরিবারে অথবা আদালতের মাধ্যমে কোন বাবা-মায়ের কোলে। ২ অক্টোবর সকালে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় পলিথিনের শপিংব্যাগের ভেতর পাওয়া যায় শিশুটিকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, ওই দিন সকালে শিশুটিকে খিলগাঁওয়ে সি ব্লকের একটি বাসার সামনে নর্দমার পাশে শপিংব্যাগে রেখে যান কালো বোরকা পরা এক নারী। সে দৃশ্য আশপাশের অনেকেই দেখেন। বোমা বা ক্ষতিকর কোন বস্তু ভেবে প্রথমে ভয়ে কেউ কাছে যায়নি। পরে শপিংব্যাগ থেকে কান্নার শব্দ শুনে শাহনূর বেগম ওরফে খুকি নামের স্থানীয় নারী শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। ঘটনা দেখে অনেকে ভিড় জমায়। তারা পুলিশে খবর দেয়। নবজাতকের জন্ম নেয়ার পরপরই তাকে ব্যাগে ভরে রাস্তায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়। তবে ওর শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না বলে জানায় পুলিশ। ২ দিনের নবজাতককে সুস্থ করে তুলতে ঢামেক হাসপাতালের অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জীর অবদান অপরিসীম। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে জন্মের পরপরই মেয়েটিকে ফেলে দেয়া হয়। যখন হাসপাতালে নেয়া হয়, তখন ওর শরীরে জন্ডিস ছিল। আমরা যখন শিশুটিকে পাই তখন ওর ওজন ছিল ১ কেজি ৭০০ গ্রাম। আর এখন ওর ্ওজন হয়েছে ২ কেজি ৫০০ গ্রাম। আগের চেয়ে অনেক সুস্থ সে। ঠিকমত খাচ্ছে। বিগত দেড় মাসে কমপক্ষে ১০ দম্পতি রুহিকে নেয়ার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাদের সবাইকে আদালতে আবেদনপত্র জমা দিতে বলেছি। তবে হয়তবা আদালত এখনও ঠিক পরিবারকে খুঁজে পায়নি। এজন্য হয়ত ওকে ছোটমণি নিবাসে নেয়া হয়েছে। আমি ওর সুস্থতা কামনা করি।’ ছোটমণি নিবাসে শিশু রুহি অন্যান্য শিশুর সঙ্গে ভাল থাকবে বলে জানালেন সেখানকার উপতত্ত্বাবধায়ক জুবলি বেগম রানু। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে ছোটমণি নিবাসের শিশু সংখ্যা ১৮। রুহি সবচেয়ে ছোট এখানকার। সবাই ওকে দেখে খুশি হয়েছে। এখানে রুহি অনেক আদরে বড় হবে।’ এর আগে ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পুরাতন বিমানবন্দরের কাছে একটি জঙ্গলে কুকুরে কামড়ানো এক নবজাতককে দুই নারী উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। সুস্থ করে তোলা ওই শিশুর পরবর্তীতে নাম রাখা হয় ফাইজা।
×