ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামের ৫১ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পান

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

গ্রামের ৫১ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের গ্রামের ৫১ শতাংশের বেশি লোক বিদ্যুত সুবিধা পান। আর শহরের ৮৪ শতাংশ মানুষ এই সুবিধা পান। আর যারা বিদ্যুত সুবিধা পান না, তাদের ৯০ শতাংশই গ্রামের বাসিন্দা। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ অঞ্চলে বিদ্যুত পৌঁছেছে, যা এশিয়ার নয়টি স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মধ্যে সবচেয়ে কম। ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স অন ট্রেড এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) ‘এলডিসি ২০১৭’-তে এই কথা বলা হয়েছে। বুধবার একযোগে সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। আঙ্কটাডের পক্ষে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংস্থাটি বলছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের বিকল্প নেই। সিপিডি মনে করে, গত ১০ বছরে বিদ্যুতখাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়লেও অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় এখনও অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। যেখানে কম্বোডিয়ার মাত্র ৬ শতাংশ ও ভুটানের ১২ শতাংশ ব্যবসায়ী শিল্পে বিদ্যুত সমস্যা পান, সেখানে বাংলাদেশে এ সমস্যায় ভুগছেন ৫৩ শতাংশ ব্যবসায়ী। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ডাঃ ফাহমিদা খাতুন বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুত ও জ্বালানি সরবরাহ বাড়ছে। তবে জনসংখ্যা বর্ধমান থাকায় এর সুফল মিলছে না। এলডিসির মধ্যে নেপাল ও ভুটান বিদ্যুত-জ্বালানি ব্যবহারে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হতে হলে বাংলাদেশের বিদ্যুত ও জ্বালানিখাতে যথেষ্ট দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের দরকার হবে। শিল্প ও সেবাখাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। সুশাসনের সঙ্গে বিদ্যুতও সুলভমূল্যে সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশকে শুধু সরকারী বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বেসরকারীখাত ও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুত নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশকে প্রতিবছর ২০-৩০ শতাংশ হারে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দিতে হবে। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশের গৃহস্থালি কাজেই ৬১ শতাংশ বিদ্যুত ব্যবহƒত হচ্ছে। শিল্পে ব্যবহার হয় মাত্র ২১ শতাংশ। এসডিজি বাস্তবায়ন ও উন্নত দেশে উন্নীত হতে হলে শিল্প ও সেবাখাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের মানুষই মূলত বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছে। তবুও এটি বিশ্বের গড় বিদ্যুত ব্যবহারের তুলনায় কম। পল্লী এলাকার মাত্র অর্ধেক মানুষের বিদ্যুত সুবিধা রয়েছে। সিপিডি’র সম্মানীত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুতখাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। তাতে বিদ্যুতের প্রাপ্যতা বেড়েছে। তবুও এখাতে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বাংলাদেশে ২০৪১ সালনাগাদ ৫৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে, এই পরিমাণ বিদ্যুত ইন্দোনেশিয়া এখনই উৎপাদন করছে। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ বা ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হতে হলে বিদ্যুত ও জ্বালানিখাত বড় ভূমিকা রাখবে। এসডিজির তিনটি শর্তের মধ্যে রয়েছে, অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা। সুশাসনের সঙ্গে সুলভমূল্যে বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করা ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনের মাধ্যমে এই তিনটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন সম্ভব। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে শিল্প ও সেবাখাতের বিকাশ ঘটাতে হবে। এজন্য সবার জন্য বিদ্যুত-জ্বালানি সুলভমূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৪ সালের তথ্যের ওপর নির্ভর করে আঙ্কটাডের তৈরি করা প্রতিবেদন বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুত পরিস্থিতির সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ- এমন প্রশ্নে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অনেকগুলো দেশ নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। সব দেশেরই হালনাগাদ তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই ২০১৪ সালের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা পুরোপুরি তুলে ধরতে পারেনি। তবে প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও প্রযোজ্য। কারণ, ২০৩০ সাল সামনে রেখে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এলডিসিগুলোকে ২০৩০ সাল নাগাদ বিদ্যুতখাতে ১২ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশকে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে, এখানে তার উল্লেখ নেই। সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিল যে, বাংলাদেশের অবকাঠামোখাতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ দরকার। এর মধ্যে শুধু বিদ্যুতখাতে ১১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। এলডিসিগুলোর মাথাপিছু জ্বালানি তেল ব্যবহারের গড় পরিমাণ ৩৬৪ কেজি। বাংলাদেশে এ হার মাত্র ২২২ কেজি। এ থেকেই স্পষ্ট যে বাংলাদেশ এখনও বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যবহারে অন্যান্য এলডিসির তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। ভুটান, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন এলডিসি বিদ্যুত ব্যবহার করে তাদের উৎপাদনশীলতা যে হারে বাড়িয়েছে, বাংলাদেশ তা এখনও পারেনি।
×