ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুগাবের পতনে আশার আলো দেখছে জনতা

জিম্বাবুইয়েতে নতুন যুগের সূচনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

জিম্বাবুইয়েতে নতুন যুগের সূচনা

রবার্ট মুগাবে ৩৭ বছর ক্ষমতায় থাকার পর জিম্বাবুইয়ের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার এই পদত্যাগের ফলে দেশটিতে নতুন যুগের সূচনা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি কঠিন হাতে দেশটি শাসন করেন। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শেষের দিকে এসে তিনি জনপ্রিয়তা হারান। শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্ট তাকে ইমপিচ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। গার্ডিয়ান। মুগাবের পদত্যাগের আগে দেশটিতে টানা আট দিন রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলে। চলতি মাসের শুরুর দিকে মুগাবে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে বরখাস্ত করার পরই রাজনৈতিক সঙ্কট দানা বাঁধতে থাকে। নানগাগওয়াকে একসময় ৯৩ বছর বয়সী মুগাবের উত্তরসূরি মনে করা হতো। স্ত্রী গ্রেসকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ সুগম করে দিতেই মুগাবে নানগাগওয়াকে পদচ্যুত করেন বলে অনেকে মনে করেন। এ ঘটনা দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন করে। যে কারণে সেনা সদস্যরা সাঁজোয়া বহর নিয়ে রাস্তায় নেমে এসে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং মুগাবেকে গৃহবন্দী করে। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের পরও মুগাবে অনেকটা অনড় ছিলেন। তিনি শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু দল এবং দেশের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ যে ক্রমেই শিথিল হয়ে এসেছিল সেটি তিনি উপলব্ধি করতে পারেননি। তিনি সবসময় লড়াই চালিয়ে যাওয়া পছন্দ করেছেন। দীর্ঘ ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি বহুবার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য করেছেন। শেষের দিকে যখন সরকারের নিয়ন্ত্রণ কার্যত সেনাবাহিনীর হাতে ছিল তখনও মুগাবে এমন অনমনীয় মনোভাবের পরিচয় দেন। রবিবার তিনি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে শেষ ভাষণ দেন। আশা করা হয়েছিল তিনি হয়তো এতে তার পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন। কিন্তু সেটি না করে তিনি ওই ভাষণে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ কারণে পার্লামেন্টের স্পীকার জ্যাকব মুডেন্ডা বুধবার যখন জানান যে মুগাবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তখন পুরো পার্লামেন্ট উল্লাসে ফেটে পড়ে। রাজধানী হারারেসহ বড় বড় শহরগুলোতে লোকজন রাস্তায় নেমে এসে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। হারারের উল্লসিত জনতার সঙ্গে পাঁচ মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন এক নারী। তিনি বলছিলেন, ‘আমি আমরা নিজের জন্য, শিশুর জন্য এবং পুরো দেশের জন্য আনন্দ বোধ করছি। আমার মেয়ে একটি ভাল জিম্বাবুইয়েতে বড় হবে।’ আরেকজন বলছিলেন, ‘এই দিনটির জন্য আমি এতকাল অপেক্ষা করেছি।’ মুগাবের পদত্যাগে সেনবাহিনীর প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। পদত্যাগের আগে দায়মুক্তির বিষয়ে মুগাবের সঙ্গে সেনাবাহিনীর একটি সমঝোতা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির কোন্দলের জের ধরেই শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে। মূলত নানগাগওয়াকে সরিয়ে দিয়েই তিনি নিজের বিদায়ের পথ প্রশস্ত করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নানগাগওয়া দলের একজন বলিষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাকে অপসারণের পর দল মুগাবের বিপক্ষে চলে যায়। প্রথমে তাকে দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয় এবং পরে তাকে ইমপিচ করার উদ্যোগ নেয়। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র হিসেবে শুরু হলেও তা শেষ পর্যন্ত জনপ্রিয় অভ্যুত্থানের রূপ নেয়। মুগাবের শাসন পদ্ধতি ছিল স্বৈরতান্ত্রিক। ১ কোটি ৬০ লাখ লোক অধ্যুষিত দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোন উদ্যোগ নেননি তিনি। দেশটিতে বেকারত্বের হার সম্প্রতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরকারের জনপ্রিয়তা অনেক কমে গিয়েছিল।
×