ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতা থাকলে টেনে হিঁচড়ে সরকারকে নামান-বিএনপির প্রতি তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

ক্ষমতা থাকলে টেনে হিঁচড়ে সরকারকে নামান-বিএনপির প্রতি তোফায়েল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগে ৯০ দিনের মধ্যে যে কোন দিন নির্বাচন হবে। আর বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। ক্ষমতা কিংবা শক্তি থাকলে নির্বাচন বানচাল করে দেখান। ‘সমঝোতায় না এলে সরকারকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে’ মর্মে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের দেয়া এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতা থাকলে আপনারা সরকারকে টেনেহিঁচড়ে নামান। আপনাদের কি সেই ক্ষমতা আছে? এত সহজ? এ সমস্ত অসাংবিধানিক বক্তৃতা দেয়া বা অঘটনমূলক বক্তৃতা মানুষ পছন্দ করে না। আমাকেও মানুষ চিনে, মওদুদ আহমেদসহ তাদেরও মানুষ চিনে। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে ‘৭ মার্চের মহাকাব্য-বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় সব দেশে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনকালীন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে। বাংলাদেশে তাই হবে। মওদুদ আহমেদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, জামায়াতকে নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে ২০০১ সালের মতো দেশে আবার ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সুযোগ দেশের মানুষ মওদুদ সাহেবদের আর দেবে না। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল এবং ২০১৫ সালে সরকার পতনের জন্য আন্দোলনের নামে কোন কিছু করতে বাদ রাখেননি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আদালতে হাজিরা দিয়ে ঘরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে, ক্ষমতাসীন সরকার দৈনন্দিন কাজ করবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আপনার (মওদুদ) যদি শক্তি থাকে আপনি চেষ্টা করতে পারেন। এত সহজ না! এটা ঊনসত্তর না, আইয়ুবের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করেছি। আপনারা তো চেষ্টা করেছেন। মনে রাখবেন বাংলার মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছি। আপনারা জামায়াতকে নিয়ে ক্ষমতায় যাবেন, আবার ধ্বংসযজ্ঞ চালাবেন; এটা বাংলাদেশে আর কোন দিন হবে না। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ধ্বংস করতে পাকিস্তানের প্রথম চেষ্টার কথা তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, জিয়াউর রহমানের সময়ও এই ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। সেই সময় ৭ মার্চ বা ১৫ আগস্ট এই ভাষণ বাজালে মাইক কেড়ে নেয়া হতো। এরপর খালেদা জিয়া এলেন, ১৯৯৩ সালে সংসদে বলেছিলাম, এই ভাষণ টেলিভিশনে প্রচার করা হোক; আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। আজকে এই ভাষণ আন্তর্জাতিক বিশ্বে শ্রেষ্ঠ ভাষণ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। বর্তমান মেয়াদে তিনি দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মিয়ানমারকে একদিন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতার জন্যই রোহিঙ্গা সঙ্কট আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আর সেজন্যই বিশ্ববাসী বঙ্গবন্ধু কন্যাকে মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধিতে ভূষিত করেছে। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহসভাপতি ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নূরে আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহসভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, ফারজানা শাহনাজ মুনির ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবিশ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরের মহাসচিব হারুন হাবিব। সশস্ত্র বাহিনী দিবসকে অসম্মান করেছে বিএনপি- ড. হাছান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের না যাওয়ার সমালোচনা করে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অনন্য অবদানকে স্মরণ করে দিবসটি পালন করা হয়। সেখানে খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা সে অনুষ্ঠানে না গিয়ে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের চরম অসম্মান প্রদর্শন করেছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অনন্য অবদানকেও অবজ্ঞা করেছেন, অশ্রদ্ধা করেছেন। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : বাঙালীর অহঙ্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, বিএনপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চায়, অথচ তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশ-আনসারের। বিএনপি দেশরক্ষা বাহিনীকে দিয়ে পুলিশ-আনসারের কাজ করাতে চায়। আর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে তাদের অনুপস্থিতি প্রমাণ করে যে তারা এ বাহিনীকে সম্মান করে না। এ অসম্মান কোন ব্যক্তিবিশেষের প্রতি নয়, পুরো বাহিনীর প্রতি। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি লায়ন চিত্তরঞ্জন দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস এমপি, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা সুভাষ সিংহ রায়, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজš§ লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান দুর্জয় ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা।
×